Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের কৃতিত্ব আলােচনা করাে।

রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের কৃতিত্ব

বীর নরসিংহের পর তার ভাই কৃষ্ণদেব রায় ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন তুলুভ বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা, সুদক্ষ সংগঠক ও রণনিপুণ যােদ্ধা। কৃষ্ণদেব রায় শুধু বিজয়নগর সাম্রাজ্যেরই নয়, তিনি ছিলেন মধ্যযুগের ভারতীয়
নৃপতিদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বিজয়নগরের রাজ্যসীমা বহুদূর বিস্তৃত করেন। তাঁর আমলে শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্পে বিজয়নগরের দারুণ অগ্রগতি ঘটে। পর্তুগিজ পর্যটক বলেছেন যে, বিজয়নগরের রাজাদের মধ্যে কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন সর্বাপেক্ষা পণ্ডিত এবং সর্বোত্তম শাসক, সুবিচারক, সাহসী এবং সকল গুণের অধিকারী।

রাজ্যজয়

রাজা কৃষ্ণদেব রায় সিংহাসনে বসার সময় বিজয়নগর সাম্রাজ্য এক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে ছিল। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বৈদেশিক আক্রমণের সম্ভাবনা রাজ্যে অরাজকতার সৃষ্টি করেছিল। কৃষ্ণদেব রায় এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সাম্রাজ্যকে সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে যান।

(১) তিনি বিজয়নগরের বিদ্রোহী সামন্তদের দমন করেন।

(২) বাহমনি রাজ্য ভেঙে গড়ে ওঠা পাঁচটি রাজ্য যথা-বিজাপুর, গােলকুণ্ড, আহম্মদনগর, বেরার ও বিদর সমবেতভাবে বিজয়নগরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ায়। এই রাজ্যগুলির মধ্যে বিজাপুরকে পরাজিত করে তিনি সাময়িকভাবে বিজাপুর দখল করেন। বিজাপুরের গুলবর্গা দুর্গটি তিনি ধ্বংস করেন।

(৩) গােলকুণ্ডার শাসক কুলিকুতবকে তিনি পরাজিত করেন।

(৪) কৃষ্ণদেব রায় সুলতান মামুদ শাহকে কোভেলাকোডার যুদ্ধে পরাস্ত করে ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে
রায়চুর দোয়াব দখল করেন।

(৫) তিনি শিবসমুদ্রম্ ও শ্রীরঙ্গপত্তম্‌ দুর্গ দুটিও দখল করেন।

(৬) উড়িষ্যার রাজাকে পরাজিত করে তিনি উদয়গিরি এবং কোণ্ডাবিড়ু দখল করেন। কৃষ্ণদেব রায় ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার গজপতিরাজ প্রতাপরুদ্রদেবের কন্যা জগন্মােহিনী দেবী (টুক্কা’ নামেও পরিচিত)-কে বিবাহ করেন। তিনি উত্তরে উড়িষ্যা থেকে দক্ষিণে সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত এবং পূর্বে বিশাখাপত্তনম থেকে পশ্চিমে কোঙ্কন পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।

সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদান

কৃষ্ণদেব রায়ের আমলে বিজয়নগরে শান্তি ও সমৃদ্ধি এসেছিল। তিনি ছিলেন শিল্প, সাহিত্য ও বিদ্বানের পৃষ্ঠপােষক। তিনি তেলেগু ও সংস্কৃত ভাষায় কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল তেলেগু ভাষায় রচিত আমুক্ত মাল্যদা। এ ছাড়াও, তিনি সংস্কৃত ভাষায় জাম্ববতী কল্যাণম্ নামে একটি নাটক রচনা করেন। তিনি সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড় ও তামিল ভাষার বিভিন্ন সাহিত্যিকের পৃষ্ঠপােষকতা করতেন। তার রাজসভায় ‘অষ্টদিগজ’ নামে আটজন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন।

থাপত্যশিল্পে অবদান

কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম পৃষ্ঠপােষক। তিনি বহু মন্দির, গােপুরম ও মণ্ডপ নির্মাণ করেন। তাঁর স্থাপত্যকীর্তির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল রামস্বামী মন্দির, বিঠস্বামী মন্দির, হাজারা রামস্বামী মন্দির ইত্যাদি। তিনি নেগল্লপুর নগরটি পত্তন করেন।

ধর্মীয় উদারতা

পায়েজ কৃষ্ণদেবের মানবতা ও উদারতার প্রশংসা করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন বিষ্ণুর উপাসক। তবে রাজা হিসেবে তিনি ছিলেন উদার ও পরধর্মসহিষ্ণু।

উপসংহার

রাজা কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন বিজয়নগরের শ্রেষ্ঠ রাজা। তার আমলে সাম্রাজ্যের সীমা যেমন সর্বাধিক বিস্তৃত হয় তেমনি বিজয়নগরের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রভূত অগ্রগতি ঘটে। বৈদেশিক যােগাযােগের বিষয়েও তাঁর নজর ছিল। গােয়ার পাের্তুগিজ শাসক আলবুকার্ক কৃষ্ণদেব রায়ের অনুমতি নিয়ে ভাটকলে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই অচ্যুৎ রায় সিংহাসনের বসেন। কিন্তু এই সময় থেকেই বিজয়নগরের ক্রমিক অবনতি ঘটতে থাকে। যােগ্য রাজার অভাবে বিজয়নগর ক্ৰমে পতনের দিকে এগিয়ে যায়।

Leave a reply