Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

জার্মানীতে নাৎসি দলের গঠন, ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা আলোচনা করো।

ভূমিকা

অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি দেশবাসীকে প্রবলভাবে ক্ষুব্ধ করে এবং সারা দেশে ভাইমার প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার ‘জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি’ বা জার্মান শ্রমিক দলে যোগ দেন। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ডেক্সলার নামে জনৈক জার্মান। বাগ্মিতার রে হিটলার অল্পদিনের মধ্যেই এই দলের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হন। কিছুদিন পর এই দলের নতুন নামকরণ হয় ‘ন্যাশনাল সোসালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি’ বা নাৎসী দলে। হিটলারের বাগ্মিতায় দলে দলে বিক্ষুব্ধ মানুষ এই দলের পতাকাতলে সমবেত হতে থাকে। ঐতিহাসিক এলান বুলক হিটলারকে ইতিহাসের ‘শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক বক্তা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ঐতিহাসিক রবার্ট এরগ্যাং বলেন যে, নাৎসী দলের সফলতার অন্যতম কারণ হল এই দলের মিথ্যা প্রচারের ক্ষমতা। এই দলের লক্ষ্য ছিল ভার্সাই সন্ধি বাতিল করে এক শক্তিশালী জার্মান রাষ্ট্র গঠন। ইহুদী বিরোধিতা, ক্যাথলিক বিরোধিতা, কমিউনিস্ট বিরোধিতা ছিল এই দলের ঘোষিত লক্ষ্য। এছাড়া, বেকার সমস্যার সমাধান, আমূল ভূমি সংস্কার, শিশু ও নারীকল্যাণ এই দলের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। নাৎসী দলের প্রচারকার্য, সংগীত ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হিটলার তাঁর দলের বেকার যুবকদের নিয়ে একটি আধা-সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন। বাদামী পোশাকে সজ্জিত এই বাহিনী বিরোধীদের সভা-সমিতি ভেঙে দিত এবং নেতাদের ওপর হামলা চালাত। কমিউনিস্টদের ওপর বীতশ্রদ্ধ শিল্পপতি ও জনসাধারণ কমিউনিস্টদের প্রতিরোধ কর উদ্দেশ্যে এই দলকে প্রচুর অর্থসাহায্য করত। এইভাবে এই দলের অর্থভাণ্ডার স্ফীত হয়ে ওঠে।

মেই ক্যাম্ফ

১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত জার্মান সেনাপতি লুডেনড্রফের সহযোগিতায় বলপূর্বক ভাইমার প্রজাতন্ত্রকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে হিটলার কারারুদ্ধ হন। কারাকক্ষের নির্জনতায় তিনি রচনা করেন তাঁর আত্মজীবনী—৭৮২ পৃষ্ঠার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মেই ক্যাম্ফ’ বা ‘আমার সংগ্রাম’। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই গ্রন্থটিতে নাৎসী দলের মতাদর্শ, ভাবধারা ও কর্মসূচী বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। ‘নাৎসী দলের বাইবেল’ বলে চিহ্নিত এই গ্রন্থটির ন’লক্ষ কপি মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে বিক্রি হয়। এই গ্রন্থে তিনি ফ্রান্সকে সরাসরি জার্মান জাতির ‘চিরন্তন শত্রু’ বলে অভিহিত করেন।

নাৎসী দলের জনপ্রিয়তা

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের বিশ্বব্যাপী মহামন্দা, মিত্রপক্ষকে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য কারণে জার্মানীর অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় আকার ধারণ করে। দলের ঘোষিত লক্ষ্য ও কর্মসূচীতে আকৃষ্ট হয়ে বেকার যুবক, করভারে পীড়িত জার্মান কৃষক, ইহুদী বণিক ও শিল্পপতিদের একাধিপত্যে বীতশ্রদ্ধ জার্মান ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা নাৎসী দলে যোগদান করে। এইভাবে নাৎসী দলের জনপ্রিয়তা ও শক্তি প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের জার্মান সংসদ বা ‘রাইখস্ট্যাগ’-এর নির্বাচনে এই দলের আসন সংখ্যা ১২ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০৭-এ পৌঁছয়। তাদের মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৬০ লক্ষ। ১৯৩২ সালের নির্বাচনে ৬০৮টি আসনের মধ্যে নাৎসীরা ২৩০টি আসন লাভ করে একক বৃহত্তম দলে পরিণত হয়। জার্মান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিল্ডেনবার্গ হিটলারকে সরকার গঠনের আহ্বান জানালে তিনি একটি বহুদলীয় সরকার গঠন করেন এবং জাতীয়তাবদী দলের নেতা ফন পেপেন-এর সঙ্গে যুগ্মভাবে চ্যান্সেলার বা প্রধানমন্ত্রী (জানুয়ারি, ১৯৩৩ খ্রিঃ) নিযুক্ত হন। বহুদলীয় সরকারের শাসন পরিচালনায় নানা অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ায় হিটলারের পরামর্শে বৃদ্ধ প্রসিডেন্ট হিল্ডেনবার্গ পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে (১৮শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩ খ্রিঃ) মধ্যরাতে জার্মান সংসদ বা রাইখৃস্ট্যাগ ভবনটি রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়। হিটলার প্রচারের মাধ্যমে এর সমস্ত দায় তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ কমিউনিস্টদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের ওপর প্রবল অত্যাচার।

হিটলারের ব্যক্তিত্ব

‘নাৎসী দলের সাফল্যে হিটলারের কর্মদক্ষতা, সাংগঠনিক শক্তি, বাগ্মিতা ও নেতৃত্বের ভূমিকা কম নয়। তাঁর আবেগপ্রবণ বক্তৃতা জনমনে প্রবল উন্মাদনার সৃষ্টি করত। ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ওপর বীতশ্রদ্ধ দেশবাসীর সামনে হিটলার জাতীয় আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত হন। দেশবাসী তাঁকে সাদরে বরণ করে। অধ্যাপক এ. জে. পি. টেলর এ সম্পর্কে ….বলেন। তাঁর মতে, হিটলারের ব্যক্তিত্ব ও বাগ্মিতাই যদি নাৎসী দলের সাফল্যের কারন হয় তাহলে তাদের ক্ষমতা লাভ করতে অত বিলম্ব হল কেন? তাঁর মতে, আসলে তিনের দশকে জার্মানীর জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত হিটলারের উত্থানকে সহজ করে তোলে। এ সময় বামপন্থী দলগুলির মধ্যে কোন ঐক্য ছিল না। অন্যদিকে দক্ষিণপন্থী দলগুলি বামপন্থীদের বিরুদ্ধে হিটলারকে নানাভাবে মদত দিত। অভিজাত সম্প্রদায়, ভূস্বামী, শিল্পপতি ও সামরিক বাহিনী হিটলারকে নানাভাবে সাহায্য করত।

ঐতিহাসিক ব্যারাক্ল বলেন যে, হিটলারের শক্তি নিহিত ছিল সুবিধাভোগীশ্রেণী, শিল্পপতি, ভূস্বামী ও সেনাদলের সমর্থনের মধ্যে। ধনতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীলশ্রেণীর সমর্থন ব্যতীত হিটলারের উত্থান সম্ভব হত না। শুরু করেন। এর ফলে সব বিরোধী দলই সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এত চেষ্টা সত্ত্বেও নির্বাচনে (৫ই মার্চ) নাৎসী দলের আসন সংখ্যা হয় মাত্র ২৮৮। তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হয়। তাই পুনরায় অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে হিটলারের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।

একচ্ছত্র নেতা

দেশের দুর্দিনে শাসন পরিচালনার সুবিধার জন্য জার্মান সংসদ এক বিশেষ আইন পাস করে সংসদের অনুমোদন ছাড়াই হিটলারকে শাসনকাজ পরিচালনা ও আইন প্রণয়নের অধিকার দেয়। এর ফলে কার্যত জার্মানীতে তিনি সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবার্গের মৃত্যু ঘটলে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি দুটি পদ নিজে গ্রহম করে জার্মান রাষ্ট্রে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন এবং নিজেকে ‘ক্যুয়েরার’ বা প্রধান নেতা বলে ঘোষণা করেন। ক্ষমতা দখলের পর বিরোধী দল ও নেতৃবৃন্দ—বিশেষত ইহুদী ও কমিউনিস্টদের ওপর নানা দমন-পীড়ন শুরু হয়। গ্রেপ্তার, গুপ্তহত্যা ও অপরাপর নির্যাতন তাদের ওপর নেমে আসে। এইভাবে সব বিরোধিতাকে স্তব্ধ করে দিয়ে হিটলার জামানীর একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন।

Leave a reply