Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা কর।

গৌতম বুদ্ধের জীবন

খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতে গৌতমবুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জাতক সূত্তনিকায়, মহাবংশ, দীপবংশ, ললিত বিস্তার বুদ্ধচরিত প্রভৃতি গ্রন্থ ও অশোকের লুম্বিনী স্তম্ভলিপি থেকে বুদ্ধের জীবন সম্পর্কে জানা যায়।

হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তুর শাক্যবংশীয় রাজবংশে আনুমানিক (৫৬৭ খ্রীঃপূর্বাব্দে) জন্মগ্রহণ করেন। এই তথ্য অশোকের শিলালিপিতে সমর্থিত হয়েছে। সূত্তনিপাত অনুযায়ী শাক্য ইক্ষাকু বংশীয় ক্ষত্রিয়কুল জাত ছিলেন। জন্মকালে মাতা মায়াদেবীর মৃত্যু হলে মাতৃস্বসা প্রজাপতি গৌতমী দ্বারা লালিত হয়েছিলেন। বুদ্ধের পূর্ব নাম সিদ্ধার্থ। ১৬ বছর বয়েসে যশোধরা নামে এক রাজকুমারীর সাথে বিবাহ হয়। কিন্তু সংসারের ভোগ বিলাসের প্রতি তিনি শৈশব হতেই উদাসীন ছিলেন। জীবনের দুঃখকষ্ট জরা, মৃত্যু, তাঁর মনে বৈরাগ্যের সঞ্চার করে। বৌদ্ধ ঐতিহ্য অনুসারে চারটি দৃশ্য তাঁর অন্তরে গভীর বেদনার সৃষ্টি করেছিল এবং সন্ন্যাসীর প্রশাস্ত মূর্তি দেখে সিদ্ধার্থ উন্নত জীবনের সন্ধানের জন্য অধীর হয়ে উঠেন এবং ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। এই ঘটনাকে ‘মহাভিনিষ্ক্ৰমন’ নামে পরিচিত করা হয়।

গৃহত্যাগের পর প্রথমে গৌতম বুদ্ধ বৈশালীর শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত আরাড় কালাম এর কাছে শাস্ত্র অনুশীলন করেন। তারপর রাজগৃহের রুদ্রক রামপুত্রের নিকট যোগসাধনার শিক্ষালাভ করেন। অবশেষে গয়ার কাছে উরুবিল্ব গ্রামে নৈরঞ্জনা নদীর (ফল্গু) তীরে একে অশ্বত্থ গাছের (পিপ্‌প্ল) নীচে নদী থেকে স্নান সেরে এক ব্যবসায়ীর কন্যা সুজাতার দেওয়া পরমান্ন খেয়ে গভীর ধ্যানে মগ্ন হন। তার ঠিক আগে গৌতম বলেছিলেন ইহাসনে শুষ্যতু মে শরীরং’। অর্থাৎ এই আসনেই তাঁর শরীর শেষ হবে, যদি না দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তির সঠিক পথের সন্ধান পান। কিন্তু এক মাস (মতান্তরে ৪৯ দিন) টানা একাসনে ধ্যানমগ্ন থাকার পর শেষপর্যন্ত গৌতম তাঁর প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান অর্থাৎ দিব্যজ্ঞান (বোধিজ্ঞান) লাভ করে তিনি বুদ্ধ বা জ্ঞানী হন। এইসময় থেকে তিনি ‘‘তথাগত’ বুদ্ধ নামে পরিচিত লাভ করেন। আর যে অশ্বত্থ গাছের নীচে বসে বুদ্ধ সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তা ‘বোধিবৃক্ষ’ নামে পরিচিত এবং ঐ জায়গাটি ‘বুদ্ধগয়া’ নামে চিহ্নিত হয়ে আছে।

ধর্মচক্র প্রবর্তন

পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে দিব্যজ্ঞানী ভগবান বুদ্ধ তাঁর বুদ্ধত্ব লাভের উপলব্ধির কথা প্রকাশ করবেন কিনা সংশয়ে ছিলেন। পরে ঠিক করলেন মানবসমাজের কল্যাণের জন্য তাঁর আধ্যাত্মিক উপলব্ধির কথা জানানো প্রয়োজন। তাই বারাণসীর ঋষিপত্তনের (বর্তমান নাম সারনাথ) মৃগদাভে তাঁর প্রথম পাঁচজন অনুরাগী শিষ্যকে তাঁর ধর্মমত প্রচার করেন। এঁরা হলেন কৌণ্ডিণ্য, অশ্বজিৎ, বাষ্প, মহানাম ও ভদ্রিক। এই পাঁচ শিষ্য ‘পঞ্চভিক্ষু’ নামে পরিচিত। আর বুদ্ধের এই প্রথম ধর্মপ্রচারের ঘটনাকে বলা হয় ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন’।

মগধে ফিরে রাজা বিম্বিসার, সারিপুত্ত, মৌদগল্লায়নকে তাঁর ধর্মে দীক্ষিত করেন। কোশলরাজ প্রসেনজিৎ ও তাঁর স্ত্রী মল্লিকা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। নিজ জন্মভূমি কপিলাবস্তুতে ফিরে বুদ্ধ তাঁর স্ত্রী (গোপা) পুত্র (রাহুল) ও পিতাকে (শুদ্ধোদন) নিজধর্মে দীক্ষিত করেন।

তারপর একে একে অনাথপিণ্ডক (ব্যবসায়ী), আনন্দ ও উপালি (শূদ্র), অঙ্গুলিমাল (ব্যবসায়ী), সারিপুত্ত (ব্রাহ্মণ), আম্রপালি (পতিতা) প্রভৃতি সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধের শিষ্যত্ব লাভ করেন। তিনি দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে ধর্ম প্রচার করেছিলেন। তার মধ্যে একুশ বছর তিনি কোশল রাজ্যের ‘জেতবন’ বিহার থেকে ধর্মপ্রচার করেছিলেন। এইসময় তাঁর এক শিষ্য মহাকচ্ছায়নকে অবন্তী রাজ্যে ধর্মপ্রচারের জন্য তিনি পাঠিয়েছিলেন। বর্ষার চার মাস বাদ দিয়ে বাকি আট মাস পায়ে হেঁটে তিনি ধর্মপ্রচার করেছিলেন। প্রতিদিন তিনি ২০-৩০ কিলোমিটার হাঁটতে পারতেন। এইভাবে বহুদিন ধর্মপ্রচারের পরা ৪৮০ খ্রিঃ পূঃ ৮০ বছর বয়সে রাজধানী কুশিগরে (বর্তমান উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার কাশিয়াতে) তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে। পুণ্য জন্মলগ্নের ন্যায় ভগবান বুদ্ধ দেহরক্ষা করেছিলেন আর এক বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে। বুদ্ধের এই দেহত্যাগের ঘটনাটি ‘মহাপরিনির্বাণ’ নামেই পরিচিত।

Leave a reply