Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূমিকা আলোচনা করো।

ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূমিকা

১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার শাসনকর্তা হয়ে বাংলায় আসেন। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে তিনি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি বাংলায় শাসনকর্তা হয়ে এসে প্রথমেই দ্বৈত শাসনব্যবস্থা তুলে দেন। মোগল সম্রাট শাহ আলম দিনে-দিনে মারাঠাদের অধীন হয়ে পড়ছিলেন। তাই ইংরেজরা তাঁর বার্ষিক বৃত্তি বন্ধ করে দেন এবং তার কাছ থেকে এলাহাবাদ ও কোরা জেলা দুটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোধ্যার নবাবকে ফিরিয়ে দেন। নবাব সুজা-উদ্‌দৌলা অযোধ্যায় একদল ব্রিটিশ সৈন্য রাখতে ও তাদের ব্যয়ভার বহন করতে সম্মত হন। হেস্টিংস রোহিলাখণ্ড অধিকার করবার জন্য। সুজা-উদদৌলাকে একদল সৈন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিংসের রোহিলা নীতির সমালোচনা করা হয়। সুজা-উদদৌলা এই রোহিলাখণ্ড জয় করলে ওই অঞ্চলে মারাঠাদের প্রাধান্য স্থাপনের সম্ভাবনা দূর হয়েছিল, আবার অযোধ্যায় ইংরেজদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। সুতরাং হেস্টিংসের রোহিলা নীতির পিছনে তার রাজনৈতিক সাফল্য অপরিসীম।

হায়দার আলির উত্থান

ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় ইংরেজদের দুই প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল মারাঠা ও মহিশূর রাজ্য। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে মারাঠাদের শোচনীয় পরাজয়ে তাদের মনোবল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পেশোয়া প্রথম মাধবরাও ও মহাদজি সিন্ধিয়া উত্তর ভারতের কিছুটা অংশ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। মারাঠাদের দুর্বলতার সুযোগে মহিশূর রাজ্যে হায়দার আলির উত্থান ও শক্তিবৃদ্ধি সহজ হয়।

সলসেট লাভ

মারাঠাদের গৃহবিবাদের সুযোগ গ্রহণ করে হেস্টিংস মারাঠাদের এই বিবাদকে আরও উস্কে দেন। পেশোয়াপদে নিজের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করে ওই পদলাভ করতে রঘুনাথ রাও ইংরেজদের সাহায্যপ্রার্থী হয়। মারাঠাদের গৃহবিবাদে ইংরেজরা সলসেট লাভ করে এবং হেস্টিংসের ঐকান্তিক চেষ্টায় তাদের অন্তর্কলহ বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী ‘পদক্ষেপে মারাঠা রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।

হায়দারের বোধোদয়

হায়দার আলি ইংরেজদের কূটচালের কথা বুঝতে না পেরে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। উভয় শক্তি অপর কোনো শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে একে অপরকে সাহায্য করবে। মারাঠারা মহিশূর রাজ্য আক্রমণ করলে হায়দার ইংরেজদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে ব্যর্থ হলে ইংরেজদের প্রতি তাঁর মোহভঙ্গ হয়। এর ফলে দক্ষিণ ভারত থেকে ইংরেজ শক্তি বিনাশ করতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন।

দ্বিতীয় ইঙ্গ মহিশূর যুদ্ধের অবসান

এই সময় আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত ছিল। মহিশুর রাজ্যের অধীন ফরাসি বাণিজ্যকুঠি মাহে ইংরেজরা অধিকার করে। হায়দার ইংরেজদের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে মারাঠা ও নিজামের সঙ্গে জোট বেঁধে ইংরেজদের বিরুদ্ধ যুদ্ধ ঘোষণা করে, যা দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহিশূর যুদ্ধ নামে খ্যাত। মাদ্রাজ সরকারের ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তে এই যুদ্ধের সূচনা হয়।

তবু হেস্টিংস এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন এবং উপলব্ধি করেন যে দক্ষিণ ভারতে ইংরেজ শক্তি দুর্বল হলে সারা ভারতবর্ষে ইংরেজদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তিনি কৌশলে প্রথমে নিজাম ও পরে মারাঠাদের জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করে মহিশূরকে মিত্রহীন করে ফেলতে সক্ষম হন, যা পরবর্তী কালে মহীশূর রাজ্যের পতন ও ইংরেজদের শক্তিবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ম্যাঙ্গালোরের সন্ধির দ্বারা দ্বিতীয় ঈঙ্গ-মহিশূর যুদ্ধের অবসান হয়। সন্ধির শর্তানুযায়ী দুই শক্তি তাদের বিজিত রাজ্য প্রত্যপূর্ণ করে।

মূল্যায়ন

ওয়ারেন হেস্টিংস নিজে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যসম্প্রসারণে পরিসংখ্যানের নিরিখে বিশাল কিছু করেছেন বলে দাবি করতে পারতেন না সত্য। তবু তাঁর সুকৌশলী সুদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনা ভারতবর্ষের রাজনীতির পটপরিবর্তনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। তাঁর প্রবর্তিত চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে পরবর্তী ব্রিটিশ শাসকগণ ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

Leave a reply