Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

শশাঙ্কের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

শশাঙ্কের কৃতিত্ব

শশাঙ্কের প্রথম পরিচয় “মহাসামন্ত” রূপে। কার মহাসামন্ত তিনি ছিলেন নিঃসংশয়ে বলা কঠিন। তবে, মনে হয় মহাসেন গুপ্ত বা তৎপরবর্তী মালবাধিপতি দেবগুপ্ত তার অধিরাজ ছিলেন। রাজ্যবর্ধন কর্তৃক দেবগুপ্তের পরাজয়ের পর শশাঙ্ক নিজেই দেবগুপ্তের দায়িত্ব ও কর্তব্যভার (মৌখরি পুষ্যভূতি মৈত্রীবন্ধনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম) স্কন্ধে তুলে নিয়েছিলেন। তাঁর থেকে মনে হয়, শশাঙ্ক মগধ মালবাধিপতি গুপ্ত রাজাদের মহাসামন্ত ছিলেন। যাই হোক, এ তথ্য নিঃসংশয়ে যে, ৬০৬-৭ খ্রীষ্টাব্দের আগে কোন সময়ে শশাঙ্ক গৌড়ের স্বাধীন নরপতিরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং কর্ণসুবর্ণে (মুর্শিদাবাদ জেলার রাঙামাটির নিকট কানসোনা) নিজের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। মৌখরীদের সঙ্গে গুপ্তদের সংগ্রাম কয়েকপুরুষ ধরেই চলে আসছিল। মনে হয়, তা গৌড় ও মগধের লড়াই। দুই পুরুষ ধরে সংগ্রাম চলার পর বোধ হয়, মহাসেনগুপ্তের পিতা নিজের শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিজ কন্যা মহাসেন গুপ্তকে পুষ্যভূতিরাজ প্রভাকর বর্ধনের মহিষীরূপে অর্পণ করেন। এই মৈত্রীবন্ধনের ভয়ে কিছুদিন মৌখরী বিক্রম শান্ত ছিলেন। কিন্তু অবন্তীবর্মার পুত্র গ্রহবর্মা যমন মৌখরী বংশের রাজা, তখন মালবের সিংহাসনে রাজাদের গুপ্তরা ছিলেন উপবিষ্ট। মগধ ইতিমধ্যেই গুপ্তদের হস্তচ্যুত হয়ে পড়েছিল। মালবরাজ মহাসেনগুপ্তের দুই পুত্র, কুমার ও মাধব, প্রভাকরবর্ধনের গৃহে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং মালবের অধিপতি হয়েছিলেন দেবগুপ্ত। দেবগুপ্তের মৈত্রী বন্ধন গৌড়াধিপ শশাঙ্কের সঙ্গে, যে শশাঙ্ক মঞ্জুশীমূলকল্প গ্রন্থের মতে ইতিমধ্যেই বারানসী পর্যন্ত অধিপত্য স্থাপন করে ফেলেছিলেন।

অন্যদিকে গ্রহবর্মাও ইতিমধ্যে প্রভাকর বর্ধনের কন্যা এবং রাজ্যবর্ধন হর্ষবর্ধনের ভগিনী রাজশ্রীকে বিবাহ করেন। সেই সঙ্গে তাঁর মৈত্রীবন্ধন হয় পুষ্যভূতি বংশের সঙ্গে। বৃদ্ধ প্রভাকর বর্ধনের অসুস্থতা ও মৃত্যুর সুযোগে মালবরাজ দেবগুপ্ত মৌখরীরাজ গ্রহবর্মাকে আক্রমণ ও হত্যা করে রানী রাজশ্রীকে কনৌজে কারারুদ্ধ করেন। “হর্ষচরিত” থেকে জানা যায়, প্রভাকর বর্ধনের মৃত্যু এবং শেষের দুটি ঘটনা একই দিনে হয়েছিল। তারপর, দেবগুপ্ত যখন স্থানেশ্বর দিকে অগ্রসরমান শশাঙ্ক তখন দেবগুপ্তের সহায়তার জন্য কনৌজের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন, কিন্তু দেবগুপ্তের সৈন্যের সাথে যুক্ত হওয়ার আগেই সদ্য সিংহাসনারূঢ় রাজ্যবর্ধন সসৈন্যের সাথে দেবগুপ্তের সম্মুখীন হয়ে, পরাজিত এবং নিহত করেন। তারপর হয়ত তার ভগিনীকে কারামুক্ত করবার জন্য কনৌজের দিকে অগ্রসর হন, কিন্তু উদ্দেশ্য সিদ্ধির আগেই তাকে শশাঙ্কের সম্মুখীন হতে হয় এবং তিনি তার হস্তে নিহতও হন।

বানভট্ট ও হিউয়েন সাঙ বলেছেন; শশাঙ্ক রাজ্যবর্ধনকে বিশ্বাসঘাতক বলে হত্যা করেছিলেন, অন্যদিকে হর্ষবর্ধনের লিপির সাক্ষ্য এই যে, রাজ্যবর্ধনের সত্যানুরোধে তার শত্রুর শিবিরে গিয়েছিলেন এবং সেইখানেই তনুত্যাগ করেছিলেন। মঞ্জুশ্রী মূলকল্পের গ্রন্থাকারের মতে, রাজ্যবর্ধন নগ্নজাতির কোন রাজ আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন।

বাণভট্ট ও হিউয়েন সাঙের মত

বাণভট্ট ও হিউয়েন সাঙ দু-জনেই শশাঙ্কের প্রতি কিছুটা অপ্রসন্ন ছিলেন। তা ছাড়া দুইজনই হর্ষবর্ধনের কৃপা-পাত্র ছিলেন। কাজেই তাদের সাক্ষ্য কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য বলা কঠিন। যাই হোক, এই বিতর্ক কতটা অবান্তর, কারণ শশাঙ্কের ব্যক্তি চরিত্রগত এই তথ্যের সঙ্গে জনসাধারণের ইতিহাস যোগ প্রায় অনুপস্থিত। রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর শশাঙ্ক স্থানেশ্বরের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন বলে মনে হয় না, কারণ মৌখরী রাজ বংশের পরাভবের আর কিছু ছিল না। হর্ষবর্ধন রাজসিংহাসনে আরোহন করেই শশাঙ্কের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। পথে কামরূপরাজ ভাস্কর বর্মার সঙ্গে আলাপ ও মৈত্রীবন্ধন, সংবাদ বাহক ভন্ডীর মুখ থেকে রাজ্যবর্ধনের হত্যার বিস্তৃত তথ্য বিবরণ এবং বিন্ধ্যপর্বতে রাজ্যশ্রীর পলায়ণ বৃত্তান্ত প্রাপ্তি, সসৈন্যে ভন্ডীকে গৌড়রাজ্যের বিরুদ্ধে পাঠিয়ে নিজে রাজ্যশ্রী উদ্ধারে গমন ও অগ্নিগর্ভের ঝাপ দেওয়ার আগেই উদ্ধার এবং তারপর গঙ্গাতীরে ভন্ডীচালিত সৈন্যের সঙ্গে পুর্ণমিলন ইত্যাদি বাণভট্টের কৃপায় আজ অতি সুবিদিত ঐতিহাসিক তথ্য। কিন্তু তারপর শশাঙ্কের সঙ্গে রাজা হর্ষবর্ধনের সম্মুখ যুদ্ধ নিয়ে বানভট্ট নীরব ছিলেন।

কামরূপ রাজ ভাস্করবর্মা ও রাজা হর্ষবর্ধনের সম্মিলিত শত্রুতা সত্ত্বেও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রাজা শশাঙ্ক যে সমগ্র গৌড় দেশ, মগধ, বুদ্ধগয়া অঞ্চল এবং উৎকল ও কঙ্গোঁদ দেশের অধিপতি ছিলেন তার অনেক প্রমাণ আছে। ৬৩৭-৩৮ খ্রীষ্টাব্দে কিছু পূর্বে শশাঙ্কের মৃত্যু হয়েছিল। এই সময় চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ভারতে আসেন এবং মগধ ভ্রমণ কালে তিনি জ্ঞাত হয়েছিলেন যে শশাঙ্ক বুদ্ধ গয়ার বোধিদ্রুম বৃক্ষটি ছেদন করেছেন। তার ফলে নাকি শশাঙ্ক কুষ্ঠ জাতীর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থেও এই গল্পের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এই কাহিনী কতদূর সত্য সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।

কৃতিত্ব

শশাঙ্ক কীর্তিমান নরপতি ছিলেন। তাঁকে জাতীয় নায়ক বা বীর বলা যেতে পারে কিনা সে সম্বন্ধে গভীর সন্দেহ থাকলেও তিনি যে অজ্ঞাতকূলশীল মহাসামন্তরূপে জীবন আরম্ভ করে তৎকালে উত্তর ভারতের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রগুলির সমবেত শক্তির (কনৌজ থানেশ্বর কামরূপ মৈত্রী) বিরুদ্ধে সার্থক সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে, শেষ পর্যন্ত পৃথক স্বাধীন রাজারূপে বিশাল রাজ্যের অধিকারী হয়েছিলেন—এটাই ঐতিহাসিক প্রশংসার দাবী রাখে। “সকলোত্তর পথনাথ হর্ষবর্ধন” যদি কেহ সার্থক প্রতিরোধ প্রদান করে থাকেন তবে রাজা শশাঙ্ক এবং চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীই তা করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে উত্তর ভারতের রাষ্ট্রীয় রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ করেছিলেন। বাণভট্ট, হিউয়েন সাঙ যদি তাঁর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে থাকেন তবে তাঁর মূলে ছিল ঈর্ষাবোধ। কারণ এরা দুইজন ছিলেন হর্ষবর্ধনের পৃষ্ঠপোষক ও সভাকবি।

Leave a reply