Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

ভারতীয় অর্থনীতিতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতীয় অর্থনীতিতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার প্রভাব

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের মধ্য দিয়ে ভারতে ব্রিটিশ শক্তি ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় প্রবেশ করে। এর পর দ্রুত ঔপনিবেশিক পরিকাঠামো সুদৃঢ় হতে থাকে ও তার প্রভাবে ভারতীয় অর্থনীতির মূল কাঠামোয় পরিবর্তন সূচিত হয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার চরিত্রকে সঠিকভাবে অনুধাবন করার জন্য এই প্রভাবকে তিনটি পর্যায়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

প্রথম পর্ব (১৭৬৫-১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ)

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি ভূমিরাজস্ব থেকে স্থায়ী ও অধিক সম্পদ সংগ্রহের লক্ষ্য স্থির করে। ফলে চিরস্থায়ী, রায়তওয়ারি, মহলওয়ারি প্রভৃতি ভূমিরাজস্ব দ্বারা ভারতের কৃষক সম্প্রদায়কে শোষণ করা শুরু হয়। এই পর্যায়ে ব্যক্তিগত বাণিজ্য ও বিভিন্ন পণ্যের একচেটিয়া কারবার থেকে অগাধ সম্পদ লুণ্ঠন ও সম্পদের নিষ্কাশন ঘটে। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব ঘটলে ইংল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের জোগানকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে সুতিবস্ত্রের উপর ৬৭ % ও মসলিনের ওপর ৩৭ % শুল্ক স্থাপন করা হয়। অন্যদিকে ব্রিটিশ শিল্পজাত দ্রব্যাদির ভারতে আমদানি বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রথম পর্বে ভারতের সম্পদ, কুটিরশিল্প ও ব্যাবসা কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের আওতায় আসে।

দ্বিতীয় পর্ব (১৮১৩ – ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ)

ব্রিটিশ শিল্পপতি ও সরকারি চাপে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে থেকে অবাধ বাণিজ্যনীতি গ্রহণ করে। ফলে ভারতের অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়তে দেখা যায়। কোম্পানি এই সময় কৃষিজাত কাঁচামাল খরিদ করে ইংল্যান্ডে রপ্তানি শুরু করে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় তারা ভারতের কৃষককুলকে ন্যায্য মূল্য দিত না। তাছাড়া এই শোষণের হাতিয়ার হিসেবে দাদনপ্রথা, পত্তনি প্রথা, দস্তুর প্রথা প্রভৃতি গড়ে ওঠায় ভারতের কুটিরশিল্প ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। কোম্পানি শোষণের ফলে ভূমি- রাজস্ব হার বৃদ্ধি পায়। চাষি করভারে ও উৎপাদিত পণ্যের উচিত মূল্য না পেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাঁতিরা বেকার হয়ে কৃষিশ্রমিকে পর্যবসিত হয়। এর ফলে জমির ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ভারতের অর্থনীতির ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। ভারত কুটির শিল্পে উন্নত রাষ্ট্র থেকে কৃষিনির্ভর ও অবশিল্পায়িত রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

তৃতীয় পর্ব (১৮৫৭-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ)

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে। অর্থাৎ ভারত সরাসরি ইংল্যান্ডের উপনিবেশে পরিণত হয়। কিন্তু ঔপনিবেশিক অর্থনৈতিক শোষণ অব্যাহত থাকে। বাণিজ্য কেন্দ্ররূপে প্রসিদ্ধ নগরগুলি গুরুত্ব হারায়। কুটির শিল্প সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়। ভারতীয় কৃষিপণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ সম্পূর্ণ হয়। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইংল্যান্ড ভারতকে প্রধান কাঁচামালা ও মূলধন সংগ্রহকারী উপনিবেশরূপে ব্যবহার করে। ভারতের অর্থ ও কাঁচামালে ইংল্যান্ডের কলকারখানগুলির চাকা পুনরায় চলতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারত ইংল্যান্ডের পণ্যসামগ্রীর প্রধান বাজারে পরিণত হয়। দাদাভাই নৌরজি তাঁর Poverty and Un-British Rule in India গ্রন্থে যাকে Drain of Wealth রূপে চিত্রিত করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপরে ভারত ব্রিটিশ পুঁজিবাদের সেবাদাসে পরিণত হয়।

Leave a reply