Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

প্রাক আধুনিক চিনে আর্থ-সামাজিক অবস্থা আলোচনা করো।

প্রাক আধুনিক চিনে আর্থ-সামাজিক অবস্থা

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম চিন দেশ। আয়তনের দিক থেকে এটি সমগ্র ইউরোপের আয়তনের মতো। এই দেশে বহু জাতিসত্তার মানুষের বাস। মোট ৫৬ টি জাতিসত্তার মধ্যে হান হাজিই সংখ্যাগরিষ্ঠ। দেশের জনসংখ্যার নয়। দশমাংশ মানুষেরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই হান জাতির মানুষ। বাকি ৫৫ টি সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মধ্যে রয়েছে মোঙ্গল, হই, তিব্বতীয়, উইঘুর, মিয়াও, ই, যুছাং, চুংচিয়া, কোরিয় এবং আরও অনেকে।

ব্যাপক অর্থে চিনা সমাজ দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। একদিকে ছিলেন কৃষক, হস্তশিল্পী এবং অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষ— যারা শোষিত শ্রেণীভুক্ত। আর অন্যদিকে শোষক শ্রেণীভুক্ত মানুষদের মধ্যে আমরা পাই সম্রাট, ভূস্বামী, স্কলার-জেন্ট্রি, বণিক ও অন্যদের।

প্রাচীন চিনা সমাজের ভিত্তি ছিল পরিবার। এই পরিবারকে এক কথায় রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যায়। প্রাচীন চিনে পরিবারের মূল কর্তব্য ছিল সন্তানোৎপাদন। পরিবারে পিতাই ছিলেন সর্বময় কর্তা। পারিবারিক সম্পত্তি ও আয় কিংবা পুত্রকন্যাদের বিবাহের ক্ষেত্রে তাঁর অধিকার, বক্তব্য ও সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হতো। প্রাচীন আইন অনুযায়ী তিনি পরিবারের পুত্র-কন্যাদের বিক্রি এমন কি ‘অপরাধে’র শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডও দিতে পারতেন। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের উপর বয়োজ্যেষ্ঠদের এই কর্তৃত্বের পাশাপাশি ছিল নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব। বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন মূল্য ছিল না, সবক্ষেত্রেই তা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা ঠিক করে দিতেন। নারীদের মধ্যে সাক্ষরতা ছিল না বললেই চলে, পারিবারিক সম্পত্তির উপর তাদের কোন আইনী অধিকার ছিল না।

চিনা সমাজের সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে ছিল কৃষক শ্রেণী। দরিদ্র, মধ্য, ধনী-মূলত এই তিন ধরনের স্তরবিন্যাস ছিল তাদের মধ্যে। পরবর্তীকালে শোষণ ও দারিদ্রের যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হয়ে বহু দরিদ্র কৃষক ভূমিহীন আর বহু মধ্য কৃষক দরিদ্র কৃষক ভূমিহীন আর বহু মধ্য আর বহু মধ্য কৃষক দরিদ্র হয়ে পড়েন। ভাগচাষীর সংখ্যা নেহাৎ কম ছিল না। ঐতিহাসিক শ্যেনের মতে, যে সব কৃষকের নিজস্ব জমি ছিল, তারাই ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু তাদের অবস্থা ভাগচাষীদের তুলনায় খুব ভাল ছিল না তা বলা যায় না। তারা প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে বিত্তবান ভূস্বামীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও নির্যাতিত হতেন। গ্রামাঞ্চলের অর্থব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, পুলিশী ব্যবস্থা— এক কথায় সমগ্র রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাই ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে । মুষ্টিমেয় ভূস্বামীশ্রেণী বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক জনতার উপর নানা ধরনের শোষণ-নির্যাতন চাপাতো এবং তাদের শ্রমের ফল আত্মসাৎ করতো। প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও চিন-বিশেষজ্ঞ যোসেফ নীডহ্যাম চিনের গ্রামাঞ্চলে এই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বন্ধনের জন্য চিনা সমাজকে ‘আমলাতান্ত্রিক সামন্ততন্ত্র’ নামে অভিহিত করেছেন।

শোষিত শ্রেণীগুলির মধ্যে অপর গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণী হলো হস্তশিল্পী। এই শ্রেণীভুক্ত মানুষেরা শহরে কেন্দ্রীভূত হলেও গ্রামাঞ্চলে তাদের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। শহুরে হস্তশিল্পীরা ‘গিল্ড’ বা ‘শিল্পসংঘ’ গড়ে তুলতেন এবং সেগুলিই প্রতিটি ক্ষেত্রের উৎপাদন এবং বিক্রির বিষয়টা তদারকি করতো। প্রতিটি শিল্পের ক্ষেত্রে ছিল আলাদা আলাদা ‘শিল্পসংঘ’, যেমন তাঁতী, চর্মশিল্পী, বাঁশজাতদ্রব্য শিল্পী, স্বর্ণকার প্রভৃতি হস্তশিল্পীদের জন্য নিজস্ব গিল্ড । এছাড়া ছিলেন গ্রামীন হস্তশিল্পীরা। তাঁরা সাধারণভাবে ছিলেন আংশিক সময়ের কর্মী। তাঁরা মূলত ছিলেন কৃষক। কৃষিকাজের বাইরের যে অবসর সময়, বিশেষত বছরের যে অংশে চা, চাষের কাজ থাকে না, সেই সময় তারা এই ধরনের উৎপাদনের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতেন। কৃষির যন্ত্রপাতি,  প্রতিদিনের নানা ব্যবহার্য দ্রব্য – এই সবই ছিল তাদের উৎপাদিত দ্রব্যের তালিকাভুক্ত। ভারতীয় গ্রামসমাজের মতোই চিনদেশের গ্রামাঞ্চলেও কৃষি ও হস্তশিল্পীদের মধ্যে এক ধরনের ঘরোয়া বন্ধন দেখতে পায়া যায়।

গ্রামীণ সমাজের আর একটা অংশ জুড়ে ছিলেন দিন-মজুর, নৌকাচালক, কুলিমজুর, ভবঘুরে এবং আরও অনেক শ্রমজীবী মানুষ। এরা সকলেই ছিলেন শোষিত শ্রেণীভুক্ত।

Leave a reply