Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি আলােচনা করাে।

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি

সাম্রাজ্যবাদী মনােভাবাপন্ন হলেও আকবর দাক্ষিণাত্যে কোনাে সক্রিয় বিস্তার নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী ছিলেন না। জাহাঙ্গীরও আকবরের দাক্ষিণাত্য-নীতির ধারা অব্যাহত রাখেন। শাহজাহানের সময় থেকে মুঘল দাক্ষিণাত্য-নীতির পটপরিবর্তন ঘটে। আহম্মদনগর ধ্বংস করে তিনি দাক্ষিণাত্যে মুঘল শক্তি প্রসারিত করেন। ঔরঙ্গজেবের সময় মুঘল দাক্ষিণাত্য-নীতির চরম ব্যাপ্তি পরিলক্ষিত হয়।

শাহজাহানের রাজত্বকালে ঔরঙ্গজেব ছিলেন দাক্ষিণাত্যের শাসনকা। তখনই তার নীতি ছিল দাক্ষিণাত্যের সিয়া মুসলমানগণ দ্বারা শাসিত গােলকুণ্ড ও বিজাপুরকে। মােগল-সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুল করা। জয় যখন সুনিশ্চিত তখন তাকে শাহজাহানের হস্তক্ষেপের ফলে নিরস্ত হতে হয়েছিল; সিংহাসনে আরােহণের পর তিনি তাঁর উদ্দেশ্য কার্যে পরিণত করবার সুযােগ পেলেন। প্রকৃতপক্ষে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য-নীতি পূর্ববর্তী মােগল সম্রাটগণের সাম্রাজ্যবিস্তার-নীতিরই পুনরাবৃত্তি বলা যেতে পারে।

কয়েকটি কারণে ঔরঙ্গজেব তার রাজত্বকালের প্রথম দিকে গােলকুন্ডা ও বিজাপুরের দিকে যথেষ্ট দৃষ্টি দিতে পারেন নি। প্রথমত, উত্তর-ভারতের রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়ে তাকে বেশ বিব্রত থাকতে হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, দাক্ষিণাত্যের সিয়া রাষ্ট্রগুলি। শিবাজীর বারংবার আক্রমণে কিছুটা শক্তিহীন হয়ে পড়বে এ ভেবে তিনি খানিকটা নিশ্চিন্তেও ছিলেন। তৃতীয়ত, শিবাজীর শক্তিই যখন অতঃপর অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় তখন শিবাজীকে দমন করবার জন্যই তার বেশ কিছু শক্তি নিয়ােজিত করতে হয়। এইসব কারণে পঁচিশ বছর কাল দাক্ষিণাতের সুলতানি রাজদ্বয় মােগল-সাম্রাজ্যবাদ নীতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

শিবাজী ও ঔরঙ্গজেব 

শায়েস্তা খাঁর পরাজয়

প্রথমদিকে শিবাজীর শক্তি বিজাপুরের বিরুদ্ধেই নিয়ােজিত হচ্ছে দেখে ঔরঙ্গজেব নিশ্চিন্ত ছিলেন। কিন্তু শিবাজী যখন শক্তি সঞ্চয় করে মােগল-সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থানসমূহ আক্রমণ করতে আরম্ভ করলেন তখন ঔরঙ্গজেব বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি শায়েস্তা খাকে প্রেরণ করলেন। শায়েস্তা খাঁকে পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে হয় এবং ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে শিবাজী সমৃদ্ধ মােগল বন্দর সুরাট লুণ্ঠন করলেন। অতঃপর ঔরঙ্গজেব সেনাপতি জয়সিংহ ও দিল্লির খাঁকে প্রেরণ করলে শিবাজী সন্ধি করতে বাধ্য হলেন। ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত পুরন্দরের সন্ধি দ্বারা তিনি ২৩টি দুর্গ সমর্পণ করতে এবং বিজাপুরের বিরুদ্ধে মােগলবাহিনীকে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুত হলেন। ঔরঙ্গজেব কূট-কৌশলে শিবাজীকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে বন্দী করলেন। কিন্তু শিবাজী কৌশলে নিজেকে মুক্ত করে দাক্ষিণাত্যে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং নিজ রাজ্য সংগঠনে মনােনিবেশ করলেন। ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই তিনি পুনরায় মােগল শক্তির বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন এবং একে একে প্রায় সমস্ত দুর্গই পুনরুদ্ধার করলেন। এই সময়ে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের আফগান বিদ্রোহ দমন করবার জন্য ঔরঙ্গজেব বাধ্য হয়ে দাক্ষিণাত্য থেকে মােগলবাহিনীর একাংশ অপসারণ করে নিলেন। ফলে দাক্ষিণাত্যে তখন মারাঠা শক্তি অপ্রতিহত হয়ে উঠল। শিবাজী নিজেকে ছত্রপতি রাজা বলে ঘােষণা করলেন।

দাক্ষিণাত্যের নূতন রাজনৈতিক পরিস্থিতি

মারাঠাজাতির উত্তরােত্তর ক্ষমতা বৃদ্ধি দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক নূতন পরিস্থিতির সৃষ্টি করল এবং সেখানে মােগল আধিপত্য এক দারুণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলাে। এদিকে ঔরঙ্গজেবের পুত্র আকবর বিদ্রোহী হয়ে শম্ভুজীর সঙ্গে মিলিত হলে অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠল। সুতরাং ঔরঙ্গজেব রাজপুতদের সঙ্গে বিরোধের নিষ্পত্তি করে ফেললেন এবং গােলকুণ্ড, বিজাপুর ও মারাঠা এই ত্রি-শক্তিকে বিধ্বস্ত করবার জন্য স্বয়ং এক বিরাট বাহিনী সহ ১৬৮২ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যের আহম্মদনগরে এসে উপস্থিত হলেন। শভুজীর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাব ঔরঙ্গজেবের পক্ষে অনেকখানি সুযােগ সৃষ্টি করেছিল। তিনি মারাঠাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামে অবতীর্ণ হলেন। জীবনের অবশিষ্ট পচিশ বছর কাল তিনি দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধবিগ্রহেই অতিবাহিত করেছিলেন।

গােলকুণ্ড ও বিজাপুরের বিরুদ্ধে অভিযানের কারণ

মারাঠাশক্তি ভিন্ন একই সময়ে দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করেন। গােলকুণ্ডা ও বিজাপুরের সুলতানগণও ছিলেন সিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত, স্বভাবতঃই পরধর্মদ্বেষী সুন্নী ঔরঙ্গজেব তাদের স্বাধীন অস্তিত্বের বিরােধী ছিলেন। তা ছাড়া তাদের নিকট থেকে মারাঠাগণ অনেক সময়ে যুদ্ধোপকরণ সংগ্রহ করতাে। তারা ঔরঙ্গজেবের ইচ্ছা অনুযায়ী মারাঠাদের সঙ্গে অনবরত দ্বন্দ্বে লিপ্ত হত না। সর্বশেষে ওই রাজ্যগুলির প্রচুর ঐশ্বর্য ঔরঙ্গজেবের। পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী দেয় কর বাকি পড়েছে এই অজুহাতে ঔরঙ্গজেব বিজাপুর আক্রমণের আদেশ দিলেন। পর পর কয়েকটি অভিযান ব্যর্থ হলে ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেব স্বয়ং বিজাপুর আক্রমণ করে বিজাপুর রাজকে বন্দীকে করলেন এবং রাজ্যটিকে মােগল-সাম্রাজ্যভুক্ত করে নিলেন। অতঃপর মােগলদের বিরুদ্ধে বিজাপুরকে সাহায্য দানের জন্য ঔরঙ্গজেব গােলকুন্ডা অবরােধ করলেন এবং প্রতারণার সাহায্যে গােলকুণ্ডা অধিকার করে নিলেন।

গােলকুণ্ডা মােগল-সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত 

গােলকুণ্ডা জয়ের পর ঔরঙ্গজেব পুনরায় মারাঠাদের বিরুদ্ধে তার সর্বশক্তি নিয়ােগ করলেন। মারাঠাদের রাজধানী রায়গড় দখল হলাে, শম্ভুজী ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে পরাজিত হয়ে বন্দী ও নিহত হলেন এবং তার পুত্র শাহ্ মােগলদের হাতে বন্দী হলেন। অবশ্য মারাঠাশক্তিকে তিনি একবারে বিধ্বস্ত করতে পারলেন না। শম্ভুজীর ভ্রাতা রাজারাম এবং তার মৃত্যুর পর তাঁর পত্নী তারাবাঈ মারাঠাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন। ঔরঙ্গজেব অবশ্য আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে ত্রিচিনপল্লী ও তাঞ্জোরের হিন্দু রাজ্য দুইটি দখল করে নিলে মােগল সাম্রাজ্য সুদূর দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়লাে। বাস্তবিকই তার পূর্বে এত বড় সুবিস্তৃত আর কোনাে মােগল সম্রাট শাসন করতে পারলেন না। তাদের শক্তি যেন পুনরায় দুর্বার হয়ে উঠল। মােগল সৈন্যবাহিনী দীর্ঘকাল যুদ্ধ চালিয়ে তাদের দক্ষতা, সাহস ও আত্মপ্রত্যয় হারিয়ে ফেলল। দীর্ঘকাল রাজধানী থেকে দূরে দাক্ষিণাত্যে অবস্থান করবার ফলে সাম্রাজ্যে শিথিলতা, বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ দেখা দিল। ভগ্নহৃদয় ও ভগ্নস্বাস্থ্য ঔরঙ্গজেব ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। “I have not done well for the country or its people. My years have gone by profitless… Nothing brought I into this world but carry with me the burden of my sins. I know not what punishment be in store for me suffer.”-Aurangze’s letter to Azan.

ঔরঙ্গজেবের ভ্রান্ত ও অবিবেচক দাক্ষিণাত্যনীতির পরিণতি ছিল ভয়াবহ। এর ফলে মােগল সাম্রাজ্যের মর্যাদা ও সামরিক শক্তির অনেকখানি খর্ব হয়। ঐতিহাসিক J.N.Sarkar ঔরঙ্গজেবের ভ্রান্ত ও ব্যর্থ দাক্ষিণাত্যনীতিকে নেপােলিয়ানের অবিবেচক উপদেশীয় যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন—তার মতে একই ভাবে স্পেনের ক্ষত যেমন নেপােলিয়নের শক্তি বিধ্বস্ত করেছিল, দাক্ষিণাত্যের ক্ষত ঔরঙ্গজেবের বিপদ ডেকে এনেছিল। স্মিথের মতে ‘দাক্ষিণাত্যের সম্রাট ও মােগল সাম্রাজ্যকে কবর দেওয়া হয়।

ঐতিহাসিকগণের মধ্যে মতভেদ

দাক্ষিণাত্য-নীতির সমালােচনা

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য-নীতি কোনাে স্থায়ী ফল প্রসব করে নি; বরং উহা মােগল-সাম্রাজ্যের ধ্বংসের পথ আরও প্রশস্ত করেছিল। ডক্টর স্মিথ ঔরঙ্গজেবের এই ব্যর্থতাকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে দাক্ষিণাত্যে তার দেহ ও সম্মান উভয়েরই সমাধি হয়েছিল। “The Deccan was the grave of his reputation as well as of his body”- Dr. Smith. কিন্তু তার এই দাক্ষিণাত্য-নীতির যৌক্তিকতা ও কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঐতিহাসিকগণ একমত হতে পারে নি। ডক্টর স্মিথ, এলফিনস্টোন প্রমুখ। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলি ধ্বংস করে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কারণ যে সুলতানগণ নিজেদের স্বার্থের প্রয়ােজনেই মারাঠাশক্তিকে দমন করে রাখতেন, ঔরঙ্গজেব তাদেরকেই দমন করে মারাঠাশক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিল। উক্ত ঐতিহাসিকগণের মতে ঔরঙ্গজেবের উচিত ছিল সিয়া রাজ্যগুলিকে মারাঠাদের বিরুদ্ধে নিয়ােজিত করে উভয়েরই শক্তি খর্ব করা, তা না করে ঔরঙ্গজেব ভুল করেছেন। কিন্তু স্যার যদুনাথ সরকার প্রমুখ আধুনিক ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন মত পােষণ করেন। তারা বলেন যে দাক্ষিণাত্য জয় করতে গিয়ে ঔরঙ্গজেব তার পূর্ববর্তী সম্রাটগণের নীতি অনুসরণ করেছেন মাত্র। এ কথা পরিষ্কার যে মােগল সম্রাটগণের সাম্রাজ্যবাদী নীতির সঙ্গে সুলতানি রাজ্যগুলির, স্বাতন্ত্রের কোনাে সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব ছিল না। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকলেও নব-জাগ্রত মারাঠা-শক্তিকে দাবিয়ে রাখা তাদের সাধ্যাতীত ছিল। শেষের দিকের ঘটনাবলী তাই প্রমাণ করে। সুতরাং গােলকুণ্ড ও বিজাপুর জয় করে ঔরঙ্গজেব ক্ষীণ দৃষ্টির পরিচয় দিয়েছিলেন তা প্রমাণিত হয় না।

দাক্ষিণাত্য-নীতি সাম্রাজ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক

তবে এ কথা সত্য যে ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য-নীতি নানা দিক দিয়ে সাম্রাজ্যের ক্ষতিসাধন করেছিল।

প্রথমত, সুদূর দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়াতে এক কেন্দ্র থেকে একজনের পক্ষে। শাসনকার্য পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল ফলে শাসনকার্যে শিথিলতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে লাগল।

দ্বিতীয়ত, দীর্ঘকাল ধরে দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধবিগ্রহের ফলে রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে গিয়েছিল এবং সৈন্যবাহিনীর দক্ষতাও বিনষ্ট হয়েছিল, তারা সাহস ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল।

তৃতীয়ত, দীর্ঘকাল উত্তর-ভারত থেকে অনুপস্থিত থাকার ফলে এ অঞ্চলের শাসনকর্তাগণ স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল, চতুর্দিকে অশান্ত ও বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। সর্বশেষে তিনি দাক্ষিণাত্যে থেকেও মারাঠাশক্তি খর্ব করতে পারলেন না।

সেইজন্য তাঁর দাক্ষিণাত্য-নীতি কেবল তার ব্যর্থতা নয় মােগল-সাম্রাজ্যের ক্ষতিসাধনও করেছিল। দাক্ষিণাত্য সমগ্র সাম্রাজ্যের ক্ষত হিসাবে দেখা দিয়েছিল।

Comment ( 1 )

  1. Heart is so important for everyone if you lose the power of heart
    i thing you have more power in your body
    you can not do any thing in the world

Leave a reply