Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

বৈদিক যুগের সমাজ ব্যবস্থা সম্বন্ধে লেখ।

বৈদিক যুগের সমাজ ব্যবস্থা

বৈদিক সমাজের ভিত্তি ছিল পরিবার ও পিতৃ প্রধান। পরিবারের প্রধান ছিলেন পিতা। তিনি পিতৃ প্রধান পরিবার গৃহপতি নামে পরিচিত হতেন। পরিবার ভুক্ত সদস্যদের উপর তাঁর ক্ষমতা ছিল সীমাহীন।

সমাজে নারীর স্থান

তাঁহারা পুরুষের সহকর্মিনী ও সহধর্মিনী হতেন। নারীদের একাধিক পতি গ্রহণ করা নিষিদ্ধ ছিল। গৃহস্থলীর ব্যাপারে নারীরা সর্বময়ী কর্ত্রী ছিলেন। অন্তঃপুরের বাহিরেও তাঁরা পুরুষদের সহায়তা করতেন। নারীদের মধ্যে অবরোধ প্রথা প্রচলিত ছিল না। তাঁরা উপযুক্ত শিক্ষালাভ করতেন। ঋগ্বেদের যুগে বিশ্ববারা, ঘোষা, আপালা, মমতা প্রমুখ মহিলারা বিভিন্ন শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। সাহিত্যচর্চা ছাড়াও নারীদের যুদ্ধবিদ্যা, অসিচালনা প্রভৃতিও শিক্ষা দেওয়া হত। বাল্যবিবাহ এবং বিধবাবিবাহ প্রচলিত ছিল না। সতী প্রথাও প্রচলিত ছিল না। তবে নিঃসন্তান বিধবা ভ্রাতৃবধূকে বিবাহ করার প্রথা প্রচলিত ছিল। নারীদের নৈতিক চরিত্রের মান উন্নত ছিল।

শ্রেণী বিভাগ

ভারত উপমহাদেশে আগমনকালে আর্যরা তিনটি সামাজিক শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল, যথা—যোদ্ধা বা অভিজাত শ্রেণী, পুরোহিত শ্রেণী ও সাধারণ মানুষ। প্রথমদিকে আর্যদের মধ্যে জাতিভেদ বা বর্ণভেদ বলে কিছু ছিল না। কোন বৃত্তি বংশানুক্রমিক ছিল না। এবং এই তিনটি শ্রেণীর মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধও ছিল না। এই তিনটি শ্রেণীকে নিয়ে আর্যদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠে। কিন্তু অনার্যদের সহিত অবিরত যুদ্ধবিগ্রহ ও সংযোগের ফলে আর্য ও অনার্যদের মধ্যে শ্রেণীভেদের উদ্ভব হয়। এর সহিত যুক্ত হয় বর্ণভেদ। আর্যরা নিজেদের গৌরবর্ণ বা দীর্ঘকায় সম্বন্ধে সর্বদাই সজাগ ছিল। ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের পুরুষসূত্রে বর্ণভেদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। জন্মসূত্রে ও উপনয়নসূত্রে আর্যদের ‘দ্বিজ’ বলা হত।

বর্ণভেদ প্রথা

যারা বিদ্যাচর্চা, যাগ যজ্ঞাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তাঁরা ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত হন। যাঁরা যুদ্ধে লিপ্ত থাকিত, তাহার ক্ষত্রিয় নামে। যাহারা কৃষি, পশুপালন ও ব্যবসা-বাণিজ্য পেশা রূপে গ্রহণ করিতেন, তাঁহারা বৈশ্য নামে পরিচিত হন। যাঁহারা এই তিন শ্রেণীর সেবায় নিযুক্ত হইতেন, তাঁহারা ‘শূদ্র’ নামে পরিচিত হন। এইভাবে বৃত্তি অনুসারে সমাজে চারটি শ্রেণীর উদ্ভব হয়। এই স্থলে স্মরণ রাখা দরকার যে বৈদিক যুগের প্রথমদিকে ‘দ্বিজ’ ও ‘অ-দ্বিজ’ এই দুই শ্রেণীতে আর্য সমাজ বিভক্ত ছিল, অর্থাৎ যাঁরা উপনয়ন লাভে অধিকারী হতেন এবং যাঁরা সেই অধিকার হইতে বঞ্চিত থাকতেন। প্রথমদিকে বর্ণের সংগঠন চারটি সামাজিক শ্রেণী ভিত্তিক ছিল না। প্রথমাক্ত তিনটি বর্ণের উদ্ভাবন করেন ব্রাহ্মণরা এবং এদের মধ্যে পেশাগত বিভাজন নির্দিষ্ট করা হয়। পেশাগত ও জাতিগতভাবে চতুর্থ বর্ণের স্থান নির্ণয় করা হয়। ক্রমেই বর্ণভিত্তিক মর্যাদার পরিবর্তন ঘটে। কালক্রমে আর্য বৈশ্যরা ব্যবসায়ী ও ভূ-স্বামীতে পরিণত হয় এবং শূদ্ররা কিছুটা সামাজিক মর্যদা লাভ করে কৃষিজীবীতে পরিণত হয়। যদিও তাদের “দ্বিজ-মর্যাদা” স্বীকৃত হয় নাই। প্রকৃতপক্ষে বৈদিক ধর্মী অনুষ্ঠানে যোগদান করা শূদ্রদের পক্ষে নিষিদ্ধ ছিল। প্রাচীন বৈদিক যুগের শেষের দিকে সমাজে চারটি শ্রেণীর উদ্ভব হয় এবং পরবর্তী বৈদিকযুগে শ্রেণী ভেদের কঠোরতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, বলা চলে যে ঋক বৈদিকযুগে পেশাভিত্তিক শ্রেণী বিভাগেরও সূচনা হলেও উহার পরিণত রূপ দেখা যায় নাই।

চতুরাশ্রম

‘চতুরাশ্রম’ আর্য সমাজের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইহা সমাজের প্রথম তিন শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। জীবনের প্রথম পর্যায়কে বলা হল ‘ব্রহ্ম চর্যাশ্রম’। এই সময় প্রত্যেক পুরুষকে গুরু গৃহে থেকে বিদ্যাচর্চা করতে হত এবং গুরুর পরিবারের সুখদুঃখের সমান অংশীদার হতে হত। গুরুর নিকট শাস্ত্রচর্চা সম্পন্ন করে বিদ্যার্থীকে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করিয়া, গার্হস্থ্য আশ্রম বা গৃহীর জীবন গ্রহণ করতে হত। ‘গার্হস্থ্য আশ্রম’ বা গৃহীর জীবন গ্রহণ করতে হত। গার্হস্থ্যশ্রমের প্রধান কর্তব্যই ছিল বিবাহ করে স্ত্রী ও সন্তানাদিসহ সংসার ধর্ম পবিত্রভাবে পালন করা। ইহা হল দ্বিতীয় পর্যায়। তৃতীয় পর্যায়কে বলা হইত ‘বানপ্রস্থাশ্রম’। প্রৌঢ় অবস্থায় “বানপ্রস্থাশ্রম” গ্রহণ করার রীতি ছিল। এই সময় সাংসারিক দায়দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে বনে পর্ণ কুটীর বেধে নির্লিপ্ত জীবনযাপন করা। শেষ পর্যায়কে বলা হত ‘সন্ন্যাস’ বা ‘যতি আশ্রম’। এই সময় সন্ন্যাসী ন্যায় জীবন যাপন করত হত।

পোশাক পরিচ্ছেদ

আর্য সমাজে পোশাক পরিচ্ছদ ও অলঙ্কারের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হত। তিন প্রকার আবরণের প্রচলন ছিল দেহের উপরাংশের জন্য উত্তরীয়। নিম্নাংশের জন্য ‘নিবি’ এবং ‘নিবি’র উপরে পরিধান। পোশাক পরিচ্ছদ সূতী, মূল্যবান পশুর চামড়া ও পশম দ্বারা প্রস্তুত করা হত।

খাদ্য ও আমোদ-প্রমোদ

দুধ, ঘি, ফলমূল, যব বা গম আর্যদের প্রধান খাদ্য ছিল। উৎসবের সময় পশুর মাংসও প্রচলিত ছিল। যাগ-যজ্ঞাদির সময় সোমরস বা সুরা নামক মাদক পানীয় আর্যরা ব্যবহার করত। মৃগয়া, মৎসশিকার, অশ্ব ও রথচালনা, নৃত্য-গীতি এই যুগের প্রধান আনন্দ উৎসব ছিল। নৃত্য-গীতের সময় ‘বীনা’ এবং ঢাক প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ছিল।

Leave a reply