Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

বাবরের কৃতিত্ব আলােচনা করাে।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের কৃতিত্ব

বাবরের বংশ পরিচয় 

পানিপথের ঐতিহাসিক প্রান্তরে লােদী বংশের সৈন্যবাহিনীকে বিধ্বস্ত করে বাবর ভারতে মােগল-সাম্রাজ্যের ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন। ভারতে সাম্রাজ্যবিস্তারের প্রচেষ্টা তার সার্থকতায় মন্ডিত হয়েছিল। কিন্তু তার পূর্ববর্তী। জীবন ছিল নানা ব্যর্থতা ও বিপর্যয়ে ভরা। পিতার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন তৈমুরের এবং মাতার দিক দিয়ে চিঙ্গিস খার বংশধর।

বাবরের জন্ম 

বর্তমান রুশ-তুর্কীস্থানের অন্তর্গত ফরঘনা নামে ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিপতি আমীর ওমর শেখ মির্জার পুত্র জহির-উদ্দিন মহম্মদ ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ইনিই পরবর্তী যুগের ইতিহাসে বাবর নামে বিখ্যাত হয়ে উঠেন। বাল্যকালে তিনি শিক্ষার যথেষ্ট সুযােগ পেয়েছিলেন এবং এই সময় থেকেই অত্যন্ত দুঃসাহসী ও দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেন।

সমুরখন্দের সিংহাসনের প্রতিদ্বন্দ্বী 

পিতার আকস্মিক (১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে) ফলে। মাত্র একাদশ বছর বয়সে বাবর ফরঘনার সিংহাসনে আরােহণ করেন। এই সময় থেকেই তিনি তৈমুরের সাম্রাজ্য পুনঃসঞ্জীবিত করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সমরখন্দের সিংহাসন নিয়ে তৈমুরের বংশধরগণের মধ্যে আত্মকলহ দেখা দিলে তিনি এই সুযােগ গ্রহণ করতে অগ্রসর হন। রা

বাবরের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন

সাময়িকভাবে তিনি সমরখন্দ দখল করতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তাকে উজবেগ দলপতি সাহেবানী খাঁর কাছে ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ পর্যদস্ত হতে হয় এবং আপন পিতৃরাজ্যও হারাতে হয়। অতঃপর তিনি ভাগ্যান্বেষণে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে লাগলেন। এই সময় কঠোর জীবন যাত্রার মধ্য দিয়ে তিনি তার জীবনের অনেক অমূল্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন এবং এই সময়েই তার মনে হিন্দুস্থান জয়ের সংকল্প দানা বেঁধে উঠে।

কাবুলে স্বাধীন রাজ্য ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা

১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কাবুল রাজ্যটি দখল করতে সক্ষম হন। এর পর তিনি সমরখন্দের ওপর উজবেগ আধিপত্য ধ্বংস করবার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অবশেষে সেই আশা। ত্যাগ করে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অর্থাৎ হিন্দুস্থানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা তাঁকে এক অপূর্ব সুযােগ দান করল। রাজনীতিগতভাবে ভারত তখন ছিল সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং আত্মকলহে দুর্বল। পরীক্ষামূলকভাবে তিনি কয়েকবার প্রাথমিক অভিযান প্রেরণ করলেন এবং বজৌর দুর্গ, ঝিলামের তীরে ভির নামক স্থান ও চিনাব নদীর অববাহিকা অঞল দখল করলেন। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে অভিযানের জ্যন তিনি সুযােগের অপেক্ষা করতে লাগলেন। ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কান্দাহার দখলের পর বাদশাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার হস্তচ্যুত হয়।

পানিপথের প্রথম যুদ্ধ

দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা শীঘ্রই তাকে সেই সুযােগ দান করল। দিল্লির লােদীবংশীয় সুলতান ইব্রাহিম লােদীকে সিংহাসনচ্যুত করবার জন্য অভিজাতবর্গের একটি বিরাট অংশ তখন অতিমাত্রায় আগ্রহশীল হয়ে উঠেছিল। অবশেষে লাহােরের শাসনকর্তা দৌলত খাঁ এবং সিংহাসনের অন্যতম দাবিদার সুলতানের পিতৃব্য আলম খাঁ, একত্রে বাবরকে ভারত আক্রমণের জন্য আহ্বান জানালেন। বাবর এই আমন্ত্রণ সানন্দে গ্রহণ করে ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে সসৈন্যে পাঞ্জাবে উপস্থিত হয়ে লাহাের দখল করলেন। দৌলত খা ও আলম খাঁ বাবরের সহায়তা চেয়েছিলেন সত্য, কিন্তু এখন তারা বাবরের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তার বিরুদ্ধাচরণ আরম্ভ করলেন। ফলে বাবরকে কাবুলে ফিরে যেতে হলাে। কিন্তু পরবছর, ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সসৈন্যে পাঞ্জাবে উপস্থিত হয়ে দৌলত খাঁকে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করলেন এবং পানিপথের প্রান্তরে তার সুশিক্ষিত অশ্বারােহী ও গােলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় ইব্রাহিম লােদীকে পরাজিত ও নিহত করলেন। দিল্লি বাবরের পদানত হলাে। কিন্তু এই যুদ্ধের ফলেই সমগ্র হিন্দুস্থানের ওপর বাবরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি; পানিপথের (১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ) যুদ্ধজয় মােল সাম্রাজ্য স্থাপনের প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাত্র।

“The magnitude of Babur’s task could be properly realised when we say it actually began with Panipath. Panipath set his foot on the path of empire building and in this path the first obstacle was the opposition of the Afghan Tribes.”-An Advanced History of India.

(১) দোয়াব অঞ্চল ও অন্যান্য স্থান অধিকার

পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভের পর দিল্লি ও আগ্রা বাবরের পদানত হলাে। অতঃপর তিনি তার আধিপত্য চতুর্দিকে বিস্তৃত করবার জন্য সচেষ্ট হলেন। দোয়াব। অঞ্চলের আফগান অভিজাতবর্গ দমন হলাে; জৌনপুর, গাজিপুর, গােয়ালিয়র প্রভৃতি স্থান তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলাে।

(২) মেবারের রাণা ও রাজপুত-সত্ম

কিন্তু, অনতিকালের মধ্যেই তাকে সম্মিলিত রাজপুত শক্তির সম্মুখীন হতে হলাে। তুর্কী-আফগান সুলতানির পতনােন্মুখ অবস্থার সুযােগ গ্রহণ করে মেবারের রাণা সঙ্গ (বা সংগ্রাম সিংহ) হিন্দুস্থানে রাজপুত প্রাধান্য স্থাপনের আশা পােষণ করেছিলেন। এই উদ্দেশ্যেই তিনি বাবরের সঙ্গে পূর্ব হতেই সংযােগ স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তিনি বাবরের অভিযানে কোনােরূপ সাহায্য করেন নি।

(৩) খানুয়ার যুদ্ধে রাজপুত-সষ্মের পরাজয়

এখন বাবরকে নির্বিবাদে হিন্দুস্থানে তার আধিপত্য বিস্তার করতে দেখে তিনি এক বিশাল রাজপুত-সঙ্ গড়ে তুললেন। ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে খানুয়ার প্রান্তরে উভয় পক্ষের সেনাবাহিনীর সাক্ষাৎ হলাে। সংখ্যাধিক্য থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধকৌশলের অপকর্ষতার ফলে রাজপুত বাহিনীর শােচনীয় পরাজয় ঘটল। ভারতে রাজপুত প্রাবা-1্য প্রতিষ্ঠার আশা চিরতরে বিনষ্ট হলাে। অধ্যাপক পার্সিভ্যাল স্পীয়ার মন্তব্য করেছেন “It (খানুয়ার যুদ্ধ), was the imperial swan song of the Rajputs.” খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল দুইটি। প্রথমত, মােগল শক্তিকে প্রতিহত করবার মতাে উপযুক্ত কোনাে শক্তিও আর থাকল না। দিল্লিতে বাবরের সিংহাসন নিরাপদ হলাে, তার প্রাধান্য দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপিত হলাে। দ্বিতীয়ত, তার রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থল কাবুল থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হলাে।

“In the first place, the menace of Rajput supremacy which had loomed large before the eyes of Muhammadans in India for the last few years was removed once for all. The powerful confederacy which depended so largely for its unity upon the strength and reputation of Mewar, was shattered by a single great defeat and ceased henceforth to be a dominant factor in the politics of Hindustan. Secondly, the Mughal Empire of India was soon firmly established.-Rushbrook Williams.

(৪) চান্দেরি দুর্গ

খানুয়ার যুদ্ধের পরবছর, ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে, বাবর দুর্ভেদ্য রাজপুত দুর্গ চান্দেরি দখল করলেন। অতঃপর ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে গােগরা (বা ঘাঘরা) নদীর তীরে তিনি বাংলা ও বিহারের আফগানদের সম্মিলিত বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করলেন। এই যুদ্ধে জয়ের ফলে এক বিরাট অংশে বাবরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে গােয়ালিয়র পর্যন্ত এবং মধ্য-এশিয়ার অক্ষনদী থেকে পূর্বে গােগরা নদী পর্যন্ত তাঁর সামাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলাে। উল্লেখ্য (১৫২৬-২৬ খ্রিস্টাব্দ) পূর্ববর্তী অভিযানগুলির তুলনায় উদ্দেশ্যের দিক থেকে ভিন্ন
ছিল। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে ২৬ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়।

(৫) বাবরের সাফল্যের কারণ 

বাবরের জয়লাভের একাধিক কারণ দেখা যায়। যদিও তুলনামূলক বিচারে বাবরের শক্তি ছিল সামান্য কিন্তু বাবরের নেতৃত্বে মুঘলবাহিনী ছিল সুশৃঙ্খল ও সংঘবদ্ধ। অন্যদিকে ইব্রাহিম লােদীর সৈন্যবাহিনী ছিল অদক্ষ ও অনিয়ন্ত্রিত। যে, তার সে জীবন ছিল দুর্ভাগ্যজনক। তার জৈষ্ঠপুত্র সেলিম বিদ্রোহী হন এবং আবুল ফজলকে হত্যার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আকবর তাকে ক্ষমা করেন এবং তাকে যুবরাজ এবং তাঁকে যুবরাজ পদে নিযুক্ত করেন। ইতিমধ্যে মুরাদের মৃত্যু হয়েছিল। ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে দানিয়েলের মৃত্যু হয়। বৃদ্ধ সম্রাট ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে ১৭ই অক্টোবর মারা যান।

Leave a reply