Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

ভারতে তাম্র প্রস্তর সংস্কৃতির একটি বিবরণ দাও? কোন কোন অঞ্চলে এই সংস্কৃতির উদ্ভব লক্ষ্য করা যায়?

তাম্র প্রস্তর যুগের সভ্যতাকে ক্যালকলিথিক সভ্যতা বলা হয়। গ্রীক ‘ক্যালক’ (Khalkos বা Chalcolithic Civilization) কথার অর্থ ‘তামা’ আর লিথিক কথার অর্থ হচ্ছে প্রস্তর। এই সভ্যতার অভ্যুদয়ে তামাই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। সেই কারণে মিশর, সুমের সিন্ধু উপত্যকা ও চীনের সর্বত্র আমরা এই যুগের সভ্যতায় প্রথমে তামার ব্যবহার দেখি। তাম্র প্রস্তর যুগে ভারতের বিভিন্ন অংশের অগ্রগতি সমানভাবে হয়নি। প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য সমূহ থেকে জানা যায় এই যুগে মধ্য পশ্চিম ভারতের উপর হরপ্পা সংস্কৃতির প্রভাব ছিল অনেক বেশি। তুলনায় উত্তর ও দক্ষিণের ভারতে এর প্রভাব ছিল অনেক কম, কাথিয়াবাড় উপদ্বীপে প্রথমদিকে হরপ্পা সংস্কৃতির সঙ্গে স্থানীয় নব্যপ্রস্তর সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছিল। কিন্তু কালক্রমে হরপ্পার প্রভাব মুছে গিয়েছিল। কাথিয়াবারের উত্তর পূর্বে অপর একটি সংস্কৃতির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, যা সেই অঞ্চলের নদীর নামানুসারে একে ‘বানাস’ সভ্যতা বলা হয়। এই সভ্যতার উদ্ভবের সময়কাল আনুমানিক খৃঃ পূঃ ২০০০-১৮০০ অব্দের মধ্যে। এখানে পাথরের অস্ত্র পাওয়া যায়নি তবে পাওয়া গেছে প্রচুর তাম্রদ্রব্য।

ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিকরা নাসিক ও নেভাসা প্রভৃতি স্থান উৎখনন করে তাম্রপ্রস্তর যুগের মানুষের জীনবযাত্রা সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মালব ও মহারাষ্ট্রের মানুষদের তখন প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি এবং পশুপালন। হরপ্পার মতো এখানে অনেক পাথরের ‘ফলা’ পাওয়া গেছে। কার্বণ ১৪ পরীক্ষার দ্বারা জানা গেছে এই এলাকায় তাম্র প্রস্তর যুগের সূচনা হয়েছিল খৃঃ পূঃ ১৭০০ অথবা ১৬০০ অব্দের মধ্যে।

মধ্য ভারতে এবং দাক্ষিণভারতে তাম্র প্রস্তর যুগের উদ্ভব সম্পর্কে বিতর্ক আছে। কোন কোন নৃতাত্ত্বিক পারস্যের প্রভাব উল্লেখ করেছেন। তাম্র প্রস্তর সংস্কৃতির চিহ্ন পূর্ব ভারতে পাওয়া গেছে। এই সংস্কৃতির যারা পত্তন করেছিল তারা কৃষক হলেও পশুশিকার, মাছ শিকার তাদের জীবিকা ছিল। তারা তামার জিনিস তৈরী করত। এই সময় উত্তর বিহারের চিরদতে তাম্র প্রস্তর সংস্কৃতির যে নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাকে স্থানীয় “নব্য প্রস্তর সংস্কৃতির” উত্তরসুরী বলে মনে করা হয়। বাংলার এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে তাম্র যুগের সভ্যতার উত্থান ঘটেছিল। ১৯৭৬ খৃঃ মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার অন্তর্গত আজাইবানীর ৪০ ফুট গভীর মাটির তলা থেকে পাওয়া গেছে নানা আকৃতির তাম্র প্রস্তর যুগের নিদর্শন। পুরাতাত্ত্বিক দেবকুমার চক্রবর্তীর মতে এগুলি হরপ্পার পূর্ববর্তী বা সমসাময়িক মানব গোষ্ঠীর দ্বারা নির্মিত। এই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতের নবপোলীয় যুগের ব্যবহৃত দ্রব্য এবং আয়ুধ সমুহ দেখতে পাওয়া গেছে। এছাড়াও কাশ্মীরের বুরঝহোম এর তিরুনেলবেলি জেলায় সবরমতি নদীর উপত্যকায়, গুজরাটের গোদাবরী নদীর নিম্নতর অবহাহিকায়, নর্মদা ও মহানদীর উপত্যকা মহীশূরের ব্রহ্মগিরি এবং পশ্চিম বিহারের নানা স্থানে এই সময়ের বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে।

এই যুগের অস্ত্রগুলি তৈরী হত এর আগ্নেয়শিলাখন্ড দ্বারা। এই অস্ত্রগুলিকে মসৃণ করা হত। অস্ত্রগুলির মধ্যে কুঠার, বাটালি, পাথরের লাঠি, মসৃণকারী পাথর খন্ড বিশেষভাবে স্মরণীয়। নবোপল্লীয় যুগের সবচেয়ে প্রাচীন আয়ুধ আবিষ্কার করেন Pr. H. D. Terra কাশ্মীরের বুরঝহোমে। এই সময়কার মানুষরা গর্তের মধ্যে বাস করত। গর্তে নামার জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করত। ধূসর রঙের মৃতপাত্র ব্যবহার করত। এই যুগের দ্রব্য সম্ভার সমূহ আরো অনেক জায়গায় পাওয়া গেছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর, মধ্য ভারতের পাল্লা, মধ্যপ্রদেশের সাগরজেলা, বিহারের হাজারিবাগ, পাটনা, সাঁওতাল পরগনা ও সিন্ধু অঞ্চলে এবং পশ্চিমবঙ্গে বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, দার্জিলিং নদীয়া জেলা, আসামের গাড়ো ও নাগা পাহাড়, মহীশূরের ব্যাঙ্গালোর ও চীতলাদুর্গজেলা, তামিলনাড়ুর অনন্তপুর, বেড়ালি উত্তর আকট ও তাঞ্জোর জেলায়। প্রসঙ্গত স্মরণীয় মহীশূর এবং অন্ধ্রপ্রদেশের নবোপল্লীয় যুগের লোকেরা কিছুটা সময়ের ব্যবধানে কিছু তামার ব্যবহার শিখেছিল। এর থেকেই এর পরবর্তী যুগ তাম্র প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত। এই যুগের নিদর্শনগুলি পাওয়া গেছে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে বিশেষ করে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, মেদিনীপুর অঞ্চলজুড়ে এক সমৃদ্ধশালী তাম্রযুগের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। সম্প্রতি আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের খ্যাতনামা অধ্যাপক গেগরী পয়সেল বলেছেন যে—‘ভারতের তাম্রযুগের সভ্যতাই পৃথিবীর মধ্যে প্রাচীনতম। কারণ ভারতে প্রচুর পরিমাণে তামা, প্রাকৃতিক কারণেই মাটির উপরে শক্ত খন্ড খন্ড অবস্থায় পাওয়া গেছে। এছাড়াও সেই যুগের প্রাচীন বৃহত্তম খনিগুলি পূর্ব ভারতেই অবস্থিত ছিল। অনেক পরবর্তী সময় তামা আদান-প্রদানের জন্য যে বন্দরটি তৈরী হয়েছিল তার নাম হয়েছিল তাম্রলিপ্ত।

Leave a reply