Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

জৈনধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

জৈনধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য

খ্রীষ্টীয় পঞ্চম ষষ্ঠ শতক নাগাদ গুজরাতের বলভী নামক স্থানে শ্বেতাস্বর জৈনরা দেবধির সভা পতিত্বে একটি সম্মেলন আহ্বান করে শাস্ত্রগ্রন্থ সঙ্কলনের কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। অর্ধমা গধী প্রাকৃত ভাষায় জৈন শাস্ত্র সঙ্কলিত হয়েছিল। শ্বেতাম্বর জৈনদের মতে “১২টি অঙ্গ’ গ্রন্থই সবচেয়ে প্রাচীন। কথিত আছে জৈনদের হারিয়ে যাওয়া ১৪টি আদিগ্রন্থ যেগুলি “পূর্ব” নামে পরিচিত ছিল। সেই গুলির সারমর্ম এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ ছিল। এছাড়াও “উপাঙ্গ” নামে আরো ১২টি গ্রন্থ আছে। এই দুইটি গ্রন্থ ছাড়াও প্রকীর্ণ, ছেদসূত্র, মূলসূত্র নামে আরো তিনটি গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। অন্যদিকে দিগম্বর জৈনগণ এইসব গ্রন্থকে প্রামাণ্য বলে মনে করেন না। তাঁদের রচিত গ্রন্থগুলি হল প্রথমানুযোগ, করনানুযোগ দ্রব্যানুযোগ এবং চরণানুযোগ। এছাড়াও জৈন শাস্ত্র সমূহের অনেক টীকা ভাষ্য আছে।

পার্শ্বনাথ পুরাতন যুগের প্রাক বিভক্ত জীবন চর্চার প্রচারক ছিলেন। তিনি ৪টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন (১) কারো জীবন নাশ না করা (২) মিথ্যাভাষণ পরিহার করা (৩) অপহরণ না করা (৪) ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারী না হওয়া। এই গুলিকে একত্রে বলা হয় চতুৰ্যামব্রত।

মহাবীর মানবজীবনের দুঃখময় দিকটিকেই বড় করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন—এই জীবিতের জগৎ সংশ্লিষ্ট, দুঃখময়, যেখানে শিক্ষাদান দুঃসাধ্যে, বিচারবুদ্ধিশূন্য। এই। দুঃখময় জগতে অজ্ঞান ব্যক্তিরা বিভিন্ন কাজের দ্বারা দুঃখ ভোগ করছে ও দুঃখের সৃষ্টি করে চলছে। তিনি মানবমুক্তির জন্য “পঞ্চব্রত” কথা উল্লেখ করেছেন। যথা অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহ। গৃহীদের এইগুলি গুরুত্বের সাথে পালন করতে বলেছেন।

জৈনধর্মে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না। জৈন পণ্ডিত গুণরত্ন দেখিয়েছেন “বুদ্ধিমান কারক” ও কার্যের প্রকৃতি সম্পন্নতার মধ্যে কোন ব্যাপ্তি বা সাধারণ সহগামিতা নেই, এবং যুক্তি রীতি অনুযায়ী তা স্থাপন করা অসম্ভব। জৈনমতে প্রতিটি বস্তুরই অনন্ত চরিত্র আছে, ভাবাত্মক এবং অভাবাত্মক। তাঁরা আরো বিশ্বাস করেন বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য দিয়েই জগৎ তৈরী। জৈন মতে “এই দ্রব্যগুলির যা গুণ বা নিত্যধর্ম তা অপরিবর্তনীয় এবং সেই হিসাবে জগৎ চিরন্তর।” এবং এই দ্রব্যগুলি যা পর্যায় তা পরিবর্তনশীল। এই কারণে জগৎ চিরন্তন হওয়া সত্ত্বেও পরিবর্তনশীল। এই দ্রব্যসমূহ আবার দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত (১) কায়বিশিষ্ট (অস্তিকায়) (২) কায়হীন।

জৈন ধর্মের প্রভাব 

প্রথমতঃ

সততা ও নিষ্ঠাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা বলা হয়েছে জৈন ধর্মে। ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ী মহল ও ধর্মমতকে স্বাগত জানায়।

দ্বিতীয়তঃ

কঠোর অহিংস নীতি অনুসরণের নির্দেশ থাকায় কৃষককুলের মধ্যে ধর্ম তেমন সম্প্রসারিত হতে পারেনি। কেন না ভূমিকর্ষণের সময় কীট পতঙ্গের প্রাণনাশ অনিবার্য ছিল।

তৃতীয়তঃ

জৈন ধর্ম ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরোধী ছিল তাই বহু মানুষের মধ্যে এই ধর্ম তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

চতুর্থতঃ

জৈন ধর্মে অনুপ্রাণিত ভারতের পশ্চিম উপকূলের বণিকরা সামুদ্রিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন কর; এমন কী নগর সংস্কৃতির উন্মেষের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।

পঞ্চমতঃ

প্রাকৃত ও সংস্কৃত ভাষায় জৈন সন্ন্যাসীর বহু টীকা ভাষ্য রচনা করায় ওই দু’টি ভাষা বিশেষ প্রসার লাভ করে।

ষষ্ঠতঃ

জৈনরা তামিল ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছিল।

সপ্তমতঃ

মাউন্ট আবুতে তৈরি জৈন মন্দির শিল্পের ক্ষেত্রে জৈনদের অনস্বীকার্য অবদানের নিদর্শন বলা যেতে পারে।

অষ্টমতঃ

জৈনধর্মের মূল নীতিগুলি হল, ত্রিরত্ন, চতুর্যাম এবং পঞ্চমহাব্রত।

পরিশেষে বলা যায় জৈনধর্ম নয়টি মূল তত্ত্বকে স্বীকার করে। যথা জীব, অজীব, পুণ্য, পাপ আশ্রব, সংবর, বন্ধ, নির্জরা ও মোক্ষ। ভারতে জৈনধর্মই একমাত্র ধর্ম যার মধ্যে ব্যবহারিক বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছিল। উদ্ভিদবিদ্যা, জীববিদ্যা শারীরতত্ত্ব, জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে জৈনধর্মের অবদান অপরিসীম।

Leave a reply