Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

গণমাধ্যম হিসেবে রাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

গণমাধ্যম হিসেবে রাষ্ট্রের ভূমিকা

রাষ্ট্র সমাজজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। তাই সামাজিকীকরণের (Socialization) ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। রাষ্ট্রকর্তৃত্বমূলক সংস্থা হিসেবে সমাজের মানুষগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। ধর্মে-কর্মে-আদর্শে রাষ্ট্রনীতি আমাদের পথপ্রদর্শকের কাজ করে থাকে। রাষ্ট্রের হাতেই আছে ভোগবাদী জীবনের নানা সম্ভার। রাষ্ট্রীয় আইন আমাদের মেনে চলতে হয়। রাষ্ট্রীয় আইন আমাদের রক্ষা কবচ। আইন অমান্য করলে আইনানুগ শান্তি পেতে হয়।

সমাজবদ্ধ মানুষের আচার-আচরণের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে রাষ্ট্রের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বিদ্যাভূষণ এবং সচদেব (Vidyabhushan & Sachdeva) বলেছেন- “It (state) makes laws for the people and lays down the modes of conduct expected of them.” আবার সামাজিক চুক্তি মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হল বহির্শক্তির আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা। অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা, জনগণের নিরাপত্তা বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। অ্যারিস্টট্ল-এর মতে নিরাপত্তা রক্ষা ছাড়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল মানব সম্পদ এবং সামাজিক জীবনের ঐক্য সংরক্ষিত রাখা। আবার, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে এসে পড়ে। তাই শিক্ষাবিদ Laski-এর মতে আধুনিক শিক্ষায় অন্যতম প্রধান কর্তব্য হল গণতন্ত্রের জন্য শিক্ষাদান। শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বগুলো হল-

[1] জগৎ পরিবর্তনশীল, সমাজ পরিবর্তনশীল। তাই সময়ের গতিশীলতার মাঝে উদ্দেশ্যের কিছু পরিবর্তন ঘটে। এখানে রাষ্ট্রশিক্ষার উদ্দেশ্যের নির্ধারক এবং নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করে। তাই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃরণ বলেছেন, “Our educational system must find the guiding principle in the aim of the social order, for which it prepares and in the nature of the civilisation, it hopes to build up” অর্থাৎ আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি সামাজিক নির্দেশনার লক্ষ্যে অবশ্যই প্রধান নির্দেশক হবে, যার দ্বারা সভ্যতার প্রকৃতিকে সংগঠিত করবে।

[2] শিক্ষাক্ষেতে নীতিগুলো বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে; না হলে নির্দেশমূলক নীতি (Directive principle) প্রণয়ন নিরর্থক হয়ে থাকে। নীতিগুলো হল- রাষ্ট্র দ্বারা শিক্ষালয় স্থাপন, অর্থ মঞ্জুর, একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে সর্বজনীন করার ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি।

[3] সমাজের বুকে বাসা বেঁধে আছে, বিবিধ সামাজিক অসাম্য, বিবিধ সামাজিক ব্যাধি, বিবিধ সামাজিক কুসংস্কার। শিক্ষার লক্ষ্য হল সমাজের বুক থেকে সেগুলিকে দূর করা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো (Mass media) বিশেষ ভূমিকা নেবে।

[4] রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গড়া বিবিধ শিক্ষা কমিশন, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা কমিশন, 1948-1949; মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন, 1952-1953; কোঠারি কমিশন, 1964 1966; জাতীয় শিক্ষানীতি, 1986 প্রভৃতি শিক্ষা সংক্রান্ত বিবিধ সুপারিশ করে, সামাজিক সমস্যাগুলো দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

[5] শিক্ষা পরিকল্পনা, শিক্ষামূলক সমস্যা দূরীকরণের অন্যতম হাতিয়ার। তাই সর্বদেশেই শিক্ষাকেন্দ্রিক সমস্যাগুলো দূর করতে বিবিধ শিক্ষা পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে। আমাদের ভারতবর্ষেও বিভিন্ন শিক্ষামন্ত্ৰক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। যেমন— NCERT (National Council for Educational Research and Training), SCERT (State Council for Educational Research and Training), NCTE (National Council for Technical Education) প্রভৃতি। সবগুলোই রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় চালিত হয়।

এগুলো ছাড়াও বিবিধ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন IIT, ISI; মহাকাল গবেষণা কেন্দ্র, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র প্রভৃতি আছে, যেগুলো মানব সভ্যতার অগ্রগতির ধারক ও বাহক হয়ে কাজ করে চলেছে।

উপসংহার

মানবজীবন ক্রমশ জটিল হতে জটিলতর হয়ে চলেছে, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মানবজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। যে-কোনো রাষ্ট্রকে এই গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে, এই ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে, গবেষণাধর্মী প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে শিক্ষাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, মানবসভ্যতার অগ্রগতির ধারাকে বহমান রাখতে হবে। গণমাধ্যম হিসেবে রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিসীম।

Leave a reply