Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

লােককথার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য লেখাে | লোককথার গুরুত্ব আলােচনা করাে।

লােককথার সংজ্ঞা

লােককথা হল একধরনের কাল্পনিক গল্পকথা যেগুলি অতীত বা ঐতিহাসিক ঘটনার অনুকরণে গড়ে ওঠে। লােককথায় ঐতিহ্যবাহী লৌকিক সাহিত্যের প্রতিফলন ঘটে যার দ্বারা প্রাকৃতিক বা আধ্যাত্মিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা করা হয়। অতীত থেকেই লােকের মুখে বংশপরম্পরায় লােককথাগুলি প্রচার হয়ে আসছে। অনুমান করা হয় সভ্যতার ইতিহাসে গােষ্ঠী জীবন শুরুর পরই লােকসমাজে লােককথার সৃষ্টি হয়েছে। কার্ল টমলিনসন ও ক্যারল লিব্রাউন-এর মতে, মানুষের জীবন ও কল্পনার সংমিশ্রণে যেসব গল্পগাথা গড়ে উঠেছে সেগুলি হল লােককথা।

লােককথার বৈশিষ্ট্য

[1] লােক-ঐতিহ্য: লােককথার মূল বৈশিষ্ট্য হল এর ঐতিহ্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লােক-ঐতিহ্যগুলি এতে স্থান পায়। ‘আরব্য রজনী’, ‘ঈশপের নীতি কথা’, ‘কথাসরিৎ সাগর’, ‘বৃহৎকথামঞ্জুরী’, ‘পঞ্চতন্ত্র, বেতাল পঞ্চবিংশতি, ‘বক্রিশ সিংহাসন’, ‘লুসিয়াস অ্যাপুলেইয়াসের লােককথা সংগ্রহ’, ‘জা দ্য ফঁতেন-এর নীতিকথা’ প্রভৃতি লােককথার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

[2] ঘটনার প্রাধান্য: লােককথাগুলিতে ঘটনা বিন্যাসে দুধরনের প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়, একটি হল ঘটনার সূচনা, সমস্যা, চরম মুহূর্ত, সংকট থেকে উত্তরণ এবং সবশেষে মিলনান্তক পরিণতি। আর দ্বিতীয়টি হল কাহিনির মূল চরিত্রের গৃহত্যাগ, বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন এবং সবশেষে নিজের এলাকায় প্রত্যাবর্তন। লােককথাগুলিতে এই দুই ধরনের বিষয়বস্তুর মেলবন্ধন ঘটে থাকে।

[3] মানুষের আলােচনা: সাধারণ মানুষের প্রতিদিনকার জীবনকাহিনিই লােককথায় আলােচিত হয়। মানবিক কর্মকাণ্ড ঘিরেই লােককথার অগ্রগতি ঘটে। অনেক সময় রূপকধর্মিতার আশ্রয় নেওয়া হলেও তার আড়ালে থাকে মানব চরিত্র।

[4] শুতিভিত্তিক: লােককথা হল মৌখিক ঐতিহ্যভিত্তিক সাহিত্য বা শুতি সাহিত্য। নিরক্ষর ও শিক্ষিত উভয় শ্রেণির মানুষের মুখে মুখে লােককথাগুলি এক পুরুষ থেকে পরের পুরুষ পর্যন্ত প্রচারিত হয়। এক অঞ্চলের লােককথা লােকমুখে অন্য অঞ্চলে প্রচারিত হয়।

[5] অতি কাল্পনিক: লােককথাগুলিতে যে রূপকথা, পরিকথা, পশুকথা, পুরাণ বা কিংবদন্তি স্থান পায় সেসবের চরিত্রগুলি বাস্তবধর্মী নয়, কল্পনাধর্মী। লােককথার রচয়িতাগণ কল্পনার জগৎ থেকে বিভিন্ন চরিত্র তুলে ধরেন। যেমন—ডাইনি, দৈত্য, পরি, ড্রাগন, ভূতপ্রেত প্রভৃতি।

[6] রূপকধর্মী চরিত্রগঠন: লােককথার রাজারানি রাজপুত্র রাজকন্যা-রাক্ষস -দৈত্য-ডাইনি -জাদুমন্ত্র -অলৌকিকতা ইত্যাদির বহিঃসৌধের অন্তরালে সাধারণ মানুষের জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া, কামনা বাসনাগুলি লুকিয়ে থাকে।

[7] সর্বজনীন গ্রহণযােগ্যতা: বিশ্বসাহিত্যে লােককথার সর্বজনীন গ্রহণযােগ্যতা অসীম। একদেশের লােককথা সেইদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে ও গ্রহণযােগ্য হয়ে ওঠে। অর্থাৎ লােককথা কোনাে ভৌগােলিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকে না, তা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

[8] অনির্দিষ্ট স্থান-কাল-পাত্র: লােককথার গল্পের স্থান-কাল- পাত্রের কোনাে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় না।

লােককথার বা লোকগাথার গুরুত্ব

[1] সমাজ-সংস্কৃতির পরিচয়ে: বিভিন্ন দেশের নির্দিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে লােককথাগুলি গড়ে ওঠে। তাই লােককথাগুলি হয়ে ওঠে সুনির্দিষ্ট আঞ্চলিক ঐতিহ্যের পরিচায়ক। ধর্মবিশ্বাস, সংস্কার, খাদ্যাভ্যাস, বেশভূষা, সমাজরীতি-সহ সমাজ-সংস্কৃতির সম্যক পরিচয়দানে সাহায্য করে থাকে লােককথা।

[2] অতীত ইতিহাসের ধারণাদানে: বহু যুগ আগের কোনাে জনগােষ্ঠীর বিস্তৃত ইতিহাসের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের সহায়ক হিসেবে কাজ করে লােককথা। তাই লােককথাকে বলা হয় এক জীবন্ত ও অবিনশ্বর জীবাশ্ম।

[3] মনােরঞ্জন ও শিক্ষাদানে: যুগের পর যুগ ধরে লােককথার কাহিনি পাঠ করে পাঠককুল আনন্দ লাভ করে আসছে। নানা ধরনের অতিমানবিক কাহিনিগুলি পাঠকের মনােরঞ্জন করে। পাশাপাশি লােককাহিনিগুলি পরােক্ষভাবে মানুষকে শিক্ষা দেয়। লােককথাগুলির সমাপ্তিতে থাকে নানা ধরনের নীতিবাক্য।

Leave a reply