Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণসমূহ বর্ণনা কর।

হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণ

হলদিয়া শিল্পাঞ্চল পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল। সড়ক পথে কলকাতা থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর জেলায় রূপনারায়ণ, হল্‌দি ও হুগলি নদী দিয়ে বেষ্টিত প্রায় ৩২,০০০ হেক্টর অঞ্চল জুড়ে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের মূল বৈশিষ্ট্য হল এই যে, এটি একটি বন্দর-ভিত্তিক শিল্পাঞ্চল। বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা দ্রব্যই হল হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল।

নিম্নলিখিত বিভিন্ন কারণে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বিকাশ ঘটেছে :

(১) বন্দরের নৈকট্য

হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার প্রধান কারণ হল এই শিল্পাঞ্চলের অদূরে হলদিয়া বন্দরের অবস্থান। হলদিয়া বন্দরে বর্তমানে ৮০ হাজার টনের সমুদ্রগামী বড়ো বড় জাহাজ অনায়াসে নোঙর করতে পারে। এই বন্দরের মাধ্যমে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়ামজাত অশোধিত খনিজ তেল, কাঁচামাল প্রভৃতি বিদেশ থেকে আমদানি করা এবং হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করার বিশেষ সুবিধা রয়েছে।

(২) হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের সুবিশাল আয়তন ও জমির সহজলভ্যতা

হুগলি, ও রূপনারায়ণ নদী বেষ্টিত প্রায় সাড়ে তিনশ বর্গ কিলোমিটার স্থান জুড়ে বিস্তৃত
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে কলকারখানা, রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর প্রভৃতি নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় জমির অভাব নেই। এছাড়া নব নির্মিত শিল্পাঞ্চল হওয়ায় জমির দামও হুগলি শিল্পাঞ্চলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম।

(৩) সুলভ সড়ক পরিবহন

হলদিয়া বন্দর থেকে নির্মিত ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কটি (হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়ক) বর্ধিত করে মুম্বই রোডের (৬নং জাতীয় সড়ক) সঙ্গে যুক্ত করার ফলে কৃষি ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ পশ্চাদভূমির সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে কলকাতা-চেন্নাই জাতীয় সড়কের (৫নং জাতীয় সড়ক) দূরত্বও বেশি নয়। এছাড়া সড়ক পথে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে কলকাতার দূরত্বও খুবই কম (মাত্র ১২৫ কিলোমিটার)।

(৪) সুলভ রেল পরিবহন

পাঁশকুড়া থেকে হলদিয়া পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মিত হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের মাধ্যমে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগযোগ সম্ভব হয়েছে।

(৫) সুলভ জল পরিবহন

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলটি হুগলি এবং হলদি নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায়, এই শিল্পাঞ্চল থেকে পণ্যসামগ্রী সহজেই জলপথে আনা নেওয়া করা যায়। হলদি ও হুগলি নদী দুটি এবং পার্শ্ববর্তী দামোদর, রূপনারায়ণ প্রভৃতি নদীগুলোকে আঞ্চলিক শিল্প প্রসারের কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।

(৬) সুলভ শিল্পজাত কাঁচামাল

উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে রেলপথ, জলপথ এবং সড়কপথে যুক্ত হওয়ার জন্য নিকটবর্তী ঝাড় ও ওড়িশা রাজ্য থেকে (ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, সিংভূম) লৌহ-আকরিক ; রানিগঞ্জ-ঝরিয়া অঞ্চল থেকে উৎকৃষ্ট কয়লা ; চুনাপাথর (ওড়িশার গাংপুর ও বীরমিত্রপুর) ; ম্যাঙ্গানীজ (ওড়িশার গাংপুর, বোনাই) সহজলভ্য হওয়ার জন্য তা হলদিয়ার বিভিন্ন শিল্পের উন্নতির সহায়ক হয়েছে। এছাড়া হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সহজেই সমুদ্রপথে বিদেশ থেকে আমদানি করা যাবে।

(৭) সুলভ কৃষিজাত কাঁচামাল

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের চারিদিকে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য (যেমন : ধান, পাট, পান প্রভৃতি) স্থানীয়ভাবে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়া এই শিল্পাঞ্চলের আশপাশে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এই সমস্ত কৃষিজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে এখানে বেশ কিছু কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্রায়তন শিল্প গড়ে উঠেছে, যেমন : চালকল, খাদ্যদ্রব্য ও ফল সংরক্ষণ, মাছ প্রসেসিং শিল্প প্রভৃতি।

(৮) সুলভ শক্তি সম্পদ

(ক) রানিগঞ্জ-ঝরিয়া কয়লাখনি অঞ্চলের নৈকট্য এই অঞ্চলের শক্তিসম্পদের চাহিদা অনেকাংশে মেটাতে সাহায্য করেছে,

(খ) এছাড়া হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে সহজেই তেল আমদানি করে এই অঞ্চলের শক্তিসম্পদের চাহিদা মেটানো যায়,

(গ) এই অঞ্চলের বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা মেটাতে কোলাঘাটে একটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে,

(ঘ) এই অঞ্চলের অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবার জন্য এখানে ২০,০০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি গ্যাসটারবাইন বসানো হয়েছে;

(ঙ) এছাড়া এখানে ডি. ভি. সি-র গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

(৯) সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক

(ক) এই অঞ্চলের নিকটবর্তী ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, এবং স্থানীয় শ্রমিকের প্রাচুর্য রয়েছে, এছাড়া

(খ) কলকাতা মহানগরীর নিকটবর্তী বলে এখানে ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাফম্যান এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাব হয় না।

(১০) উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা

(ক) হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে এই শিল্পাঞ্চলে উৎপাদিত দ্রব্য সহজেই বিদেশে রপ্তানি করা যায়; (খ) ভারতের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র কলকাতার কাছে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত দ্রব্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে; এছাড়া (গ) এই শিল্পাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য নিকটবর্তী ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার এবং পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যের চাহিদা মেটাতে পারে।

(১১) সরকারি আনুকূল্য

এই অঞ্চলের শিল্পবিকাশের জন্য সরকারি আনুকুল্যে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যেমন : রাস্তাঘাট নির্মাণ, পানীয় জল সরবরাহ, স্কুল কলেজ, হাসপাতাল, গৃহ নির্মাণ, ব্যাঙ্ক, বীমা, গুদাম ঘর, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন প্রভৃতি। এছাড়া এই অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের জন্য বেসরকারি শিল্পপতিদের সরকার থেকে উৎসাহ দান করা হচ্ছে।

(১২) অনুকূল ভূমিরূপ ও জলবায়ু 

বঙ্গোপসাগরের প্রায় উপকূলের কাছে হুগলি ও হলদি নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত এই অঞ্চলের ভূমি পলিগঠিত, উর্বর এবং সমতল। এছাড়া এখানকার জলবায়ু স্বচ্ছ, নির্মল এবং সমভাবাপন্ন, যা শিল্প স্থাপনের পক্ষে খুবই উপযুক্ত।

(১৩) মূলধনের যোগান

হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শিল্প স্থাপনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেতৃত্ব দেওয়ায় এখানে মূলধনের অভাব বিশেষ একটা নেই।

[maxbutton id=”1″ text=”Download Note PDF” url=”https://sub2unlock.xyz/27cb” linktitle=”tooltip” window=”new” nofollow=”true”]

Leave a reply