Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

কুষান যুগে রোম বাণিজ্য সম্বন্ধে লেখ।

কুষান যুগে রোম বাণিজ্য

বহির্বিশ্বে কুষাণরাই ছিল ভারতীয় সংস্কৃতির ও সভ্যতার দূত। এই যুগে ভারতের সঙ্গে রোম ও চীনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ঐতিহাসিক Mommesen এর মতে ভারতীয় মসলিন বস্ত্রের রপ্তানির ফলে রোমের সঙ্গে ভারতের যোগসূত্র স্থাপিত হয়। দ্বিতীয় কদফিসের কর্তৃক নিম্ন সিন্ধু অঞ্চল জয় করার মূলে ছিল রেসম বানিজ্য পথটির উপর নিয়ন্ত্রণ সুদূর করা। তাই ব্যাপক আর্থিক সম্ভাবনার কথা স্মরণ রেখে তিনি এই অঞ্চলটি জয় করেন। এর ফলে কুষাণ সাম্রাজ্যের আর্থিক বনিয়াদ দৃঢ়তর হয়।

প্লিনিও যে রাজপথের উল্লেখ করেছেন তবে তাঁর মতে পথটি গঙ্গা নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। টলেমিও একটি রাজপথের কথা বলেছেন যেটি বারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে মথুরা হয়ে মধ্যপ্রদেশের পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। চিন থেকে আফগানিস্তান, উত্তর ভারত, উজ্জয়িনী হয়ে ভারতের পশ্চিম উপকূলবর্তী ভূগুকচ্ছ পর্যন্ত প্রসারিত এক রাজপথের উল্লেখ আছে পেরিপ্লাস গ্রন্থে। হৌ হান শু নামে এক চিনা গ্রন্থে একটি পথের উল্লেখ আছে, যেটি ইয়ারকন্দ ও পামির মালভূমির পথে চিনের সিন কিয়াঙ থেকে ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এপথ দিয়ে কাশ্মীর ও আফগানিস্তানেও যাওয়া যেত। চিনের সঙ্গে পূর্ব তথা উত্তর-পশ্চিম ভারতের সড়কপথেও যোগ ছিল। পথটি দক্ষিণ চিনের য়ুন্নান থেকে বের হয়ে মায়ানমার, মনিপুর, অসম, উত্তর বিহারের ভিতর দিয়ে অগ্রসর হয়ে আফগানিস্তানের বল্থ অভিমুখে চলে গিয়েছিল। এসব রাজপথ একদিকে যেমন কুষাণ সাম্রাজ্যের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিকে সংযুক্ত করেছিল, কুষাণ সাম্রাজ্য ও বিভিন্ন ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সংযোগসূত্র স্থাপন করেছিল, তেমনি অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে চিন, মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও রোম সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক সেতুবন্ধ রচনা করেছিল।

পেরিপ্লাস গ্রন্থে চীন হতে রেশম ও রেশমজাত পণ্য কুষাণ অধিকৃত ব্যাকটিয়ার ভিতর দিয়ে গঙ্গা ও সমুদ্রপথে দক্ষিণ ভারতে নিয়ে আসার উল্লেখ আছে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সাম্রাজ্যের স্থান থেকে স্থানান্তরে বণিক সম্প্রদায়ের অবাধ গমনাগমন ও বাণিজ্যিক পণ্যের নিয়মিত লেনদেনের কাজটি সহজ হয়। সমকালীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে তার সমর্থন আছে। উৎখননের ফলে পূর্ব আফগানিস্তানের বেগ্রামে কুষাণ যুগের বেশ কিছু প্রত্নসামগ্রীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব জিনিসের মধ্যে সিরিয়া বা মিশরে তৈরি কাঁচপাত্র, পশ্চিম এশীয় ব্রোঞ্জপাত্র, কলাইকরা, চিনাপাত্র ও মথুরায় নির্মিত হাড় ও হাতির দাঁতে তৈরি ফলক।

তক্ষশিলা-পুষ্কলাবতী পথের দু’ধারে কুষাণযুগের কয়েকটি বসতির সন্ধান পাওয়া গেছে। বসতিগুলি বণিকদের চটি ছিল বলে মনে হয়। এসময় বলখ, পুষ্কলাবতী, তক্ষশিলা ও মথুরার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। রোম তথা পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে কুষাণ সাম্রাজ্যের জলপথে যে বাণিজ্য চলত তাতে সংগত কারণেই সিন্ধুর বদ্বীপ ও গুজরাতের উপকূল অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। প্লিনি, পেরিপ্লাসের অজ্ঞাতনামা লেখক এবং টলেমির বর্ণনা থেকে জানা যায় সিন্ধুর বদ্বীপ ও গুজরাতের উপকূল হতে চাল, চন্দন কাঠ, সেগুন, মেহগনি, মসলিন, সাধারণ মোটা কাপড়, দামি ও আধদামি পাথর ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও বিলাসসামগ্রী রপ্তানি হত। চিনের রেশম ও রেশমি বস্ত্রের একটা মোটা অংশও এই পথেই রোমে পৌঁছতে। রোম ও পশ্চিম এশিয়া হতে আমদানি হত সুরা, সূচিশিল্প শোভিত কাপড়, কাচের পাত্র, তামা, টিন, সিশা, সোনা ও রূপা। তথা পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে কুষাণ সাম্রাজ্যের বাণিজ্য ছবিষ্কের শাসনকালে বা প্রথম বাসুদেবের রাজত্বের প্রাথমিক পর্ব পর্যন্ত জোর কদমে চলেছিল। প্লিনি বলেন, ভারতীয় পণ্য রোমের বাজারে একশো গুণ চড়া দামে বিক্রি হত, আর ভারতীয় পণ্যের দাম মেটাতে প্রতি বছর অসংখ্য রোমকে মুদ্রা ভারতে চালান যেত।

রোমের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে কুষাণ রাজারা আগ্রহান্বিত ছিলেন। উভয় সাম্রাজ্যের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করার উদ্দেশ্যে তাঁরা রোমে প্রতিনিধি প্রেরন করেছিলেন। তাছাড়া রোমের সঙ্গে বাণিজ্যের খাতিরে নিম্নসিন্ধু অববাহিকায় এক নির্দিষ্ট মুদ্রানীতি চালু করা হয়। এ অঞ্চলে কুষাণযুগের যেসব রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া গেছে তা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বিশুদ্ধ, অনেক খাঁটি। এই মুদ্রাগুলি নিঃসন্দেহে সরকারি টাকশালে তৈরি হয়েছিল। নিম্নসিন্ধু উপত্যকার মতো এক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে নিম্নমানের মুদ্রা প্রচলিত থাকলে ভারত-রোম বাণিজ্যের স্বার্থ বিঘ্নিত হত।

Leave a reply