Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

মহিলাদের স্বাক্ষরতা প্রসার সম্পর্কে নিবন্ধ লেখ।

মহিলাদের স্বাক্ষরতা প্রসার সম্পর্কে নিবন্ধ লেখ।

মহিলাদের স্বাক্ষরতা প্রসার

সংবিধানের ৭৩ তম সংশোধনিতে বিদ্যালয়ের প্রাথমিক (পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) ও মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত) শিক্ষা, বয়স্ক ও প্রথা-বহির্ভূত শিক্ষা, বয়স্ক ও প্রথা-বহির্ভূত শিক্ষা, গ্রন্থাগার ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ পঞ্চায়েতের অধিকারভুক্ত বলে নির্দিষ্ট হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন অনুসারেও শিক্ষা বিস্তারের পরিকল্পনা ও রূপায়ণ পঞ্চায়েতের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা প্রসারের সাথে শুধু গ্রাম পঞ্চায়েতেই দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা প্রসারের সাথে শুধু গ্রাম পঞ্চায়েতেই নয়, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদও জড়িত থাকে। পঞ্চায়েত সমিতিতে এবং জেলা পরিষদে যে ১০টি করে স্থায়ী সমিতি থাকে, তার মধ্যে ২টি প্রত্যক্ষভাবে নারী ও শিশু কল্যাণের সাথে যুক্ত। এ দুটি হল: শিশু, নারীকল্যাণ ও ত্রাণ এবং (২) শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও ক্রীড়া । সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দুটি স্তরেই এই দুটি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষার পদে আসীন আছেন নির্বাচিত মহিলা। নারীর জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকে শিশুরা। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এ রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা প্রসারের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল সুসংহত শিশু বিকাশ সেবা প্রকল্প (Integrated Child Developemtn Services আই.সি.ডি.এস.)-এর অন্তর্গত কর্মসূচিতে ৩-৫ বছর বয়সের শিশুদের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার ব্যবস্থা। প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র অথবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির দেখাশোনার দায়িত্ব হল পঞ্চায়েতের। শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করার জন্য নিযুক্ত হঅঙ্গনওয়াড়ি মহিলা কর্মী ও সহকর্মীগণ (যথাক্রমে যাদের মাসিক সাম্মানিক সাত’শ পঞ্চাশ টাকা এবং পাঁচশ টাকা ছিল) সাধারণত পঞ্চায়েত সদস্যা এবং ব্লকের সাধারণ মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। সমীক্ষায় একথা স্পষ্ট হয়েছে যে পঞ্চায়েত সদস্যারা বয়স্ক নারীদের অপেক্ষা শিশুদের শিক্ষা সম্বন্ধে এখন বেশি সচেতন ও চিন্তিত। নিজেদের জীবনের অশিক্ষার পুনরাবৃত্তি তাঁরা নিজের সন্তানের ভিতরে দেখতে চান না। এই কর্মসূচিতে শিশুদের সুসংহত বিকাশের জন্য শিশু এবং তার মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়েও লক্ষ রাখা হয়। তাছাড়া, এই কর্মসূচির আরেকটি লক্ষ হল বিশেষ করে তপশিলী অথবা বংশে আগে কেউ লেখাপড়া শেখেনি, এমন পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আওতায় আনা। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য/সদস্যা এবং গ্রামের সাধারণ মহিলাদের বিশেষ আগ্রহের ফলে গ্রামাঞ্চলে আই. সি. ডি. এস. কার্যক্রম প্রশংসনীয়ভাবে এগিয়ে চলেছে। ইদানিং কিছু শিশু কেন্দ্রে (যেখানে ১ মাইলের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘মুখ্য অনুপ্রেরক এবং ‘অনুপ্রেরক’-এর (যাদের মাসিক সম্মানিক যথাক্রমে ৮০০ টাকা এবং ৩০০ টাকা ছিল) তত্ত্বাবধানে ৬ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে শিশুদের দিনের মধ্যে ৩ ঘণ্টা খেলার মাধ্যমে কিছু পড়াশোনা শেখানো এবং খাবার দেবার ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থা মূলত গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র কর্মী মায়েদের জন্য প্রচলিত হয়েছে, অনেকটা ক্রেশ-এর মতো।

শিক্ষা বিষয়ক গণসাক্ষরতা কর্মসূচির কথা সকলেরই জানা। এর দায়িত্বে থাকেন জেলা সাক্ষরতা সমিতি। সাক্ষরতা কর্মসূচির সাথেও পঞ্চায়েত অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। কিন্তু এই কর্মসূচি ত্রুটিমুক্ত নয়। সাক্ষরতার অর্থ হল শুধুমাত্র নিজের নামটুকু সই করতে পারা। তার বেশি কিছু নয়। মেদিনীপুর জেলার সাঁকরাইল ব্লকের সাঁকরাইল গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা শ্রীমতি লতা সিং (তপশিলী উপজাতি) নবসাক্ষর হয়েছিলেন, কিন্ত এরপরে তাঁর পড়াশোনা আর এগোয়নি। একথা জানিয়েছেন নিজেই। অভ্যাসের অভাবে যেটুকু শিখেছিলেন তাও ভুলে যাবার সম্ভাবনা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইদানিং সাক্ষর-উত্তর পাঠক্রমে যুক্ত করা হয়েছে ৬-১৪ বছর বয়সী বালক-বালিকা এবং বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য প্রবহমান প্রথা-বহির্ভূত (অল্প সময়ের মধ্যে শেখার মতো) শিক্ষা। এই কর্মসূচির মধ্যে দলছুট বা ড্রপ-আউট বালক-বালিকা, অর্থাৎ যারা দারিদ্র অথবা অন্য কোনো কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অপারগ হয়, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে শুধু মহিলারাই এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে “শিক্ষা সহায়িকা” হতে পারেন। শিশু শিক্ষা পরিচালন সমিতির দ্বারা অন্যূন মাধ্যমিক পাশ মহিলারা সাম্মানিক বাবদ মাসিক ১ হাজার টাকায় ‘শিক্ষা সহায়িকা’ নিযুক্ত হতেন। উল্লেখ্য যে অনেক ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের সদস্যারাই ‘শিক্ষা সহায়িকার’ পদে নিযুক্ত ছিলেন। প্রথমে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষিকার কোনো সম্মানিক অর্থ ছিল না। তাঁরা স্বেচ্ছাসেবী রূপে পড়াতেন। কিন্তু পরে সাম্মানিক অর্থ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কিছু অভিযোগও উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ডায়মন্ডহারবার ব্লক-২-এর মাধ্যমিক পাশ এক সদস্যার অভিযোগ, “আগে আমি স্বেচ্ছাসেবী হয়ে পড়িয়েছে। কিন্তু এখন অন্য একজনকে নিযুক্ত করা হয়েছে, সে ১ হাজার টাকা করে পাচ্ছে। তাহলে আমি যে এতদিন পড়ালাম, — এটা ঠিক হচ্ছে না।” অনেকটা এই সুরেই হুগলি জেলার পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জেলা পরিষদে নির্বাচিত সদস্যা অপর্ণা মল্লিক (সিপিআই(এম)-এর সারাক্ষণের কর্মী) অভিযোগ করে বলেছেন, “আগে যারা সাক্ষরতার পড়াতো, তখন কোনো টাকা ছিল না। এখন তারা অনেকে পড়াতে পারছে না। টাকা দেওয়ার ফলে শিক্ষকের পদে এখন অনেক দাবিদার হয়েছে। আগে যারা স্বেচ্ছাসেবী হয়ে, এখন তাদেরই আগে দেওয়া উচিত।” এই বক্তব্যের মধ্যে অবশ্যই যৌক্তিকতা আছে। কিছু কিছু অঞ্চলে স্কুলের শিক্ষার সাথে সাথে পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে পাঠাগার স্থাপন এবং ছেলেমেয়েদের জন্য শরীরচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাগর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও ক্রীড়া বিষয়ক কর্মাধ্যক্ষা জানিয়েছেন যে তাঁর সমিতির এলাকায় “গত ১ বছরে ২টি পাঠাগার হয়েছে, এখন আরও ৪টি পাঠাগারের জন্য প্রস্তাব গিয়েছে। এখানে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বছর পরীক্ষায় কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। আর সেই উপলক্ষে স্থানীয় স্কুলের ছেলেমেয়েদের দিয়ে নাচগান করানো হয়। নতুন শিশু শিক্ষাকেন্দ্র হয়েছে অনেকগুলি।” বিভিন্ন জেলার অনেক ব্লকেই এরকম বহু শিশু শিক্ষাকেন্দ্র আছে, আর সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক পাঠাগার।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় প্রতিটি ব্লকেই বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (এন.জি.ও.) পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে গ্রামাঞ্চলে নানাবিধ উন্নয়নমূলক কাজে নিযুক্ত আছে। প্রধানত সাক্ষরতা, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং পাঠাগার স্থাপন বিষয়ক কাজের সাথেই এসব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যুক্ত থাকে। কখনও কখনও রাস্তাঘাটও নির্মাণ করে। কিন্তু এদের কার্যসূচির কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। অনেক সময় কিছুদিন কাজ করার পর উঠেও যায়। গ্রামীণ উন্নয়নের কথা চিন্তা করে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কাজকর্মের সাথে সহযোগিতা করেন।

এখানে একথা উল্লেখ করলে মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষিকার পদ ছাড়াও অন্য আরও কিছু কিছু কর্মনিযুক্তির সুযোগ ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, কুলটিকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা যমুনা সিং (তপশিলী উপজাতি) শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে রান্না করতেন মাসিক চারশ টাকা বেতনে। একই গ্রাম পঞ্চায়েতের আর একজন সদস্যা সন্ধ্যা পয়রা (অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষিত) মেয়েদের স্কুল হস্টেলে রান্না করতেন মাসে সাতশ পঞ্চাশ টাকা বেতনে এবং আহারের বিনিময়ে। তিনি বেশ সন্তুষ্টই ছিলেন বলে মনে হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ব্লক-১-এর ধোসা-চন্দনেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সদস্যাও (অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষিত) শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে রান্না করতেন। এ রকম উদাহরণ আরও আছে। আর মেদিনীপুর জেলার সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির ‘শিশু, নারী, জনকল্যাণ ও ত্রাণ’ বিষয়ক কর্মাধ্যক্ষা (নবম শ্রেণী) মেয়েদের স্কুল হস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট নিযুক্ত ছিলেন ১৮শ টাকা বেতনে। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষাগণও যথাক্রমে মাসিক ১২শ টাকা এবং ১৮শ টাকা সাম্মানিক যেতেন। আর সঙ্গে থাকত যাতায়াত বাবদ ভাতা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে পঞ্চায়েতের তৃত্ত্বাবধানে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে যেসব কর্মসংস্থান হচ্ছিল, তার অনেকখানি উপকারভোগী ছিলেন পঞ্চায়েত সদস্যারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, গ্রামাঞ্চলের সাধারণ নারীরা – এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন কতটুকু?

Leave a reply