Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ রচনা করাে।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ রচনা করাে।

ভারত শাসন আইন

ভারতে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য তিনটি গােলটেবিল বৈঠক ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ব্রিটিশ সরকার এই গােলটেবিল বৈঠকের আলােচনার ভিত্তিতে একটি শ্বেতপত্র দাখিল করেন (মার্চ ১৯৩৩)। এই ‘শ্বেত পত্রের প্রস্তাবগুলির ভিত্তিতে ভারতে নতুন সংস্কার রূপায়িত করার দায়িত্ব ব্রিটিশ সংসদের উভয় সভার সদস্যদের নিয়ে একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির ওপর ন্যস্ত হল (এপ্রিল, ১৯৩৩)। এই কমিটির রিপাের্টের ভিত্তিতে ভারত সচিব স্যামুয়েল হাের ব্রিটেনের হাউস অফ কমন্সে ভারত সরকারের নতুন শাসনতান্ত্রিক আইন। উত্থাপন করেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২রা আগস্ট ভারত শাসন আইন ব্রিটিশ সংসদের উভয় কক্ষে অনুমােদন লাভ করে।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়-

» ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রে একটি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। দেশীয় রাজ্যগুলির পক্ষে এই যুক্তরাষ্ট্রে যােগদান করা সম্পূর্ণ তাদের ইচ্ছাধীন ছিল।

» কেন্দ্রে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হলেও প্রদেশে তা বিলুপ্ত করা হয়। প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়।

» সাম্প্রদায়িক ও অপরাপর গােষ্ঠীগুলির জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

» সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখার জন্য কেন্দ্রে গভর্ণর জেনারেল ও প্রদেশগুলিতে গভর্ণরের হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের শর্তাবলী 

ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার বড়লাট ও একটি মন্ত্রিসভার ওপর ন্যস্ত হয়। বলা যায় যে, মন্ত্রিরা আইনসভার সদস্যদের মধ্যে থেকে বড়লাট কর্তৃক মনােনীত হবেন।  কেন্দ্রীয় দপ্তরগুলিকে সংরক্ষিত’ ও ‘হস্তান্তরিত’—এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। সংরক্ষিত বিষয়ের মধ্যে থাকে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র সম্পর্ক, সৈন্যবাহিনী, অর্থ, রেলপথ ইত্যাদি। এগুলি পরিচালনার দায়িত্ব থাকে বড়লাটের হাতে। হস্তান্তরিত বিষয়গুলি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় মন্ত্রিদের হাতে। এইভাবে কেন্দ্রে দ্বৈত-শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়। কেন্দ্রে দুই কক্ষযুক্ত আইনসভা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হয় ২৬০ জন। এর মধ্যে দেশীয় রাজন্যবর্গ ১০৪ জন সদস্য মনােনীত করবেন। বড়লাট মনােনীত করবেন ৬ জন। প্রদেশগুলি থেকে নির্বাচিত হবেন ১৪০ জন। বাকি ১০টি আসন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। নিম্ন কক্ষের মােট সদস্য সংখ্যা করা হয় ৩৭৫ জন। এর মধ্যে ১২৫ জন দেশীয় রাজ্য থেকে মনােনীত হবেন এবং ২৫০ জন ব্রিটিশ ভারত থেকে নির্বাচিত হবেন। এই নির্বাচন হবে প্রাদেশিক আইনসভার পরােক্ষ ভােটে। আইনসভা আহ্বান ও বাতিলের ক্ষমতা পান বড়লাট। কোন বিল দুই কক্ষ দ্বারা অনুমােদিত হলেও বড়লাটের সম্মতি ছাড়া তা আইনে পরিণত হবে না। প্রয়ােজনে বড়লাট অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন তৈরি করতে পারবেন। তবে এর মেয়াদ হবে ৬ মাস। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমােদন পেলে এটি ৩ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকতে পারবে।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের আইনে প্রদেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়। প্রদেশের গভর্ণর বা ছােটলাট একটি মন্ত্রিপরিষদের সাহায্যে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান। স্থির হয়, মন্ত্রিগণ আইনসভার সদস্যদের মধ্য থেকে মনােনীত হবেন। বাংলা, আসাম, মাদ্রাজ, বােম্বাই, বিহার, যুক্তপ্রদেশ প্রভৃতি বড় প্রদেশে দুই কক্ষযুক্ত আইনসভা গঠিত হয়। উর্ধ্বকক্ষের নাম হয় লেজিসলেটিভ কাউন্সিল’ এবং নিম্নকক্ষের নাম থাকে ‘লেজিসলেটিভ এ্যাসেম্বলী। ছােট প্রদেশগুলিতে একযুক্ত আইনসভা রাখা হয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের আইনে প্রদেশগুলিতে যে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছিল বর্তমান আইনে তা তুলে দেওয়া হয়। প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলীতেও সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকে। অনুন্নত শ্রেণির হিন্দুদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়। প্রদেশগুলিতে ছােটলাটের হাতে বিশেষ ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। যে কোন আইন বাতিল করা কিংবা নতুন আইন জারী করার ক্ষমতা ছােটোলাটে হাতে দেওয়া হয়। প্রয়ােজনে আইনসভা ভেঙে দিয়ে তিনি নিজে হাতে প্রদেশের শাসন দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন বলে স্থির হয়।

সমালােচনা

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন ভারতের কোন রাজনৈতিক দলকেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি। হিন্দু মহাসভা এই বিলকে ‘গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ বিকাশের পথে প্রতিক্রিয়াশীল ও বাধাদানকারী সংবিধানিক ব্যবস্থা” বলে বর্ণনা করে। মুসলিম লীগ এই আইনকে ‘গ্রহণের সম্পূর্ণ অযােগ্য বলে বর্ণনা করে। মহম্মদ আলি জিন্নার মতে, “এই আইনটি ছিল সম্পূর্ণ পচনশীল, মূলতঃ মন্দ এবং সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযােগ্য”। জওহরলাল নেহেরু একে “a new charter of slavery” বলে অভিহিত করেন। মদন মােহন মালব্য বলেন যে, “বাইরে থেকে দেখলে আইনটি গণতান্ত্রিক বলে মনে হয়, কিন্তু ভেতরে তা চরম শূন্য’। জাতীয় কংগ্রেস এই আইনকে “দামী মুখােশের আড়ালে থেকে দেশবাসীর ওপর বিদেশীদের শাসন ও শােষণ কায়েম রাখার অপচেষ্টা” বলে সমালােচনা করে। শিখনেতা সর্দার মঙ্গল সিংহ এটিকে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক ও অসহায় মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান” বলে নিন্দা করেন। এমনিক ব্রিটিশ শ্রমিক দলের নেতা ক্লিমেন্ট এর্টলি মন্তব্য করেন যে, “এই সংবিধানে একটি জিনিস কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না, তা হল ভারতীয় জনগণের স্বাধিকারের সামান্যতম স্বীকৃতি।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের ত্রুটি সমূহ 

ভারতীয় জনমতকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে প্রণীত এই আইনে নানা তুটি ছিল—

১) এই আইনে বলা হয় যে, দেশীয় রাজ্যগুলির অর্ধাংশ কেন্দ্রে যােগ দিলে তবেই যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে। বলা বাহুল্য প্রয়ােজনীয় সংখ্যক দেশীয় রাজ্য এতে যােগদান করেনি। যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হলে কেন্দ্রে নিজেরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে—এই আশঙ্কায় মুসলীমরা যুক্তরাষ্ট্র গঠনের
বিরােধী ছিল।

২) এই ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের কোন নামগন্ধ ছিল না। নতুন আইনে ভােটদাতার সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত—ব্রিটিশ ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ। প্রদেশে গভর্ণর ও কেন্দ্রে গভর্ণর জেনারেলের বিশেষ ক্ষমতা স্বায়ত্বশাসনের আদর্শকে প্রহসনে পরিণত করে। তাই গভর্ণর জেনারেলকে জওহরলাল নেহেরু তাঁর ‘Discovery of India’ গ্রন্থে হিটলারের
সঙ্গে তুলনা করেছেন।

৩) কেন্দ্রে দায়িত্বশীল সরকার’ গড়ার চেষ্টা ছিল না। কারণ আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভােটে পরাজিত হলেও মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হত না।

৪) এই আইনে দেশবাসীকে ক্ষমতা প্রদান করা অপেক্ষা ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের আধিক্যই পরিলক্ষিত হয়। তাই জওহরলাল নেহেরু একে “a machine with strong breaks no engine” বলেছেন।

নানা ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ভারতের শাসনতান্ত্রিক ক্রমবিকাশের ইতিহাসে ১৯৩৫ খ্রীঃ ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আইন স্বাধীন ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ও দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করে। এই আইনের যুক্তরাষ্ট্রীয় অংশ বাস্তবায়িত না হলেও, সীমাবদ্ধভাবে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের নীতি কার্যকর হয়। এর ফলে প্রদেশগুলিতে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে এই ভারত শাসন আইনের ওপর ভিত্তি করেই ভারতীয় সংবিধান গড়ে ওঠে।

Download PDF

Please wait..
If the download didn’t start automatically, click here.

Leave a reply