Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস লেখ।

পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস

ভূমিকা

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষপর্বে ব্রিটিশ সরকারের সীমাহীন অত্যাচার, শোষণ এবং সেক্ষেত্রে জাতীয় কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদন নীতির বিরুদ্ধে বিপ্লবী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এই আন্দোলন শাসক চক্ষুর অন্তরালে গোপন পথে গুপ্ত সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হতেথাকে। মহারাষ্ট্রে এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটলেও পরবর্তী দিনে পাঞ্জাবে এই আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে।

(১) সাহারানপুরের গুপ্ত সমিতি

১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের অন্তর্গত সাহারানপুরে প্রবাসী বাঙালি জে.এম. চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর সহযোগী যুবকগণ প্রথমে একটি গোপন বৈপ্লবিক সমিতি গঠন করেন। এরপর তাঁদের বিপ্লবের ঘাঁটি উত্তর প্রদেশের বুড়কীতে নিয়ে আসা হয়। বুড়কী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অনেক ছাত্র এই গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেয়। পরবর্তী সময়ে লালা হরদয়াল, অজিত সিংহ ও সুফী আম্বাপ্রসাদ এই সমিতিতে যোগ দিলে বাংলা ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়।

(২) হরদয়াল, আম্বাপ্রসাদ ও অজিত সিংহের কার্যকলাপ

পরবর্তী দিনে হরদয়াল বিপ্লবীদের নেতৃত্বে গ্রহণ করলে পাঞ্জাবের সর্বত্র সন্ত্রাসবাদের আদর্শ ছড়িয়ে পড়ে। পাঞ্জাবের সাধারণ মানুষকে বিপ্লবী চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত করার জন্য অজিত সিংহ ও আম্বাপ্রসাদ ‘ঝন্দ্বের শিয়াল ও ভারতমাতা’ নামক রাজদ্রোহ মূলক পত্র পত্রিকা প্রকাশ করেন। অজিত সিংহ হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করে বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার এড়াতে তিনি পাঞ্জাব ছেড়ে পারস্যে চলে যেতে বাধ্য হন। পরবর্তী সময়ে হরদয়াল ইংরেজদের বিরুদ্ধে ‘বয়কট’ ও প্রত্যক্ষ সংগ্রামের আহ্বান দিয়েছিলেন। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে হরদয়াল ভারত ছেড়ে বিদেশে চলে গেলে,রাসবিহারী বসু পাঞ্জাব তথা উত্তর ভারতে বিপ্লবীদের সংগঠিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

(৩) আর্য সমাজের ভূমিকা

পাঞ্জাবে বিপ্লবী আন্দোলনে ‘আর্য সমাজ’ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবে বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য যাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে অনেকেই আর্যসমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

(৪) রাসবিহারী বসুর ভূমিকা

উত্তর ভারতে বিপ্লবী তৎপরতার সঙ্গে রাসবিহারী বসুর নাম বিশেষভাবে জড়িত। তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহের আদর্শ প্রচার করে স্বশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া। তিনি উত্তর-ভারত ও পাঞ্জাবকে তাঁর কর্মকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে বড়লাট হার্ডিঞ্জ শোভাযাত্রায় বের হলে রাসবিহারীর সহকর্মী বসন্ত বিশ্বাস বড়লাটের ওপর বোমা ছোঁড়েন। এই কাজের জন্য পুলিশি রাসিবিহারীকে সন্দেহ করলে তিনি ছদ্মবেশে দেরাদুন ত্যাগ করেন। এই সময় আমেরিকায় স্থাপিত গদর পার্টির পরিচালনায় বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত বহু পাঞ্জাবি ভারতে আসেন (১৯১৪ খ্রিঃ)।

(৫) গদর পার্টির ভূমিকা

‘গদর’ শব্দের অর্থ বিপ্লবী। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে যে কোনো উপায় ভারতের মুক্তিসাধন করাই ছিল গদর পার্টির লক্ষ্য। বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও শচীন সান্যাল গদরপন্থী পাঞ্জাবিদের সঙ্গে হাত মেলান।

(৬) গণ অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা

গদর পার্টির কার্যকলাপে উৎসাহিত হয়ে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। স্থির হয় ১৯১৫ সালে পাঞ্জাবসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন সেনা শিবিরের ভারতীয় সেনারা একযোগে ব্রিটিশ সৈন্যদের আক্রমন করবে। কিন্তু কৃপাল সিংহের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে গোটা পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়ে যায়।

(৭) কোমাগতামারু ও তোসামারুর ঘটনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে কোমাগাতামারু নামে জাপানি জাহাজে করে প্রায় চারশত শিখ কানাডা যাত্রা করে। কানাডায় অবতরণ করতে না দেওয়ায় জাহাজটি কলকাতার কাছে বজবজে অবতরণ করে। তারপর শুরু হয় প্রকাশ্য সংঘর্ষ এবং এতে ১৮ জন শিখ নিহত এবং ৩২০০ জনকে বন্দি করে পাঞ্জাবে পাঠানো হয়।

শুধুমাত্র কোমাগাতামুরুর ঘটনাই নয়, ‘তোসামারু’ নামে একটি জাপানি জাহাজ কলকাতা বন্দরে এসে পৌঁছালে, তাদের মধ্যে ১০০ জনকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে পাঞ্জাবে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘমেয়দী কারদণ্ড দেওয়া হয়, বাকিরা পালিয়ে গিয়ে বিপ্লবী দলে যোগাদান করে।

(৮) লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা

১৯২৮ সালে ‘হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’ নামে বিপ্লবী দলের নেতা ভগৎ সিং (১৯০৭-৯৩১) লাহোরের সহকারী পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন। কয়েক মাস পর ভগৎ সিং ও তাঁর সহকারী বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লিতে কেন্দ্রীয় আইন-সভা কক্ষে বোমা নিক্ষেপ করেন (এপ্রিল, ১৯২৯ খ্রিঃ) । এই বোমা বিস্ফোরণের পর পুলিশ পাঞ্জাবের লাহোরে বোমা তৈরির একটি গোপন কেন্দ্র আবিষ্কার করে, এর ফলে বহু বিপ্লবী ধরা পড়ে যান। এরপর শুরু হয় বিখ্যাত লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা। চন্দ্রশেখর আজাদ (১৯০৬-১৯৩১) পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে আত্মগোপন করেন এবং অবশেষে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যান (ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ খ্রিঃ)

(৯) পাঞ্জাবে অন্যান্য বিপ্লবী প্রচেষ্টা

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার পরবর্তী সময়ে পাঞ্জাবের খালসা কলেজের বিপ্লবী ছাত্র সংগঠন এবং আনন্দ মণ্ডল নামে অপর একটি সংস্থা কিছুটা বিপ্লবী তৎপরতা দেখালেও অমৃতসরের খাজনা কলেজের ছাত্র হরকিষেণের মৃত্যুদণ্ড হলে পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের আপাতভাবে পরিসমাপ্তি ঘটে।

মূল্যায়ন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলেও ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি, অত্যাচার, বিশ্বাঘাতকতা, গান্ধিজির নেতৃত্বে অহিংস আন্দোলনের সাফল্য ও জনপ্রিয়তা প্রভৃতি কারণে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। নানান ত্রুটি বিচ্যুতি সত্ত্বেও পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের নিম্নলিখিত অবদানকে অস্বীকার করা যায় না-

(১) পাঞ্জাবের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন কংগ্রেসের নরমপন্থী আবেদন-

(২) বিপ্লবীদের স্বদেশ প্রেম ও আত্মত্যাগ সমগ্র দেশবাসীর মনে উদ্দীপনার সঞ্চার করে।

(৩) বিপ্লবীদের কার্যকলাপ ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পাঞ্জাবের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অনুকরণেই বাংলায় সন্ত্রাসবাদী অন্দোলন গড়ে ওঠে। এই বিপ্লবী চেতনা পরবর্তীকালে বামপন্থী অন্দোলনের জন্ম দেয়।

Leave a reply