Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র ও আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা বর্ণনা কর।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র ও আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা বর্ণনা কর।

সুভাষচন্দ্র ও আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা

‘নেতৃত্ব’ ও ‘আন্দোলন’ কথা দুটি পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত, অর্থাৎ একটি ছাড়া অপরটি স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও একথা সমভাবে প্রযােজ্য। ভারতের মুক্তি আন্দোলন যেসব নেতার বলিষ্ঠ নেতত্বগুণে। সাফল্য অর্জন করেছিল, সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

কংগ্রেসে যােগদান 

ছােটোবেলা থেকেই সুভাষচন্দ্র ছিলেন স্বাদেশিকতার আদর্শে গভীর ভাবে উদ্বুদ্ধ। আই.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তিনি মর্যাদাপূর্ণ সরকারি চাকুরিতে যােগদান করেন নি। বরং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের আহ্বানে সুভাষ চন্দ্র দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন এবং কংগ্রেসে যােগ দেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কংগ্রেসের তরুণ ও বা বামপন্থী মহলে মহলে জনপ্রিয়তার সুবাদে ১৯৩৮ সালে গান্ধিজির বিরােধিতা সত্ত্বেও তিনি ত্রিপুরী কংগ্রেসের কংগ্রেস সভাপতি হন। কিন্তু এই অধিবেশনের পরবর্তী সময়ে গান্ধি গােষ্ঠীর সঙ্গে মতবিরােধের দল গঠন করেন (মে, ১৯৩৯)

দেশত্যাগ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধের চূড়ান্ত আঘাত হানতে চাইলেন। এই উদ্দেশ্যে শত্রুর শত্রু আমার মিত্র এই নীতি অনুসরণ করে তিনি বাইরে থেকে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নিলেন।

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ শাসকদের সমস্ত সতর্কতাকে ব্যর্থ করে তিনি কাবুলের পথে পাড়ি দেন ও কাবুল থেকে রাশিয়া হয়ে বার্লিনে পৌছান। অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে তিনি জাপানের সমর্থনে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেন।

আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠা 

রাসবিহারী বসুর অনুরােধে সুভাষচন্দ্র ডুবাে জাহাজে করে জার্মানি থেকে জাপানে আসেন (১৩ ই জুন, ১৯৪৩)। জাপানে এসে তিনি আজাদহিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সশস্ত্র সংগ্রামে পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব নেন। এরপর সুভাষচন্দ্র আজাদ-হিন্দ বাহিনীর পুনর্গঠন করেন এবং সেনাবাহিনীর উন্নতি ও শৃঙ্খলা আনার ব্যাপারে সচেষ্ট হন। আজাদ-হিন্দ-বাহিনীর সৈন্যরা তাকে নেতাজি’আখ্যায় ভূষিত করেন। সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ ফৌজকে পাঁচটি ব্রিগেডে বিভক্ত করেন, এগুলি হল— গান্ধি ব্রিগেড, সুভাষ ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেড, আজাদ ও আঁসির রানি বাহিনী।

সরকার গঠন 

পরবর্তী সময়ে নেতাজি আইরীশ অস্থায়ী সরকারের অনুকরণে আজাদ হিন্দ সরকার স্থাপন করেন (২১ অক্টোবর, ১৯৪৩)। অস্থায়ী এই সরকারের মূলমন্ত্র ছিল ‘জয় হিন্দ’ ও ‘দিল্লি চলাে। জাপান,জার্মানি এবং ইটালি সমেত আটটি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি জানায়। সুভাষচন্দ্র হলেন এই সরকারের কর্ণধার ও প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, ও প্রধান সেনাপতি। এই সময়ে নেতাজি জাপানি বেতার থেকে ভারতের স্বাধীনতার বাণী প্রচার করেন। তিনি বলেন, ‘দিল্লির পথই হল স্বাধীনতার পথ। তার চরম আহ্বান ছিল— “তােমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তােমাদের স্বাধীনতা দেব” (Give me blood, I will give you freedom)!

অভিযান 

এরপর শুরু হয় সশস্ত্র অভিযান। নেতাজির রণধ্বনি দিল্লি চলাে’ ও ‘জয় হিন্দ’মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারত সীমান্তে এসে পৌছায়। ইতিমধ্যে নেতাজি জাপানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণ করে সেখানে ত্রিবর্ণ পতাকা উড্ডীন করে দ্বীপগুলাের নতুন নাম রাখেন শহিদ ও স্বরাজ দ্বীপ। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্ৰদেশ পার হয়ে মণিপুর রাজ্যে প্রবেশ করে। বাহিনীর এক অংশ কোহিমা দখল করে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল অধিকারের জন্য অগ্রসর হল। ইতিমধ্যে প্রবল বর্ষা শুরু হওয়ার আজাদ হিন্দু বাহিনীর যােগাযােগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর আঘাতে জাপান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় জাপানের সাহায্যে বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রিটিশের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হল। নেতাজি মারিয়া যাবার পথে বিমান দুর্ঘটনায় সম্ভবত মারা যান (আগস্ট ১৯৪৫)। অবশ্য এই মৃত্যুর কাহিনী অনেকেই সত্যি বলে মনে করেন না।

সুভাষচন্দ্র ও আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান 

ঘােষিত লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হলেও ভারতে স্বাধীনতার ইতিহাসে আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযানের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এই সংগ্রামের তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে ভারতীয় নৌসেনারা বিদ্রোহ ঘােষণা করে। এছাড়া আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান হিসেবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দাবিকে একটি আন্তর্জাতিক প্রশ্নে পরিণত করেন।

আজাদ-হিন্দ-বাহিনীর বিচারকে কেন্দ্র করে ১৯৪৫ সালের শেষের দিকে সারা ভারতে যে তুমুল উত্তেজনা ও ব্রিটিশ-বিরােধী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়, তা সরকার পক্ষকে ক্রমশ ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তােলে। সরকার পক্ষ আন্দোলনের সৃষ্টি হয়, তা সরকার পক্ষকে ক্রমশ ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তােলে। সরকার পক্ষ সহজেই উপলব্ধি করেন যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখা আর সমীচীন নয়।

এই ঐতিহাসিক দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রকৃতপক্ষে ব্যর্থ হয় নি। ব্রিটিশ শক্তির ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে তারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথকেই সুগম করে তুলেছিল।

Download PDF

Please wait..
If the download didn’t start automatically, click here.

Leave a reply