Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

গান্ধীজি অসহযােগ আন্দোলনের ডাক কেন দিয়েছিলেন?

গান্ধীজি অসহযােগ আন্দোলনের ডাক কেন দিয়েছিলেন?

১৯২০ খ্রীষ্টাব্দ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উল্লেখযােগ্য অধ্যায়। এই বছর গান্ধীজীর নেতৃত্বে যে অসহযােগ আন্দোলনের সূচনা হয় তাকে প্রথম সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন বলা যেতে পারে। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে আর কোন আন্দোলন জাতি ধর্ম দল নির্বিশেষে এমন ভাবে সমর্থিত হয় নি। অসহযােগ আন্দোলনের পটভূমি রচিত হয়েছিল কয়েকটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্বারা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার প্রতিক্রিয়া

১৯১৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে। ভারতীয়দের এই যুদ্ধে কি করা উচিত তা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্কের পর ঠিক হয়, ভারতবাসী ব্রিটিশ সরকারকে সর্বতােভাবে সাহায্য করবে। ভারতবাসী ছকোটি একুশ লক্ষ পাউন্ড চাঁদা তুলে ব্রিটিশ সরকারকে দান করেছিলেন। প্রায় সাড়ে বার লক্ষ ভারতীয় সেনার মধ্যে দশ হাজার প্রাণ দিয়েছিল ইংরেজের পক্ষে লড়াই করে। তাদের আশা ছিল যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশ সরকার এই সাহায্যের বিনিময়ে ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসন দান করবে। কিন্তু ভারতীয় নেতৃবৃন্দ দেখলেন যে ব্রিটিশ সরকার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পরিবর্তে প্রতিরক্ষা আইন প্রয়ােগ করে ভারতীয়দের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করছে। ফলে তিলক ও অ্যানি বেসান্তের নেতৃত্বে হােমরুল আন্দোলন শুরু হল স্বায়ত্ত শাসনের দাবীতে। আন্দোলনের ব্যাপকতা দেখে ভাইসরয় চেমসফোর্ড ভারত সচিবকে ভারতবাসীর দাবীকে বিবেচনা করে দেখতে বললেন।

অর্থনৈতিক সংকট

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দেশবাসীকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ঠেলে দেয়। খাদ্যাভাব, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, ফাটকা বাজি ও বেকারত্ব চরম আকার ধারণ করে। কাপড়, ঔষধ, চিনি প্রভৃতি নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ে। ১৯১৩ খ্রীঃ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় ১৪৩%, ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে ১৯৬% এবং ১৯২০ খ্রী: ২৮১%। ১৯১১ খ্রী: যেখানে এক জোড়া ধুতির দাম ছিল ১টাকা ১২ আনা, ১৯১৮ তে তার দাম হয় ৬ টাকা। মােটা চাল, গম, বাজরার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। এ সময় ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক স্বল্পমূল্যে মহাজনদের কাছে কৃষিজাত দ্রব্যাদি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আবার তাকেই অধিক মূল্যে শিল্পজাত দ্রব্যাদি কিনতে হয়। শিল্পদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পায় নি। করভার ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে শ্রমিকদের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে ওঠে। যুদ্ধের সময় জমিদারদের যুদ্ধকালীন ঋণ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ফলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের পর বৃটিশ পণ্যের আমদানী বৃদ্ধি পায়। লুই ফিসার তাঁর ‘The life of Mahatma Gandhi’ গ্রন্থে লিখেছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে চাষীরা পর্যন্ত ভারতীয় রক্তপাতের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল। সুমিত সরকারের ভাষায়, ‘যুদ্ধ ভারতীয় জনসমাজের বিভিন্ন শ্রেণিকে প্রভাবিত করেছিল।

রাওলাট আইনের প্রতিক্রিয়া

যুদ্ধোত্তর পর্বের গণজাগরণকে শুধু অর্থনৈতিক উপাদানের সঙ্গে সম্পর্কিত করা সমীচীন হবে না। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের সূচনাতেই ভারতের রাজনৈতিক বাতাস অশান্তির আগুনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। রাওলাট আইন পাশ করা হয়েছিল মূলতঃ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য। এই আইন ছিল ব্যক্তি স্বাধীনতার হন্তারক। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন- “The Rowlat Act was the Parent of the Non-co-operation Movement,”

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড

রাওলাট আইনের প্রতিবাদে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় তার চরম পরিণতি দেখা দেয় জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডে। জালিয়ানওয়ালাবাগে নিরস্ত্র জনসমাবেশের উপর গুলি চালানাের ফলে নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষ হত ও আহত হয়। এর ফলে সমগ্র দেশে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রতিবাদে সরকার প্রদত্ত নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। গান্ধিজি বলেন যে, “This satanic government can be mended it must
ended.”

খিলাফৎ আন্দোলন 

ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে গান্ধিজি জাতীয় আন্দোলনের যে সমস্যা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন, তা হল সাম্প্রদায়িক সমস্যা। ১৯৩৬ খ্রীঃ মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হিন্দু মুসলমানের মধ্যে যে ব্যবধানের সৃষ্টি হয়েছিল তা বিনষ্ট করে উভয়ের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার সুযােগ আনে খিলাফৎ আন্দোলন। গান্ধিজি মনে করেন যে, মুসলীম সমাজের খিলাফৎ আন্দোলনকে অসহযােগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে ইংরেজ অনুসৃত বিভেদ নীতি ব্যর্থ হবে এবং সরকারের উপর চাপ দিয়ে স্বরাজ’ লাভ সহজতর হবে। তাই গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান এবং এই দাবির সমর্থনে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১লা আগস্ট অসহযােগ আন্দোলনের সূচনা করেন।

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি

সমকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও অসহযােগ আন্দোলনের পটভূমি তৈরী করে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল রুশ বিপ্লব, আইরিশদের সিফিন্ আন্দোলন, মিশরের জগদুল পাশা এবং তুরস্কে কামাল পাশার গণতান্ত্রিক আন্দোলন।

আন্দোলনের সূচনা

এই ভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলী যে রাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল তা গান্ধিজিকে তাঁর অহিংস সত্যাগ্রহ নীতিকে ব্যাপকভাবে প্রয়ােগে উৎসাহিত করেছিল। ১৯২০ খ্রিঃ কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অসহযােগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হলে সমস্ত ভারতবাসী এক অভূতপূর্ব উদ্দীপনায় গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযােগ আন্দোলনের সূচনা করে।

Download PDF

Please wait..
If the download didn’t start automatically, click here.

Leave a reply