পাটশিল্প হুগলি শিল্পাঞ্চলের প্রধান শিল্প। হুগলি শিল্পাঞ্চলের রিষড়ায় ভারতের প্রথম পাটকল স্থাপিত হয়। ক্রমশ হুগলি নদীর উভয় তীরে ভারতের মোট ১১২টি পাটকলের মধ্যে ১০১টি স্থাপিত হয়। এই পাটকলগুলি প্রধানত হুগলি নদীর উভয় তীরে ত্রিবেণী থেকে বিড়লাপুর পর্যন্ত উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত।
হুগলি শিল্পাঞ্চলের পাট শিল্পের সমস্যা
(১) কাঁচামাল
দেশবিভাগের আগে অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পাট চাষ বিশেষ হত না। এইজন্য দেশ বিভাগের পর কাঁচামালের অভাবে হুগলি শিল্পাঞ্চলের পাটশিল্প এক গভীর সংকটের মধ্যে পড়ে। অবশ্য, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে পাট চাষ লক্ষণীয়ভাবে বাড়িয়ে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান করা গেছে, কিন্তু গুণগত বিচারে বাংলাদেশের পাট অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠ।
(২) প্রতিযোগিতা
বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্যে হুগলি শিল্পাঞ্চলের পাট শিল্প বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। ওইসব দেশের উৎকৃষ্ট পাট এবং আধুনিক পাটকলগুলো অপেক্ষাকৃত কম দামে উন্নততর পাটজাত দ্রব্য রপ্তানিতে সক্ষম। বর্তমানে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে পাট শিল্প গড়ে ওঠায় পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানি বাণিজ্যে ভারতের প্রতিযোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
(৩) কাঁচামালের বেশি দাম
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতীয় কাঁচা পাটের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি।
(৪) নিম্ন উৎপাদন ক্ষমতা
হুগলি শিল্পাঞ্চলের প্রাচীন কলগুলোর নিম্ন উৎপাদন ক্ষমতা পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন খরচ অনেক বাড়িয়ে দেয়।
(৫) বিদ্যুতের অভাব
পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের অভাব অন্যান্য শিল্পের সাথে পাট শিল্পেরও ক্ষতি করেছে।
(৬) পাটের পরিবর্ত সামগ্রীর আবিষ্কার
বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশে পাটের নানারকমের পরিবর্ত-সামগ্রী আবিষ্কৃত হয়েছে। অনেক দেশ আবার (যেমন কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া) পাটের থলি ব্যবহার না করেই জাহাজে যান্ত্রিক উপায়ে গম রপ্তানি করে।
(৭) চূড়ান্ত অবহেলা
পাটকল মালিকদের এই শিল্পের উন্নতির প্রতি চূড়ান্ত অবহেলা এই শিল্পের বর্তমান রুগ্নতার জন্য অনেকাংশে দায়ী।
(৮) অধিক হারে রপ্তানি শুল্ক
পাট রপ্তানি শুল্ক বেশি হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে। ভারতীয় পাটের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ার জন্য ভারতের পাট রপ্তানি মার খাচ্ছে।
(৯) পাটশিল্পের যন্ত্রপাতির মেরামতির অসুবিধা ও আধুনিকীকরণের অভাব
পাট শিল্পে প্রয়োজনীয় পুরোনো যন্ত্রপাতির মেরামতির অসুবিধা এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার না করা। এই সমস্ত কারণে হুগলি শিল্পাঞ্চলের পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা কিছুটা কমেছে।
হুগলি শিল্পাঞ্চলের পাট শিল্পের সমস্যার সমাধান ও সম্ভাবনা
(১) বর্তমানে পাট কলগুলোর যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা করে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এতে উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে; বর্তমানে কিছু কিছু পাটকল তাদের কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি বসিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি করেছে;
(২) বর্তমানে হুগলি শিল্পাঞ্চলে পাট থেকে সুন্দর ও টেকসই অথচ দামে সস্তা কাপেট ও জামাকাপড় তৈরি হচ্ছে;
(৩) অতি সম্প্রতি শিল্পোন্নত দেশগুলোতে বিশেষত খাদ্যদ্রব্য পরিবহনের জন্য পাটের থলির চাহিদা বেড়ে গিয়েছে, কেননা প্লাস্টিক জাতীয় থলিতে অল্পবিস্তর বিষক্রিয়ায় সম্ভাবনা থাকে;
(৪) বিদেশের বাজারে ভারতীয় পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বর্তমানে পাটজাত দ্রব্যের ওপর থেকে রপ্তানি শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছে। বিদেশে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারি সংস্থা “জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া” প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .