Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

ভারত ছাড়াে আন্দোলনের সামাজিক শ্রেণির ভূমিকা নির্ণয় করাে।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনের সামাজিক শ্রেণির ভূমিকা

১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ভারত ছাড়াে আন্দোলন এক ব্যাপক গণবিদ্রোহ রূপে দেখা দেয়। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই আন্দোলনে যােগদান করে গান্ধিজির ঘােষণা সারে হিন্দুস্থান মে জ্বালামুখী ফুটেগী’ বর্ণে বর্ণে সত্য করে তােলে।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনে কৃষক শ্রেণির ভূমিকা

বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মাদ্রাজ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কেরালা প্রভৃতি অঞ্চলের সর্বস্তরের কৃষকরা স্বতস্ফূর্তভাবে ‘ভারত ছাড়াে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক, ক্ষেত মজুর, ধনী কৃষক ও জমিদাররা হাতে হাত মিলিয়ে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। বােম্বাই-এর খান্দেশ ও সাতারা এবং গুজরাটের। ব্রোচ জেলায় ব্যাপক কৃষক আন্দোলন দেখা দেয়। বহু স্থানে খাজনা বন্ধ আন্দোলন শুরু হয়। যে সব জমিদার ইংরেজ পক্ষ অবলম্বন করেছিল কৃষকরা কেবলমাত্র তাদের উপরই আক্রমণ চালায় ও খাজনা বন্ধ করে। অধ্যাপক স্টিফেন হেনিংহ্যাম বলেন যে, জাতীয় কংগ্রেসের অন্তর্ভূক্ত উচ্চবর্ণ এবং উচ্চবর্ণের ধনী জমিদার ও কৃষকরা প্রথমে এই আন্দোলন গড়ে তােলেন। পরে নিম্নবর্গ ও বর্ণের দরিদ্র কৃষকরা আন্দোলনে যােগদান করে।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকা

শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কমিউনিস্টরা এই আন্দোলনের বিরােধিতা করায় যেসব শিল্প শহরে তাদের প্রভাব ছিল সেখানে শ্রমিকরা আন্দোলন থেকে দূরে সরে ছিল। বিহারের জামশেদপুরে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক ১৩ দিন ধরে ধর্মঘট চালায়। ৯ই আগস্ট নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আমেদাবাদের কারখানাগুলি প্রায় সাড়ে তিন মাস বন্ধ ছিল। বােম্বাই-এর শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখে এক সপ্তাহেরও বেশী। আহম্মদনগর ও পুণের শ্রমিকরা বেশ কয়েকমাস ধরে সক্রিয় ছিল। বাংলার ধর্মঘটের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল হাওড়া, হুগলি ও মেটিয়াবুরুজের বস্ত্র শিল্প এবং কলকাতা-হাওড়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানাগুলির বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের ধর্মঘট।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা

নারী সমাজ প্রবল উৎসাহের সঙ্গে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। মেয়েদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেন সুচেতা কৃপালিনী ও অরুণা আসফ আলি। এসময় ঊষা মেহতা গােপনে কংগ্রেসের বেতার কেন্দ্র চালাতেন। মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার’ এ মহিলারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মহিলা স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে গঠিত ‘ভগিনী সেনা’এর প্রমাণ। মেদিনীপুরের ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা, আসামের ১৩ বছরের কিশােরী কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভােগেশ্বরী কুকোননী প্রমুখ বীরাঙ্গনা নারীর নাম আগস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

ভারত ছাড়াে আন্দোলনে ছাত্র সমাজের শ্রেণির ভূমিকা

ছাত্র-যুবরা ছিল ভারত ছাড়াে আন্দোলনের প্রাণশক্তি। আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিল এই ছাত্র-যুবরা। তারাই গ্রামে-গঞ্জে ‘ভারত ছাড়াে’ আন্দোলনের। বার্তা ছড়িয়ে দেয়। বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই আন্দোলনে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। বাংলার ছাত্রদের ভূমিকাও ছিল গৌরবজনক। তাই অরুণচন্দ্র ভূঁইয়া এই আন্দোলনকে ‘A movement of the youth’ বলে অভিহিত করেছেন।

পরিশেষে বলা যায় যে ভারত ছাড়াে আন্দোলনের মুসলিম লীগ বিরােধিতা করে এবং কমিউনিস্টরা এই আন্দোলনে যােগদান করেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুসলিম লীগের কর্মী ও কমিউনিস্টদের অনেকেই ভারত ছাড়াে আন্দোলনের বিদ্রোহীদের নানাভাবে সাহায্য করে।

Leave a reply