আদি আফ্রিকা ছিল বিভিন্ন জাতির প্রাথমিক বা আদিবাসভূমি। কিন্তু আদি আফ্রিকার সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য খুবই স্বল্প। প্রস্তর যুগের মানুষেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল পশুশিকারি ও খাদ্যসংগ্রাহক। তারা এক জায়গা থেকে অন্যত্র খাবারের (ফল-মূল, বাদাম ও শাক জাতীয় পাতা) সন্ধানে যাযাবর জীবনযাপন করত।
আদি আফ্রিকার অধিবাসীদের পশুশিকার ও খাদ্যসংগ্রাহক জীবনের বৈশিষ্ট্য
নৃতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মতে, পশুশিকারি ও খাদ্যসংগ্রাহকদের জীবন ছিল এরকম-
পশুশিকার
এরা প্রায় ৮০ রকমের উদ্ভিদ থেকে খাবার সংগ্রহ করত এবং বিভিন্ন ধরনের ফল, বাদাম, মূল প্রভৃতিও সংগ্রহ করত। দলের সকলেই সকলের পদচিহ্ন শনাক্ত করতে পারত। এরা বিভিন্ন রকমের পশু ও তার আগমনস্থল সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকত। পশুশিকারের জন্য তারা তির, জাল, ফাদ ব্যবহার করত।
যৌথ মালিকানা
খাদ্যসংগ্রাহক ও পশুশিকারিদের মধ্যে সহযােগিতা ও সহমর্মিতা ছিল। একসঙ্গেই পশুশিকার ও তা সমবণ্টনের মাধ্যমেই তাদের জীবন পরিচালিত হতাে। ব্যক্তিগত নয়, যৌথ মালিকানাই ছিল জীবনচর্চার মূল নীতি।
সমানাধিকার
পশুশিকার ও খাদ্যসংগ্রাহক সমাজে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ ছিল না। নৃতত্ত্ববিদগণের মতে খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যগ্রহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছিল সমানাধিকার। নারীরা মূলত ছােটো পশু শিকার করত। তবে এর ব্যতিক্রমও ছিল। আবার জন্মনিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা পালন করত পুরুষ।
মাতৃতান্ত্রিক সমাজ
খাদ্যসংগ্রাহক ও পশুশিকারি সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। মায়ের পরিচয়েই শিশুর পরিচিতি গড়ে উঠত। শিশু একটু বড়াে হলে শারীরিক পরিশ্রম (শিকার, আয়ুধ নির্মাণ-কৌশল, খাদ্যসংগ্রহ) শেখানাের পাশাপাশি গােষ্ঠীকে নেতৃত্ব দেওয়া, আত্মরক্ষার কৌশল শেখানাে হতাে।
প্রস্তরায়ুধ নির্মাণ
খাদ্যসংগ্রাহক ও পশুশিকারি সমাজে শিল্প বলতে ছিল প্রস্তরায়ুধ নির্মাণ; তির-ধনুক নির্মাণ। এইগুলি নির্মাণে সকলে সমান দক্ষ ছিল না। গােষ্ঠীর মধ্যে দু’একজন এগুলি নির্মাণে দক্ষ হতাে।
গুহাচিত্র অঙ্কন
সাহারাতে আদিপর্বের পশুশিকারি ও খাদ্য সংগ্রহকারীরা যাযাবর ছিল না। তবে তারা বছরের অধিকাংশ সময় হ্রদের বা নদীর বা জলাভূমির কাছাকাছি বসবাস করত। তারা বনের অফুরন্ত খাদ্য বন্য মিলেট, সরগম, মাছ, কুমিরের মতাে জলজ প্রাণীকে হত্যা করে ভক্ষণ করত। সাহারার এই মানবেরা গুহাচিত্র অঙ্কনও করেছিল।
উপসংহার
খ্রিঃপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দেও পূর্ব আফ্রিকা ছিল পশুপালনকারী ও খাদ্যসংগ্রাহকদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রস্থল। তবে ইথিওপিয়ান হাইল্যান্ড কৃষিকাজের প্রধান কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল। লেক তুর্কানা অঞলের মৎস্যশিকারিগণ নৌকা বা ডিঙি ব্যবহার করত। হাতি, জিরাফ, গজিলা, জলহস্তী, গণ্ডার, জেব্রাও শিকার করা হতাে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .