Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব লেখ।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত

সমুদ্রগুপ্তের উত্তরাধিকারী হন তাঁর পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত যিনি ৩৮০ খৃষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। কোন কোন ঐতিহাসিক অতি উৎসাহের বশে বিশাখদত্ত রচিত দেবী-চন্দ্রগুপ্ত নামক একটি নাটকের কাহিনী অবলম্বনে চন্দ্রগুপ্তের সিংহাসন লাভের পিছনে একটি নাটকীয় কাহিনী যোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। দেবী-চন্দ্রগুপ্ত নাটকে বলা আছে যে সমুদ্রগুপ্তের পুত্র রামগুপ্ত জনৈক শক রাজার দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে স্বীয় পত্নী ধ্রুবাদেবীর বিনিময়ে শান্তি ক্রয় করতে চান, কিন্তু এটা অপমানকর মনে করে তাঁর ভাই চন্দ্রগুপ্ত নিজেই ধ্রুবাদেবীর ছদ্মবেশে শকশিবিরে হাজির হয়ে শক রাজাকে হত্যা করেন, এবং তার পর রামগুপ্তকে হত্যা করে নিজে রাজা হন এবং ধ্রুবাদেবীকে বিবাহ করেন।

চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পিতা সমুদ্রগুপ্তের মতই সামরিক প্রতিভাবান ছিলেন। সুদূর দক্ষিণের কিছু এলাকা, এবং দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের বাকাটকদের বাদ দিয়ে, অবশিষ্ট ভারতের প্রায় সবটুকুই সমুদ্রগুপ্তের অধীনতা স্বীকার করেছিল, এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময়ও তা বজায় ছিল। পশ্চিম ভারতের অর্থাৎ গুজরাট ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের শক শাসকেরা সম্ভবত সমুদ্রগুপ্তের নিকট বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন। অসম্ভব নয় যে সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর তারা সেই বশ্যতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। অথবা এও হতে পারে যে সাম্রাজ্য আরও কিছু এলাকা যুক্ত করা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের অভিপ্রায় ছিল। দ্বিতীয় অনুমানটিই অধিকতর সঙ্গত। কেননা চন্দ্রগুপ্ত শকদের পরাস্ত করে তাদের এলাকাগুলি নিজ রাজ্যের অঙ্গীভূত করে নেন। প্রশাসনিক অসুবিধার জন্যই সমুদ্রগুপ্ত দিগ্বিজয় করলেও নিজ রাজ্যের আয়তন বেশি বাড়ানোর বিপক্ষে ছিলেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সেই নীতি পরিবর্তন করেছিলেন, এবং আমাদের মনে হয় তা একটি মাত্র কারণেই, এবং তা হচ্ছে রোমক বাণিজ্যের সদ্ব্যবহার। এই কারণেই বন্দর সমৃদ্ধ পশ্চিম ভারতের উপকূল ভাগ দখল করার প্রয়োজন তাঁর ছিল, এবং এই একই কারণেই তিনি উত্তর পশ্চিমের বাহলীক দেশ (ব্যাক্‌ট্টিয়া) পর্যন্ত জয় করেছিলেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময় রোম সাম্রাজ্যের ধ্বংস না হলেও তার অবক্ষয় শুরু হয়েছিল, যার ফলে স্থলপথ ও জলপথ উভয় পথেই বাণিজ্য বিঘ্নিত হচ্ছিল। স্থলপথে পণ্যসমূহ বিভিন্ন দুর্ধর্ষ ট্রাইবের দ্বারা লুণ্ঠিত হচ্ছিল, কাজেই পরের ভরসায় চন্দ্রগুপ্ত বসে থাকেননি। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে ভারতের অভ্যন্তরে বেশি যুদ্ধবিগ্রহের মধ্যে চন্দ্রগুপ্ত লিপ্ত হতে চাননি। পশ্চিম-দক্ষিণাপথের উঠতি শক্তি বাকাটকদের বিরুদ্ধে তিনি কোন যুদ্ধ করেননি, বরং তাদের রাজা দ্বিতীয় রুদ্রসেনের সঙ্গে নিজকন্যা প্রভাবতী গুপ্তার বিবাহ দিয়েছিলেন।

শকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ

শকদের বিরুদ্ধে চন্দ্রগুপ্ত আক্রমণ চালিয়েছিলেন মালব থেকে। এ বিষয়ে তিনটি লেখমালা আছে, একটি ভীলসার নিকটবর্তী উদয়গিরিতে, যা উৎকীর্ণ করিয়েছিলেন তাঁর মন্ত্রী বীরসেন, অপরটি ওই একই অঞ্চলে যা উৎকীর্ণ করিয়েছিলেন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের অধীনস্থ একজন সামন্তরাজা এবং তৃতীয়টি সাচীতে যা উৎকীর্ণ করিয়েছিলেন আম্রকার্দব নামক তাঁর এক সেনাপতি। চন্দ্রগুপ্ত শকদের বিরুদ্ধে সাফল্যলাভ করেছিলেন ৪০৯ খৃষ্টাব্দের কিছু পরে। শক নেতা তৃতীয় রুদ্রসিংহকে তিনি শুধু পরাস্তই করেননি, তাঁর সমস্ত এলাকা তিনি নিজ সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত করেছিলেন।

চন্দ্রগুপ্তের অপরাপর অভিযান সম্পর্কে কোন বিস্তৃত তথ্য পাওয়া যায় না। তাঁর মন্ত্রী শাব এবং সেনাপতি আম্রকার্দব যে লেখমালা সমূহ উৎকীর্ণ করিয়েছিলেন, তাতে তাঁকে “গৌরবার্থে সর্বজগত বিজেতা” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দিল্লীর কুতবমিনারে একটি লৌহস্তম্ভ আছে যাতে জনৈক চন্দ্ররাজার দিদ্বিজয়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, এবং বলা হয়েছে যে তিনি বঙ্গের বিদ্রোহী নেতাদের একটি সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন, সিন্ধু নদীর সাতটি মুখ অতিক্রম করেছিলেন এবং বাহ্লীকদের পরাস্ত করেছিলেন। এই চন্দ্রকে অনেকেই দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন, এবং তা মনে করার সঙ্গত কারণ আছে।

চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব

তিনি নিজে নাগদের রাজকন্যা কুবেরনাগকে বিবাহ করেছিলেন, এবং তার কন্যা প্রভাবতী গুপ্তার সঙ্গে বাকাটকরাজ দ্বিতীয় রুদ্রসেনের বিবাহ দিয়েছিলেন। কুত্তলের কদম্বশাসক কাকুৎস্থবর্মার লেখমালা থেকে জানা যায় যে গুপ্তদের সঙ্গে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। অনুমান করতে অসুবিধা নেই যে আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে চন্দ্রগুপ্ত বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের দ্বারা নিজের শক্তির ভিত্তি সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন।

চন্দ্রগুপ্তের অপর নাম ছিল দেবগুপ্ত এবং দেবরাজ। এছাড়া তিনি “বিক্রমাদিত্যে” উপাধি নিয়েছিলেন। তাঁর ‘পরম ভাগবত’ উপাধি প্রমাণ করে যে তিনি বৈষ্ণব ধর্মের অনুকুল ছিলেন। তাঁর পূর্ববর্তীরা নিছক স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করলেও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রারও প্রচলন ঘটিয়েছিলেন। তাঁর কিছু মুদ্রার শক-শৈলীর প্রভাব আছে। মুদ্রার উপর তিনি কয়েকটি নূতন ধরনের ছাপেরও প্রবর্তন করেছিলেন। এক ধরনের মুদ্রায় তাঁকে সিংহ নিধনকারী হিসাবে দেখানো হয়েছে। ওই সিংহ তাঁর গুজরাত অঞ্চল জয়ের প্রতীক। তাঁর সময় বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ভারতবর্ষে এসেছিলেন।

Leave a reply