Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

গৌতম বুদ্ধের মৌলিক শিক্ষাগুলি কি?

গৌতম বুদ্ধের মৌলিক শিক্ষা

বৌদ্ধধর্মের মূল বিষয় হল পরম সত্যকে উপলব্ধি করা হয়। এই উপলব্ধির জন্য বুদ্ধদেব দার্শনিক তত্ত্বালোচনার মধ্যে না গিয়ে “কার্যাকর” পদ্ধতির উপর নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন “মানুষ তার অজ্ঞতা কামনা বাসনা আশক্তি দূর করা চেষ্টা করলে পরম আনন্দময় জীবন লাভ করবে।” এর জন্য তিনি চারটি সত্যকে হৃদযঙ্গম করতে বলেছেন। এই সত্যগুলিকে বৌদ্ধ ঐতিহ্য অনুসারে “আর্যসত্য” বলা হয়।

  1. সংসারে দুঃখকষ্ট আছে।
  2. এই দুখকষ্টের কারণও আছে।
  3. দুঃখকষ্টের অবসান করতে হবে।
  4. এর অবসান করার সত্যপথ জানতে হবে।

তিনি আরো বলেছেন জন্মই দুঃখের কারণ। পার্থিব ভোগ তৃষ্ণা হতেই দুঃখের জন্ম এবং তৃষ্ণাই মুক্তির পরিবর্তে বারংবার জন্মান্তর ঘটায়। সুতরাং তৃষ্ণার অবসান কল্পে তিনি “অষ্টাঙ্গিক মার্গের নির্দেশ দিয়েছেন।” এই মার্গগুলি হল,

প্রথমত : সৎবাক্য সৎকার্য এবং সঞ্জীবিকা। এই গুলির দ্বারা মানুষ তার দেহকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

দ্বিতীয়ত : সৎচেষ্টা সৎচিন্তা ও সৎ সচেতনতা। এইগুলির দ্বারা মানুষ তার মনকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

তৃতীয়ত : সৎ সঙ্কল্প ও দৃষ্টি ও সম্যক সমাধি। এইগুলির মধ্য দিয়ে মানুষ প্রজ্ঞা লাভ করবে।

ঐতিহাসিক কোশাম্বির মত ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বৌদ্ধধর্ম যে একান্তভাবে সামাজিক ছিল তা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়। বুদ্ধ সর্বদা মানুষকে অন্যায় কার্য থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। বুদ্ধের মতে চুরি, হত্যা, ব্যভিচার সমাজ জীবনের অন্যতম ক্ষতি। এই কারণেই তিনি সৎকর্মের উপদেশ দিয়েছেন।

এছাড়াও তিনি “মধ্যপন্থার” কথা বলেছেন, সংসারী মানুষদের জীবনযাপনের জন্য। এই মধ্যপন্থাই নির্বাণ লাভের চরমপথ এবং মানুষের মনে যথার্থ শান্তি এনে দেয় বলে অসংযম ও অন্যদিকে চরম কৃচ্ছ্রসাধন দুই বর্জন করে মধ্যবর্তী পথ অনুসরণের কথা বলেছেন। এই গুলি ছাড়াও বুদ্ধ ও তার বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে বেশ কিছু নৈতিক উপদেশও আছে। তাঁর নৈতিক উপদেশগুলি ধর্মের অচ্ছেদ্য অঙ্গরূপে বিবেচিত হয়ে থাকে। যেমন শীল, সমাধি, ও প্রজ্ঞা (অর্ন্তদৃষ্টি)। প্রসঙ্গত স্মরণীয় বুদ্ধদেব ঈশ্বর ও মানুষের সম্পর্ক এবং ঈশ্বর ও আত্মার স্বরূপ ও দেবদেবীর প্রতি নীরব থেকেছেন। আরো স্মরণীয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত নীরব।

বৌদ্ধ ধর্মমত অনুসারে প্রতি মুহূর্তে দেয় অনুভূতি উপলব্ধি। মনের বিভিন্ন অবস্থা এবং সচেতনতা এই পাঁচটি উপাদানের পরিবর্তন ঘটে। তাই প্রতি মূহূতে পুরাতনের সৃষ্টি, নূতন মানুষের উদ্ভব হয়। দুঃখ সম্পর্কে বুদ্ধ বলেছেন “সমুদ্রের যেমন একটি মাত্র স্বাদ এবং সেই স্বাদ লবণের। সেই রকম আমার ধর্মমতেরও একটি মাত্র স্বাদ – সেই স্বাদ দুঃখের হাত থেকে মুক্তি অর্জনের।” তিনি আরো বলেছেন অজ্ঞতা মানুষের মনে তৃষ্ণার সৃষ্টি করে। তৃষ্ণা থেকে আসে কর্ম এবং এই কর্মই তাকে বারংবার জন্মগ্রহণের প্রেরণা সৃষ্টি করে থাকে। এ বিশ্বজগৎ এই ঘটনাসমূহ অবিরাম প্রবাহ মাত্র। তাই নির্বণলাভ পূজা ও যজ্ঞের উপর নির্ভর করে না। বুদ্ধ বিশ্বাস করতেন যে প্রতিটি মানুষকে “আত্মদীপ” হতে হবে। মৃত্যুর আগে প্রিয় শিষ্য আনন্দকে এই উপদেশই দিয়েছিলেন।

বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের মঠে বাস করার অনুমতি দিয়েছিলেন। এর জন্য মঠ জীবনের নিয়মাবলীও তৈরী করেছিলেন। বিনয়পিটকে বর্ণিত এই বিধানগুলি যা পরবর্তী সময় বৌদ্ধ সংঘের সংবিধান বলে পরিচিত হয়। গণতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই সংবিধান। তিনি তার উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করেন নি। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন যে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিহারবাসী সন্ন্যাসীরা নিজেরাই তাদের নেতা নির্বাচন করবেন। ১) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ ২) গোপন ভোট গ্রহণ ৩) বিভিন্ন উপসমিতি গঠন ছিল এই সংবিধানের বৈশিষ্ট্য। কোন কোন স্থানে ঐক্যমতের কথাও তিনি বলেছিলেন। ভারতীয় সংস্কৃতিতে এই বিহারগুলি বৌদ্ধধর্মের সবচেয়ে বড় অবদান। ধীরে ধীরে বিহারগুলি বিদ্যাচর্চা, শিল্পচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

Leave a reply