Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

বায়ুদূষণ কাকে বলে?। বায়ুদূষণের কারণ। ক্ষতিকর প্রভাব। কীভাবে বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করা যায় ?

বায়ুদূষণ

বায়ুদূষণ কাকে বলে ? বাতাসে ধোঁয়া, ধূলি কণা, ক্ষতিকারক গ্যাস ইত্যাদির অবাঞ্ছিত মিশ্রণকে বায়ুদূষণ বলা হয়।

দূষিত স্নিগ্ধ নির্মল বাতাস প্রকৃতির দান যা পৃথিবীতে প্রাণের ধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখেছে। নির্মল বাতাসের সঙ্গে যদি এমন কিছু দূষিত পদার্থ মিশে যায়, যা আমাদের ক্ষতি করে, তাহলে সেই বাতাসকে আমরা দূষিত বাতাস বলি। বাতাসে ধূলি কণা, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেই বাতাস দূষিত বা বিষাক্ত হয়ে পড়ে। তখন বায়ু তার নিজস্ব নির্মল স্নিগ্ধ ধর্ম হারিয়ে ফেললে পরিবেশের ওপরও তার প্রভাব পড়ে। বায়ুর এই বিশেষ পরিস্থিতিকেই বায়ুদূষণ বলা হয়।

বায়ুদূষণের কারণ

নানান কারণে বায়ু দূষিত হয়। তবে সভ্যতার অগ্রগতি ও শিল্পনির্ভর সভ্যতার বিকাশই হল বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। এই দূষণ মানুষেরই সৃষ্টি। তবে নানান প্রাকৃতিক কারণেও বায়ুদূষণ হতে পারে। বায়ুদূষণের কারণগুলোকে মোটামুটি প্রধান দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা : (১) প্রাকৃতিক কারণে বায়ুদূষণ এবং (২) মানুষের সৃষ্টি করা দূষণ।

■ [ক] প্রাকৃতিক কারণে বায়ুদূষণ

(১) মাটি

মাটির ধুলিকণা, মাটিতে থাকা ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস বায়ুতে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়।

(২) সমুদ্র

সমুদ্রের জলে প্রচুর পরিমাণে নানারকমের লবণ কণা থাকে। এই কণা বায়ুমণ্ডলে মিশে গিয়ে বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে।

(৩) আগ্নেয়গিরি 

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত ছাই, খনিজ কণা, ধোঁয়া ও অন্যান্য গ্যাস বায়ুকে দুষিত করে।

(৪) মহাজাগতিক বস্তু

পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা উল্কা, ধূমকেতু ও গ্রহাণু থেকে নিক্ষিপ্ত ধূলি কণা, মহাজাগতিক রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে পৃথিবীর বায়ুকে দূষিত করে।

(৫) উদ্ভিদ

বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে উদ্ভিদের যখন ফুল ফোটে, ফুলের পরাগ রেণু তখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বায়ুদূষণ ঘটায়। এছাড়া বনাঞ্চলের পচনশীল উদ্ভিদ সৃষ্ট মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস বায়ুতে মিশে বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে। আবার দাবানলের ফলে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যাপক বায়ুদূষণ ঘটায়।

■ [খ] মানুষের সৃষ্টি করা বায়ু দূষণ 

(১) বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থ

শিল্প-কলকারখানা, ঘরের রান্নার কাজে ব্যবহৃত কাঠ-কয়লা প্রভৃতির ধোঁয়া, যানবাহনের ইঞ্জিনে জ্বালানির দহনে উৎপন্ন কার্বন-মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড ইত্যাদি বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বায়ুদূষণের সৃষ্টি হয়।

(২) কঠিন পদার্থ ও ক্ষুদ্র কণা

কলকারখানার নানাধরনের বর্জ্য পদার্থ, খনি থেকে উৎপন্ন কঠিন পদার্থের ক্ষুদ্র কণা বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।

(৩) তেজস্ক্রিয় পদার্থ

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক জ্বালানি এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় পদার্স পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দুষিত করে।

(৪) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস এবং উড়ন্ত ছাই বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে। বায়ুদূষণের ফলে প্রাণী, মানুষ, উদ্ভিদ এবং আমাদের বিভিন্ন সম্পদ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব

বায়ুদূষণ দুভাবে হয়, যথা : (১) প্রত্যক্ষ প্রভাব এবং (২) পরোক্ষ প্রভাব।

প্রত্যক্ষ প্রভাব

বায়ু দূষিত হলে বায়ুমণ্ডলের ওপর নির্ভরশীল উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের ওপর তার প্রভাব পড়ে। জীবকুলের শরীরে সেই প্রভাব যেমন তাৎক্ষণিক তেমনি আবার দীর্ঘস্থায়ী। দূষিত বায়ু নানাধরনের রোগ ব্যাধির উদ্ভব ঘটায়। দীর্ঘকাল দূষণের মধ্যে থাকলে মানুষের হৃদরোগ এবং ফুসফুসের রোগ ও ক্যানসার হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কেরও নানারকম বিকৃতি দেখা দিতে পারে। চর্মের ওপরও বায়ুদূষণের প্রভাব যথেষ্ট। বায়ুদূষণ চোখের ক্ষতি করতে পারে।

পরোক্ষ প্রভাব

উদ্ভিদজগৎ বায়ুদূষণের ফলে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন : (i) গাছের পাতায় সবুজ রং চলে গিয়ে পাতা বর্ণহীন হয়ে পড়ে এবং সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াতে বিঘ্ন ঘটে। সবুজ গাছের এই সমস্যাকে ক্লোরোসিস বলে। (ii) বায়ুদূষণের ফলে গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। এবং অকালে ঝরে পড়ে। (iii) বায়ুদূষণের ফলে বহু সময় উদ্ভিদ নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এর ফলে কৃষি উৎপাদন কমে যায়।

বায়ুদূষণ প্রতিরোধের উপায় 

(১) কলকারখানায় যেসব জ্বালানিতে ধোঁয়া কম হয় সেইসব জ্বালানি ব্যবহার করা দরকার। কয়লা, ডিজেল, প্রভৃতি ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে তার বদলে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

(২) বিভিন্ন কল-কারখানা ইত্যাদিতে বিভিন্ন বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিষাক্ত গ্যাসগুলিকে দূর করা অথবা পরিবেশে গিয়ে তারা যাতে মিশতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

(৩) বিশেষ পরিবহন আইনের মাধ্যমে পুরনো এবং বেশি ধোঁয়া সৃষ্টি করে এমন গাড়িগুলিকে বাতিল হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। গাড়িতে ব্যবহৃত তেল থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া পরিশোধনযন্ত্র বসিয়ে বিষাক্ত গ্যাস কমানো যেতে পারে।

(8) কয়লা, কাঠ ইত্যাদি ধোঁয়া সৃষ্টি করে এমন জ্বালানি ব্যবহারের পরিবর্তে গ্যাস এবং ইলেকট্রিক হিটার ব্যবহার করলে দূষণ অনেক কমে যায়।

(৫) বৃক্ষরোপণ করে বায়ুদূষণ কিছুটা কমানো যায়।

Leave a reply