Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

লােককথার অন্তর্ভুক্ত কিংবদন্তি, লােকপুরাণ, নীতিকথা, গীতিকা ও ব্রতকথার ব্যাখ্যা দাও।

সূচনা:

লােকসাহিত্যের এক বিশেষ অঙ্গ হল লােককথা। লােককথা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের গল্প।

লােককথার ব্যাখ্যা

কিংবদন্তি

পরিচিতি: ইংরেজি লেজেন্ড শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল কিংবদন্তি। প্রাচীন সাহিত্যগুলিতে এর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে—“পূর্বকালে বিশেষ কোনাে ভােজ উৎসবে যখন কোনাে সন্ন্যাসী বা ধর্মগুরুর জীবনবৃত্তান্ত কথিত বা গীত হত তখন তার নাম হয় কিংবদন্তি।” সাধারণভাবে বলা যায় ইতিহাস ও কল্পনার মিশ্রণে লৌকিক কথাসাহিত্যের রূপবিশিষ্ট লােককাহিনি হল কিংবদন্তি।

চরিত্র: কিংবদন্তির চরিত্রগুলি বীর মানুষের জীবনগাথা। কিংবদন্তি চরিত্র নানা গুণে প্রায় দেবতা হয়ে ওঠেন। অনেক সময় সন্ন্যাসী, ফকির, যাজক বা কোনাে স্থান কিংবদন্তির চরিত্র হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিকদের ধারণায় কয়েকটি কিংবদন্তির চরিত্র হল -শ্রীকৃয়, রামচন্দ্র, গিলগামেশ, হারকিউলিস, রবিন হুড প্রমুখ।

কাহিনি: কিংবদন্তিতে যে কাহিনি বর্ণিত হয় তা একদিন নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘটেছিল বলে সেই এলাকার বহু মানুষ সাধারণত বিশ্বাস করে থাকেন। কিংবদন্তির কাহিনি সর্বদা আখ্যাননির্ভর হয় না।

লােকপুরাণ

পরিচিতি: সৃষ্টির আদিকালে অপরিণত বুদ্ধির মানুষ যে সমস্ত ধর্মীয় অলৌকিক কল্পকাহিনি রচনা ও প্রচার করে তাকে লােকপুরাণ (Myth) বলে। ‘Myth’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Muthos’ থেকে।

চরিত্র: লােকপুরাণে কেন্দ্রীয় চরিত্র হল অলৌকিক দেবদেবীগণ। এতে কাহিনির মূল চরিত্র ঈশ্বর বা ঐশ্বরিক শক্তির ওপর আরােপিত। মূল চরিত্রটি ঈশ্বরের অলৌকিক লীলাকাহিনি বা কর্মকাণ্ডের রূপকার।

কাহিনি: পৌরাণিক কাহিনিগুলি মূলত ধর্মভিত্তিক। ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় সংস্কার, রীতিনীতি, পূজা-প্রার্থনা, ধর্মোৎসব-উপাচার ইত্যাদির ভিত্তিতে পৌরাণিক কাহিনি গড়ে ওঠে। বিশ্বসৃষ্টির রহস্য, দেবতা-মানবের জন্ম, মহাপ্লাবন, দেবতা-দানব-মানবের দ্বন্দ্ব, জন্ম- মৃত্যু-আত্মা-পুনর্জন্ম-অবতার, স্বর্গ নরক, পাপপুণ্য সমস্ত কিছুই হল এর বিষয়।

নীতিকথা

পরিচিতি: মানবসমাজের বিভিন্ন সামাজিক পারিবারিক নীতিগুলির দ্বারা যে লােককাহিনি বর্ণিত হয় তাকে বলা হয় নীতিকাহিনি। নীতিকথায় কোনাে উপদেশ প্রত্যক্ষভাবে উপস্থাপনা করা হয়। নীতিকথাতে খুব সংক্ষিপ্তভাবে মূলনীতিগুলি উল্লেখ থাকে। বিশেষত লৌকিক নীতিকথাগুলিই এর মূল সুর।

চরিত্র: নীতিকথাগুলির মূল চরিত্র বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরু মােজেস, জিশুখ্রিস্ট, হজরত মহম্মদ, ভীষ্ম, বুদ্ধদেব, রামকৃষ্ণদেব প্রমুখ ধর্মগুরু বা ধর্মপ্রবক্তাগণ যুগে যুগে লৌকিক নীতিকথার সাহায্যে অনেক সময় তাদের ধর্মাদর্শ প্রচার করে গেছেন।

কাহিনি: নীতিকথার কাহিনিগুলির শেষে সাধারণত উপদেশগুলির উল্লেখ থাকে। কেবলমাত্র উপদেশ, নির্দেশ বা আদেশ নয়, নীতিবােধের আদর্শই নীতিকথার মূল বিষয়। নানা দোষগুণে ভরা মানুষদের নিয়েই গড়ে উঠেছে নীতিকথার কাহিনি।

গীতিকা

পরিচিতি: ইংরেজি ‘ব্যালাড’ এর বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘গাথা’ বা গীতিকা। লােককথার এক অন্যতম অঙ্গ হল গীতিকা। সুর করে নাটকীয় ভঙ্গিতে গাওয়া গল্পগুলি হল গীতিকা বা ব্যালাড।

চরিত্র: গীতিকা চরিত্রগুলি মূলত কথক ও গায়ক। কথক ও গায়কের মাধ্যমে যে সমস্ত চরিত্রগুলি বর্ণিত হয় সেগুলি মূলত আঞ্চলিক কিংবদন্তি বা সত্য কাহিনিভিত্তিক।

কাহিনি: গীতিকায় নিটোল কাহিনি থাকে। এই কাহিনিতে আঞ্চলিক ভাবনা, ভাষা, রীতিনীতি, পরব, পারিবারিক-সামাজিক জীবন ও আঞ্চলিক লােক সাংস্কৃতিক পরম্পরা ধরা পড়ে।

ব্রতকথা

পরিচিতি: ব্রতকথা বলতে আমরা লােককথার সেই বিভাগকেই বুঝি যাতে ব্রতের মধ্যে দিয়ে গ্রাম্য জীবনের নানা ধরনের আশা- আকাঙ্ক্ষা, কামনা বাসনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। ব্রতকথা দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা শাস্ত্রীয় ব্রতকথা, মেয়েলি ব্রতকথা।

চরিত্র: ব্রতকথার চরিত্রগুলি মূলত দেবদেবীকেন্দ্রিক। ব্রতকথায় দুধরনের দেবদেবী দেখা যায়। যথা—শান্তশিষ্ট দেবতা ও রুষ্ট দেবতা। অনেক সময় রূপকথা বা পশুকথার চরিত্রগুলিও এতে স্থান পায়।

কাহিনি: ব্রতকথার কাহিনিতে বিভিন্ন ধরনের লােকসামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, কামনা পূরণের লক্ষ্যে কৃচ্ছসাধন পালন, বিপদ মুক্তির উপায়, দেবদেবীর কৃপা লাভের উপায় এবং দেবদেবীর মাহাত্ম্য প্রভৃতি বিষয়কেন্দ্রিক কাহিনি বর্ণিত হয়। ব্রতকথা শােনার‌ গুণ বর্ণনা এবং ব্রত পালনের বিধি-নির্দেশ বর্ণনার মধ্যে দিয়ে ব্রতকথা কাহিনির সমাপ্তি ঘটে।

উপসংহার:

বিশ্ব সাহিত্যের ক্ষেত্রে লােককথাগুলির মধ্যে সাধারণ কিছু মিল দেখা গেলেও কিংবদন্তির ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না।

Leave a reply