Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

রাজেন্দ্রচোলকে সাম্রাজ্য বিজেতা রুপে মূল্যায়ণ কর।

১০১২ খ্রীষ্টাব্দে রাজরাজ চোল পুত্র রাজেন্দ্রচোলকে রাজপদে অভিষিক্ত করেন। রাজেন্দ্রচোলের রাজত্বকাল ১০১২-১০৪৪ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল। এর মধ্যে প্রথম দুই বছর তিনি পিতার সঙ্গে যুক্তভাবে রাজত্ব করেন। তিনি চোল উত্তরাধিকার সূত্রে এক বিশাল সামাজ্য লাভ করেছিলেন। সমগ্র তামিলনাদ ও অন্ধ্র, তৎসহ মহীশুর ও সিংহলের অংশ বিশেষ এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

একটি সুগিঠত রাষ্ট্রবিন্যাস, শক্তিশালী আমলাতন্ত্র, সুসজ্জিত সেনাবাহিনী ও বিশাল নৌবহর তিনি উত্তরাধিকারী সূত্রে পেয়েছিলেন। তার ফলে তিনি তাঁর সম্পদ ও সুযোগের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিলেন।

তিনি তাঁর রাজত্বের সপ্তম বৎসরে পুত্র রাজাধিরাজকে যুবরাজ নিযুক্ত করেন এবং তাঁর রাজত্বের বাকি ২৫ বছর সাম্রাজ্যের তার পিতাপুত্র মিলিতভাবে পরিচালিত করেন। এছাড়া অন্য রাজপুত্রদের উচ্চ রাজপদে নিযুক্ত করে সিংহাসনে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত

বিরোধের সম্ভাবনা দূর করে রাষ্ট্র শাসনকে সুদৃঢ় করেছিলেন। রাজা হিসাবে রাজেন্দ্রচোলের প্রথম উল্লেখযোগ্য সাফল্য “সিংহল অভিযান”। তার রাজত্বের পঞ্চম বৎসরে একটি লেখতে এবং মহাবংশ ও সিংহলী ইতিবৃত্ত এই যুদ্ধের কথা আছে। এই যুদ্ধে সিংহলরাজ পঞ্চম মহেন্দ্র বন্দী হন। সিংহলে রাজেন্দ্রচোলের কয়েকটি লেখ পাওয়া গেছে কিন্তু ভগ্ন হওয়ায় বিশেষ ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ করা যায়। নাই। তিনি সিংহলকে চোল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত একটি প্রদেশে পরিণত করেন। তবে দীর্ঘদিন তিনি সিংহলের উপর অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে পারেন নাই।

তিরুবালঙ্গারু পট্টে বলা হয়েছে রাজত্বের ষষ্ঠ বৎসরে রাজেন্দ্রচোল দ্বিগ্বিজয়ে বের হন এবং তাঁর সৈন্যদল বিজয়গর্বে পাণ্ড্য ও চোলরাজ্য অতিক্রম করে। তবে এই অভিযানের ফলে রাজেন্দ্রচোল কোন নতুন অঞ্চল লাভ করেছিলেন কিনা তা সন্দেহ আছে। তাঁর দশম বৎসরের একটি লেখ থেকে জানা যায় তিনি তার অন্যতম পুত্রকে চোল পান্ড্য আখ্যা দিয়ে মাদুরার শাসক নিযুক্ত করেন।

১০২১-২২ খ্রীষ্টাব্দে রাজেন্দ্র চোলকে পশ্চিম চালুক্যগণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে পুনরায় অবতীর্ণ হন। এই সময় চালুক্য রাজা ছিলেন দ্বিতীয় জয়সিংহ। দ্বি-মুখী আক্রমণের মাধ্যমে রাজেন্দ্র চোল ‘মাস্কিতে’ অনুষ্ঠিত যুদ্ধে দ্বিতীয় জয়সিংহকে পরাজিত করেন। কিন্তু কোন অজানা কারণে রাজেন্দ্র চোল আর অগ্রসর না হয়ে তুঙ্গভদ্রা নদীকে তাঁর সাম্রাজ্যের সীমান্ত হিসাবে চিহ্নিত করে রাজধানীতে ফিরে যান।

তিনি দক্ষিণ ভারতের বিজয় সম্পন্ন করে উত্তর ভারতে সম্প্রসারণের নীতি গ্রহণ করেন। এই সময় বাংলার পালবংশীয় রাজা প্রথম মহীপাল রাজত্ব করছিলেন। তিনি বাংলাদেশ অভিযানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী চিহ্ন রেখে যান। তাঁর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কিছু সংখ্যক কণাটক বাসী বাংলায় আসেন। এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং কালক্রমে বাঙালি জাতীর মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ সামন্তসেন পরবর্তীকালে সেনবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। যাই হোক তিনি বাংলা রাজা ১ম মহীপালকে পরাজিত করেন এবং ‘গঙ্গইকোন্ড’ উপাধি ধারণ করেন। এই বঙ্গ বিজয়ে শুধুমাত্র তিনি মহীপালকেই পরাজিত করেন নাই, ইন্দ্ররথ, রণসুর, এবং ধর্মপাল নামক বাঙালি রাজাদেরকেও পরাজিত করেছিলেন। রাজেন্দ্রচোল এই অভিযানের সাহায্যে উত্তর ভারতের রাজাদের সামনে তাঁর সামরিক শক্তি নিদর্শন রাখতে চেয়েছিলেন। অভিযান শেষে তিনি তিরুচিরাপল্লী জেলায় প্রতিষ্ঠিত নূতন রাজধানী ‘গঙ্গাই কোন্ড চোল পুরমে’ ফিরে যান।

এর পর তাঁর শক্তিশালী নৌবাহিনীর সাহায্যে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, ব্রহ্মদেশের পেগু ও মালয় উপদ্বীপ জয় করেছিলেন। এইভাবে দ্বিগ্বিজয়ী হিসাবে তিনি অবিস্মরণীয় কীর্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি ১০২৫ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীবিজয়ের বিরুদ্ধে অভিযান পাঠান। এই বিরোধের প্রকৃত কারণ জানা যায় না। হয়ত পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্য পথে শ্রীবিজয় অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল। অথবা রাজেন্দ্রচোল সমুদ্র পরবর্তী অঞ্চলে দ্বিগ্বিজয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। উদ্দেশ্য যাই হোক এই অভিযান জয়যুক্ত হয়েছিল। অবশ্য শ্রীবিজয়ের রাজা বশ্যতা স্বীকার করলে তার রাজ্য তিনি ফিরিয়ে দেন। তাঞ্জোর পটে “কম্বুজ রাজ্যের” সঙ্গে রাজেন্দ্রচোলের যোগাযোগ ছিল।

কিন্তু রাজত্বের শেষ দিক শান্তিপূর্ণ ছিল না। এই সময় পশ্চিম চালুক্যগণের সঙ্গে পুনরায় সংঘর্ষ দেখা দেয় এবং বেঙ্গি রাজ্য এই সাথে যুক্ত হয়। “কলিদিন্দি” নামক স্থানে চোল চালুক্য শক্তির মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু এই সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে নাই। এই অবস্থায় ১০৪৪ খ্রীষ্টাব্দে রাজেন্দ্রচোলের মৃত্যু হয় এবং ১ম রাজাধিরাজ চোল সিংহাসনে বসেন।

Leave a reply