Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। 

ভূমিকা 

শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজতত্ত্বের ভাবাবেগ, বৈচিত্র্যময় সত্তা প্রভৃতি হল শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের (Educational Sociology) উৎস। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন ডিউই (John Dewey) এবং ফ্রান্সে এমিল ডুকহেইম (Emile Durkheim), শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের সূচনা করেছিলেন। ইংল্যান্ডে কার্ল মানহেইম (Karl Mannheim) শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান (Educational sociology)-এর প্রচলন ঘটিয়েছিলেন। 1907 খ্রিস্টাব্দে হেনরি সুয়াল্লো (Henry Suzzallo) প্রথম শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্বের পাঠদান শুরু করেন এবং ওয়াল্টার আর স্মিথ (Walter R Smith) এ বিষয়ে প্রথম Textbook রচনা করেন।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি বা স্বরূপ 

প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ জন ডিউই (John Dewey) বলেছিলেন, “Education is life, education is growth and education is social progress” অর্থাৎ শিক্ষাই হল জীবন, শিক্ষাই হল বুদ্ধি এবং শিক্ষাই সামাজিক প্রগতি। শিক্ষাই সমাজবিজ্ঞানের হাতিয়ার, সামাজিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি শিক্ষার আলোকে সমৃদ্ধ। তাই সমাজতত্ত্বের প্রকৃতিতে আছে শিক্ষাতত্ত্বের নির্ভরশীলতা। আবার বলা যায় যে, শিক্ষা, সমাজের বহির্ভূত অঙ্গ নয়। তাই কার্ল মানহেইম (Karl Mannheim ) বিশ্বাস করতেন, শিক্ষার সমস্যাগুলো সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে অপসারণ সম্ভব। জ্ঞানের এই নতুন শাখাটি যে দুটি নামে পরিচিত সে দুটি হল —

  1. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব (Educational Sociology);
  2. শিক্ষার সমাজতত্ত্ব (Sociology of Education)।

এই দুটো মত সম্বন্ধে কিছু শিক্ষাবিদ পার্থক্য নিরূপণ করেছেন। যেমন W Tayer-এর মতে—শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব (Educational Sociology)-এ শিক্ষা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অপরপক্ষে, শিক্ষার সমাজতত্ত্ব (Sociology of Education)-এ সমাজতান্ত্রিক সমস্যাগুলো প্রাধান্য পায়। শিক্ষাবিদ RJ Stalcup এবং শিক্ষাবিদ JE Jesen এই ধরনের পার্থক্যের কথা ব্যক্ত করেছেন।

শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে শিক্ষাই সমাজবিজ্ঞানের হাতিয়ার। বিশিষ্ট সমাজতাত্ত্বিক Talesra-র মতে, “Educational sociology may be defined as the application of the scientific spirit, methods and principles of sociology to the study of Education. By such study, the social laws governing education may be obtained and applied in such ways as will improve our educational practice.” অর্থাৎ, শিক্ষার অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানকে সমাজবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক প্রবণতা বা প্রভাব, পদ্ধতি এবং নিয়মাবলির ক্ষেত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। এরূপ অনুসন্ধানের বা চর্চার বিষয় দ্বারা সামাজিক বিধিগুলো শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পাওয়া যেতে পারে এবং সেগুলো গুরূপভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে যাতে আমাদের শিক্ষাশ্রয়ী নীতি বা প্রথার উন্নতি ঘটাবে।

আবার, Cook and Cook এর মতে, “The application of sociological knowledge and technique to educational problem in the field of human relations and material well being.” 1950. অর্থাৎ Cook and Cook-এর মতে, মানবিক সম্পর্ক এবং পার্থিব চাহিদা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শিক্ষাকেন্দ্রিক সমস্যাতে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান এবং কৌশলের প্রয়োগ।

আবার MS Gore এবং অন্যান্যরা যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা হল “The sociological analysis of any concrete system of education can be conveniently organised along two dimensions-[1] A discussion of the relationship between the education system and other segments of social system. [2] A discussion of the system of education itself.” অর্থাৎ, শিক্ষার যে-কোনো মূর্ত বা বাস্তব পদ্ধতির সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দুটি দৃষ্টিকোণ বরাবর সুবিধামতো সংগঠিত করা যেতে পারে—

  1. শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার অন্যান্য অংশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ:
  2. শিক্ষার নিজ পদ্ধতির আলোচনা।

সুতরাং, সংজ্ঞাগুলোর বিশ্লেষণে এবং আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতিতে (Educational Sociology) আরও উঠে আসে—

  1. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতিতে আছে সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি |
  2. সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতি, নিয়মাবলি, শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানে প্রযোজ্য।
  3. সমাজতত্ত্বের বিধিগুলোর প্রয়োগে শিক্ষাশ্রয়ী সমাজতত্ত্ব সমৃদ্ধ হয়।
  4. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞানে, শিক্ষা প্রক্রিয়ার নানা বিষয় প্রাধান্য পায়।
  5. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান শিক্ষা-সংস্কৃতিমূলক, সৌন্দর্যমূলক বিষয়সমূহে দৃষ্টিপাত করে।
  6. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান, শিক্ষা সংস্কৃতিমূলক, সৌন্দর্যমূলক বিষয়াদির প্রতিষ্ঠানগুলো সম্বন্ধে আলোচনা করে।
  7. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
  8. শিক্ষাশ্রয়ী সমাজবিজ্ঞান নিজস্ব পদ্ধতিগুলোর পর্যালোচনা করে।

Leave a reply