Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

গুজরাট রাজ্য কৃষি ও শিল্প উভয়ক্ষেত্রেই উন্নতি লাভ করেছে কেন?

Table of Contents

কৃষিতে গুজরাট রাজ্যের উন্নতির কারণ

কৃষিতে গুজরাট রাজ্য উন্নতি লাভ করলেও এই রাজ্যের স্থান-বিশেষে বন্ধুর ভূ-ভাগ, অগভীর ও অনুর্বর মৃত্তিকা (যেমন : কচ্ছের রণ অঞ্চল), লবণাক্ত জলাভূমি এবং প্রতিকূল আবহাওয়া (গুজরাটে প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাত অনেক কম) এই রাজ্যের কৃষির উন্নতির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে এইসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বর্তমান গুজরাট রাজ্য কৃষিকাজে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে। গুজরাট রাজ্য কার্পাস তুলা ও চিনাবাদাম উৎপাদনে ভারতে প্রথম স্থান এবং তামাক উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। এছাড়া এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ধান, গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, আখ প্রভৃতি খাদ্যশস্য জন্মায়।

নিম্নলিখিত কারণে গুজরাট কৃষিতে উন্নতিলাভ করেছে :

(১) বিস্তীর্ণ সমতল ভূ-ভাগ

একমাত্র কচ্ছ উপদ্বীপ ছাড়া গুজরাটের মূল ভূখণ্ড এবং কাথিয়াওয়াডের বেশিভাগ অঞ্চলই কৃষিকাজের উপযুক্ত সমতলভূমি।

(২) অধিক বাজারদর সম্পন্ন অর্থকরী ফসলের চাষ

সাধারণ খাদ্যশস্যের তুলনায় গুজরাট রাজ্যে ইসবগুল, সাদা জিরে, চিনাবাদাম ও সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন ধরনের তৈলবীজ, তামাক, ভারতের সর্বোৎকৃষ্ট কার্পাস তুলা প্রভৃতি এমন সব অর্থকরী ফসল উৎপন্ন হয় যাদের হেক্টর প্রতি বাজারদর অবশিষ্ট ভারতের অন্যান্য রাজ্যে উৎপন্ন সাধারণ কৃষিজাত পণ্যের তুলনায় বহুগুণ বেশি।

(৩) ভারতের সর্বোৎকৃষ্ট কার্পাস তুলা উৎপাদন

গুজরাট রাজ্যের কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলে অবস্থিত সুরেন্দ্রনগর, ব্রোচ ও বরোদায় ভারতের সর্বোৎকৃষ্ট কার্পাস তুলা প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। উৎকৃষ্ট কার্পাস তুলার জন্য ভারতীয় বস্ত্র শিল্প বহুলাংশে গুজরাট রাজ্যের ওপর নির্ভরশীল।

(৪) সেচের প্রসার

গুজরাট রাজ্যে বৃষ্টিপাত খুব কম হওয়ায় ওই রাজ্যে বিভিন্ন বহুমুখী নদী পরিকল্পনা এবং নলকূপ ও কূপের সাহায্যে এই রাজ্যে জলসেচের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, যা এই রাজ্যের কৃষিকাজে ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছে।

(৫) উচ্চ ফলনশীল বীজ ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার

বৃষ্টিপাত কম হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ফসলের উচ্চফলনশীল বীজ এবং রাসায়নিক সারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে গুজরাটের কৃষিজ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

(৬) সমবায় প্রথায় চাষ

গুজরাট রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলার বিভিন্ন ব্লকে সমবায় প্রথায় চাষের প্রবর্তন এই রাজ্যের কৃষিতে উন্নতির প্রধান কারণ।

(৭) কৃষিজাত দ্রব্যের প্রচুর চাহিদা

ঘনবসতিপূর্ণ গুজরাট রাজ্যে কৃষিভিত্তিক নানান শিল্পের ব্যাপাক প্রসার ঘটায় সারা বছর ধরেই এখানে কৃষিজাত ফসলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

(৮) কৃষি কাজের অনুপযুক্ত ভূমিতে সফলভাবে গবাদি পশুপালন

জলের অভাবে গুজরাটের যেসব অঞ্চলে কৃষিকাজ করা যায় না, সেই সব অঞ্চলে গবাদি পশু পালন করা হয়। দুগ্ধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুজরাট অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে। ভারতের উৎপন্ন গুঁড়ো দুধের প্রায় ৬৩% দুধ গুজরাটে উৎপন্ন হয়। এই রাজ্যের সবরকাথা জেলার আনন্দ ও হিম্মতনগরে ভারতের বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদন সংস্থা আমূল অবস্থিত।

(৯) কৃষিকাজে বৈচিত্র্যময় মৃত্তিকার প্রভাব

(ক) গুজরাটের বিস্তীর্ণ ও উর্বর সমভূমিতে খাদ্যশস্যের তুলনায় কার্পাস তুলা, চিনাবাদাম, তামাক, আখ, ইসবগুল, সাদা জিরে, আম, কলা, সূর্যমুখী প্রভৃতি অর্থকরী ফসলের চাষ বেশি হয়; (খ) গুজরাট রাজ্যের কচ্ছ ও কাথিয়াওয়ারের উঁচু অংশ এবং দক্ষিণের উর্বর কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলের সুরেন্দ্রনগর, আমেদাবাদ; ব্রোচ এবং বরোদায় ভারতের সর্বোৎকৃষ্ট কার্পাস তুলা প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়; (গ) গুজরাট রাজ্যের কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের ধূসর বেলেমাটিতে তামাক, চিনাবাদাম এবং বিভিন্ন তৈলবীজ উৎপন্ন হয়।

গুজরাট রাজ্যের শিল্পোন্নতির কারণ

বর্তমানে গুজরাট ভারতের এক অনতম শিল্পসমৃদ্ধ রাজ্য। বস্ত্ৰ-বয়ন শিল্প; কস্টিক সোডা এবং সোডা অ্যাশ জাতীয় গুরু রাসায়নিক শিল্প; লবণ শিল্প, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প; ঔষধ ও তৎসম্পর্কীয় রাসায়নিক শিল্প; ধাতব ছাঁচ (ডাইস), ইলেকট্রনিক ও বৈদ্যুতিক শিল্প; ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, মেসিন টুলস্, সিমেন্ট, রাসায়নিক সার, চিনি ও দুগ্ধ শিল্প এবং জাহাজ নির্মাণ হল এই রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প।

→ বর্তমানে ভারতের মোট উৎপাদনের প্রায় ২৮% বস্ত্র, ৯৭% সোডা অ্যাশ, ৬৫% খাদ্য লবণ,
সমভূমি অঞ্চলেই শিল্পকেন্দ্রগুলো বিস্তার লাভ করেছে। ৬৩% নাইট্রোজেন সার, ১০% কাগজ, ৭% সিমেন্ট, এই রাজ্যে উৎপন্ন হয়। প্রধানত গুজরাটের

গুজরাট রাজ্যের শিল্পোন্নতির কারণ হল :

(১) সুলভ খনিজ সম্পদ

একমাত্র আকরিক লোহা ছাড়া শিল্পের প্রয়োজনীয় আর সব খনিজ সম্পদ এই রাজ্যে কম-বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এইসব খনিজ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : খনিজ তেল, লিগনাইট কয়লা (কচ্ছ অঞ্চল), বক্সাইট, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, চুনাপাথর, ফায়ার ক্লে, ক্যালসাইট, লবণ প্রভৃতি। এইসব খনিজ সম্পদ গুজরাটের শিল্পোন্নতিতে প্রভূত সাহায্য করেছে।

(২) সুলভ তৈল সম্পদ

স্বাধীনতার পর এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে খনিজ তেলের খনিজ সন্ধান এবং বরোদার কাছে ভারতের বৃহত্তম পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স ও গুজরাট অয়েল রিফাইনারির অবস্থান এই রাজ্যের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের উন্নতিতে প্রভূত সাহায্য করেছে। এই রাজ্যের উৎপাদিত খনিজ তেল থেকে যেসব বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়। তা এই রাজ্যের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের দ্রুত উন্নতির সহায়ক হয়েছে।

(৩) বস্ত্রশিল্পের সুলভ কাঁচামাল 

গুজরাটের সুরেন্দ্রনগর, আমেদাবাদ, বরোদা, ব্রোচ প্রভৃতি অঞ্চলে ভারতের সর্বোৎকৃষ্ট যে কার্পাস তুলা উৎপন্ন হয়, তা এই রাজ্যের বস্ত্র শিল্পের ব্যাপক উন্নতির সহায়ক হয়েছে।

(৪) অর্থকরী কৃষি সম্পদ

গুজরাট রাজ্যে চিনাবাদাম, তামাক, আখ, ইসবগুল, সাদা জিরে এবং বিভিন্ন রকমের মশলার অপর্যাপ্ত উৎপাদন এই রাজ্যের উদ্ভিজ্জ তেল ও বনস্পতি শিল্প, সাবান এবং ওষুধ ও মশলা প্রভৃতি কৃষিভিত্তিক শিল্পের ক্রমোন্নতিতে সাহায্য করেছে।

(৫) উপযুক্ত পরিকাঠামোগত সুবিধা

গুজরাট রাজ্যের ভালো রাস্তাঘাট এবং শিল্পের পরিকাঠামোগত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকায় এই রাজ্য দেশীয় ও অনাবাসী শিল্পপতিদের শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছে।

(৬) আধুনিক ও সম্ভাবনাপূর্ণ শিল্পে বিনিয়োগ

ওষুধ, পেট্রোকেমিক্যাল, কম্পিউটার এবং রপ্তানিযোগ্য উন্নত শ্রেণির বস্ত্র প্রভৃতি আধুনিক ও সম্ভাবনাপূর্ণ শিল্পে বিনিয়োগ এই রাজ্যের দ্রুত শিল্পোন্নতিতে সাহায্য করেছে।

(৭) বন্দরের নৈকট্য

ভারতের বৃহত্তম বন্দর মুম্বই এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কান্ডালা, ওখা, সুরাট ও পোরবন্দরের নৈকট্য এই অঞ্চলে শিল্পোন্নতির সহায়ক হয়েছে।

(৮) উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা

জালের মতো বিছানো সড়ক পথ, রেলপথ এবং উপকূল অঞ্চলের জলপথের সাহায্যে এই রাজ্যটি ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সুসংযুক্ত হওয়ায় শিল্পের প্রয়োজনীয় মাল আনা-নেওয়ায় কোনো অসুবিধা হয় না।

(৯) সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রাচুর্য

স্থানীয় এবং রাজস্থান, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি প্রতিবেশী রাজ্যের দক্ষ ও শান্তিপ্রিয় শ্রমিকের সহজলভ্যতা এই রাজ্যের শিল্পোন্নতির অন্যতম কারণ।

(১০) দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মদক্ষ শিল্পোদ্যোগী

শিল্পোদ্যোগী, কর্মদক্ষ এবং ধনী গুজরাটি ব্যবসায়ীদের পরিচলন বুদ্ধিও গুজরাটের শিল্পোন্নতি সাহায্য করেছে।

(১১) অনুকূল জলবায়ু

আরব সাগর ও খাম্বাত উপসাগরের তীরবর্তী মধ্য ও দক্ষিণ গুজরাটের আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন জলবায়ু এই রাজ্যের বিশেষ করে বস্ত্র শিল্প এবং অন্যান্য শিল্পের উন্নতির সহায়তা করেছে।

(১২) সুলভ শক্তিসম্পদ

গুজরাটে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা থাকায় এই রাজ্যে শিল্পের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ শক্তির অভাব হয় না, যেমন: উকাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ছাড়াও ৭/৮টি বৃহদায়তন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান গুজরাটের শিল্পে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির যোগান দেয়।

এছাড়া এই রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে পারমাণবিক বিদ্যুৎ পাওয়ারও সুবিধা আছে, যেমন : পার্শ্ববর্তী রাজস্থানের কোটা এবং এই রাজ্যের কাকড়াপাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ শক্তি প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে।

(১৩) প্রয়োজনীয় মূলধন

বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পপতিদের বিনিয়োগ করা অর্থ এই রাজ্যে মূলধনের যোগান দেয়।

(১৪) গুজরাট রাজ্যের কর্মদক্ষ

রাজ্য প্রশাসনের জন্যও এই রাজ্য বিভিন্ন শিল্পে উন্নতি লাভ করেছে।

(১৫) চাহিদা

অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজারে কৃষিজ ও ভেষজ দ্রব্য, বস্ত্র এবং পেট্রোকেমিক্যাল দ্রব্যের বিপুল চাহিদা এই রাজ্যের শিল্পান্নতিতে সাহায্য করেছে।

সর্বোপরি গুজরাট রাজ্যে শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ, উন্নত পরিকাঠামো এবং সরকারের অনুকূল শিল্পনীতি এই রাজ্যের দ্রুত শিল্পোন্নতির অন্যতম প্রধান কারণ।

[maxbutton id=”1″ text=”Download Note PDF” url=”https://sub2unlock.xyz/11c3″ linktitle=”tooltip” window=”new” nofollow=”true”]

Leave a reply