Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

বিজ্ঞানচর্চায় নবজাগরণজনিত বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বিবরণ দাও।

সাহিত্য ও শিল্পের মত বিজ্ঞানেও নবজাগরণ দেখা দিয়েছিল। প্রাচীন ও মধ্যযুগের অন্ধবিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণাকে চুরমার করে বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিকগণ নতুন নতুন আবিষ্কারের দ্বারা মানুষকে চমকিত করেছিলেন। এ যুগের পণ্ডিতদের মধ্যে অজানাকে জানার ও অচেনাকে চেনার যে অনুসন্ধানী মানসিকতার জন্ম হয়েছিল, তাকেই আধুনিক বিজ্ঞানের স্রষ্টা বলা চলে। নবজাগরণের যুগের বিশিষ্ট-বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে রােজার বেকন, স্যার ফ্রান্সিস বেকন, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, গুটেনবার্গ হেফেন, কোপারনিকাস গ্যালিলিও প্রভৃতির নাম উল্লেখযােগ্য।

রােজার বেকন ও ফ্রান্সিস বেকন :- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রােজার বেকন ছিলেন বিজ্ঞানী ও শিক্ষা-সংস্কারক। তিনি মনে করতেন, একমাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞান লাভ করা যায়। তাকে আধুনিক বিজ্ঞানের পথ-প্রদর্শক বলা যায়। অঙ্কশাস্ত্র, জ্যামিতি ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার দক্ষতা ছিল। এছাড়া যন্ত্রবিদ্যা ও রসায়নেও তিনি ছিলেন দক্ষ। এই কারণে তাকে ‘বিস্ময়কর ডাক্তার বলে অভিহিত করা হত। দৃষ্টিবিজ্ঞানের উপর তার গবেষণা মানুষের প্রভূত কল্যাণসাধন করেছে। তার গবেষণার সূত্র ধরেই পরবর্তীকালে চশমা, অণুবীক্ষণ ও দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ভূ-বিদ্যাতেও তার বিশেষ অবদান ছিল। পালাবিহীন জাহাজের অস্তিত্বও তিনি কল্পনা করেন। তাঁর এইসব আবিষ্কারের মর্ম উপলব্ধি করার মানসিকতা সে যুগের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের ছিল না। তাই তাকে ১৪ বছরের জন্য কারাবরণ করতে হয়েছিল। ওপাস মাজুস’ হল। তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ। বিজ্ঞানের চর্চা ও সাধারণ মানুষের মানকে বিজ্ঞানমুখী করে তােলার ক্ষেত্রে স্যার ফ্রান্সিস বেকনের অবদান উল্লেখযােগ্য। সাহিত্যচর্চার সাথে সাথে তিনি বিজ্ঞানেরও সাধনা করেন। তাঁর উপন্যাসগুলিও ছিল বিজ্ঞানভিত্তিক। একটি উপন্যাসে তিনি তিনি সমুদ্রের মধ্যে দুর্গম দ্বীপে একটি গবেষণাগারে কল্পনা করেছেন। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তার মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী পরে ইংল্যাণ্ডের বৈজ্ঞানিকরা ‘রয়েল সােসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি :- ইতালীর শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বিজ্ঞানীও ছিলেন। তিনি অনেক নতুন যন্ত্র ও অস্ত্রের কথা লিখে গেছেন। এমনকি তাদের ছবিও অঙ্কন করেছেন। তার খাতায় এখনকার যুদ্ধের সাঁজোয়া গাড়ী ও ট্যাঙ্কারের মত যন্ত্রেরও বিবরণ আছে। তিনি উড়ােজাহাজ, ডুবােজাহাজ এবং বিষাক্ত গ্যাসের কথাও উল্লেখকরেছেন। তিনি কলের পুতুল গড়তে পারতেন। একবার জিলানি শহরে ফ্রান্সের রাজাকে অভ্যর্থনা করার জন্য তিনি একটি কলের সিংহ তৈরী করেছিলেন। এই সিংহটি যন্ত্রের সাহায্যে গর্জন ও নাড়াচাড়া করতে পারত।

কোপারনিকাস ও গ্যালিলিওঃ নবজাগরণের যুগের আর একজন বড় বৈজ্ঞানিক ছিলেন কোপারনিকাস। তার বাড়ী ছিল পােল্যাণ্ডে। প্রাচীনকালে পণ্ডিতদের বিশ্বাস ছিল। যে, পৃথিবী স্থির হয়ে আছে এবং চন্দ্র-সূর্য প্রভৃতি গ্রহ-উপগ্রহরা তার চারিদিকে ঘুরছে। কোপারনিকাস বলেন এই ধারণা ভুল। তিনি প্রমাণ করেন সূর্য স্থির হয়ে আছে। পৃথিবী। ও অন্যান্য গ্রহরা তাকে প্রদক্ষিণ করছে। অবশ্য তার এই আবিষ্কার সেই সময়ে। জনসাধারণ বিশ্বাস করেনি। তার মৃত্যুর একুশ বছর পর ইতালীতে গ্যালিলিও নামক একজন বৈজ্ঞানিক জন্মগ্রহণ করেন। গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে দূর আকাশের নক্ষত্রের গতিবিধি দেখা সম্ভব হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে তিনি প্রমাণ করেন যে, কোপারনিকাসের মত অভ্রান্ত। তার এই আবিষ্কার চার্চের মতের বিরােধী হওয়ায় তাকে কারাদণ্ড ভােগ করতে হয়েছিল। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তার আবিষ্কারের ফলে পরবর্তীকালে বৈজ্ঞানিকদের অনেক নতুন গবেষণা
সম্ভব হয়েছিল।

গুটেনবার্গ ঃ মুদ্রাযন্ত্রের আবিষ্কার নবজাগরণের যুগের এক উল্লেখযােগ্য ঘটনা। জার্মানীর মেইনজ নামক স্থানে গুটেনবার্গ আধুনিক মুদ্রাযন্ত্র আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের দ্বারাই প্রথম ল্যাটিন ভাষায় বাইবেল ছাপানাে হয়। এর ফলে দ্রুত পুস্তক ছাপানাে এবং জনগণের মধ্যে তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। অতীতে হাতে বই লেখা হত। তাতে সময় লাগত অনেক বেশী ও প্রচুর ভুলভ্রান্তিও হত। কিন্তু মুদ্রাযন্ত্র আবিষ্কারের ফলে এইসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীভূত হয় এবং শিক্ষাবিস্তার দ্রুত হয়ে থাকে।

Leave a reply