Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

ভারতে জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণগুলি বর্ণনা কর।

ভারতে জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণ

বিরাট দেশ ভারতের জনসংখ্যাও বিশাল। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে ভারতের জনসংখ্যা ১০২ কোটিরও বেশি। কিন্তু ভারতের সুবিশাল জনসংখ্যা দেশের সর্বত্র সমানভাবে ছড়িয়ে নেই। কোথাও জনবসর্তি অত্যন্ত ঘন (কলকাতার শিল্পাঞ্চলে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩০,০০০ জনের বেশি), আবার কোথাও জনবসতি নেই বললেই চলে (লাদাখে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১২ জন)।

ভারতের জনবসতির তারতম্যের কারণগুলো হল –

(১) ভূ-প্রকৃতি

বন্ধুর পর্বত ও মালভূমির চেয়ে সমতল ভূমিতেই সাধারণত জনবসতি ঘন হয়। কারণ, কৃষিপ্রধান দেশ ভারতের সমভূমিতেই চাষ-আবাদ সুবিধাজনক। তাই সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা অঞ্চলের সমতল, উর্বর ও জলসেচের সুবিধাযুক্ত অঞ্চলে জনবসতি বেশি। অথচ হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল এবং দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলের উঁচুনীচু অনুর্বর ভূ-ভাগ কৃষির পক্ষে অনুপযুক্ত, তাই সেখানে জনঘনত্ব বেশ কম। অরুণাচল, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও মিজোরামে ওই একই কারণে জনবসতি অত্যন্ত কম।

(২) জলবায়ু ও (৩) মৃত্তিকা

কৃষিপ্রধান দেশ ভারতে কৃষির সাফল্য অনেকাংশে জলবায়ু ও মৃত্তিকার ওপর নির্ভরশীল। যেখানে উত্তাপ কম, বৃষ্টিপাত বেশি, মৃত্তিকা উর্বর ও কৃষিকাজের সুবিধা আছে, সেখানে জনবসতি বৃদ্ধি পায়, যেমন :কেরালার উপকূল ও গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, গোয়া, হরিয়ানা, ওড়িশা মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যে এইজন্য জনবসতি বেশি।

অন্যদিকে, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে যেখানে শীত ও গ্রীষ্ম দুটোই বেশি এবং মৃত্তিকা অনুর্বর, সেখানে জনবসতির ঘনত্ব কম। অনুকূল আবহাওয়া ও উপযুক্ত মৃত্তিকার জন্য দার্জিলিং ও আসামের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর চা উৎপন্ন হয় এবং বাগিচা-শিল্পে কাজের জন্য দুর্গম হলেও ওই অঞ্চলে লোকে ভিড় জমায় ও জনসংখ্যা বাড়িয়ে তোলে।

(৪) খনিজ সম্পদ ও শিল্প

প্রতিকূল জলবায়ু ও অনুর্বর মৃত্তিকা থাকা সত্ত্বেও যেখানে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য দেখা যায়, সেখানে ভূ-প্রকৃতি দুর্গম হলেও কাজের সুবিধা থাকায় জনসংখ্যা বেশি হয়। ভারতের বিভিন্ন কয়লাখনি অঞ্চলে (রাণিগঞ্জ ও ঝরিয়া) এইজন্য জনঘনত্ব বেশি। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর অঞ্চলের বিভিন্ন খনি ও শিল্পাঞ্চলে এই একই কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

(৫) যোগাযোগ ব্যবস্থা

ব্যাবসা-বাণিজ্যের যোগাযোগ পথের সঙ্গমস্থল বা বন্দর এলাকায় অবস্থানের জন্যও কোনো অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি ও তার আশপাশের অঞ্চল, অনেকগুলি রেলপথ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায়, বর্তমানে একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। মহারাষ্ট্রের পুণে শহরটির আশপাশও ওই একই কারণে ঘনবসতিপূর্ণ হয়েছে।

(৬) বন্দরের সান্নিধ্য

নবগঠিত হলদিয়া, কাণ্ডালা প্রভৃতি বন্দর এলাকা ও কাছাকাছি অঞ্চলে জীবিকার সুযোগ-সুবিধা থাকায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের লোককে আকৃষ্ট করে ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

(৭) নদনদীর সান্নিধ্য

গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, গোদাবরী এবং মহানদী উপত্যকার উর্বর ভূ-প্রকৃতি ও জলপথে যাতায়াতের সুবিধার জন্য প্রাচীন কাল থেকেই ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

(৮) স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব

বৃক্ষহীন মরুভূমি (যেমন : রাজস্থানের মরু অঞ্চল) অথবা গভীর অরণ্যসংকুল অঞ্চল (যেমন : আন্দামানের বনভূমি অঞ্চল) মানুষের জীবনধারার অসুবিধার জন্য জনবহুল হয়ে উঠতে পারে না।

(৯) অর্থনৈতিক ও (১০) রাজনৈতিক অবস্থা

ব্যাবসাবাণিজ্যের অর্থ বিনিয়োগের উপযুক্ত কেন্দ্র ও রাজনৈতিক কারণে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই প্রভৃতি শহরগুলি ও তার আশপাশের অঞ্চল, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের আকৃষ্ট করে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে।

(১১) ধর্মীয় কারণ

সাধারণভাবে ভারতবাসীরা খুবই ধার্মিক ও নানা দেবদেবীর পূজারি। এইজন্য মথুরা, পুরী, বারাণসী, নবদ্বীপ, হরিদ্বার প্রভৃতি ধর্মস্থানগুলি তীর্থযাত্রীদের সমাগমে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

(১২) ঐতিহাসিক কারণ

ভারতের ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থানগুলো (আগ্রা, দিল্লি, জয়পুর, প্রভৃতি) স্বাভাবিক ভাবেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করায় – বহুদিন ধরেই ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

(১৩) সরকারি নীতি

সরকারি নীতি অনুযায়ী, পরিকল্পনামাফিক ও বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধাযুক্ত নতুন কোনো নগরী (চণ্ডিগড়) বা উপনগরী (লবণ হ্রদ অঞ্চল) স্থাপিত হলে লোক বসবাসের সুবিধার জন্য সেখানে ভিড় করে জনসংখ্যা বাড়িয়ে তোলে।

(১৪) শিক্ষা ও সংস্কৃতি

নবদ্বীপ, বারাণসী, শান্তিনিকেতন প্রভৃতি শহরগুলো শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসাবে জনসাধারণকে আকৃষ্ট করে ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

(১৫) পর্যটন কেন্দ্র

পুরী, দার্জিলিং, সিমলা, মুসৌরি প্রভৃতি স্থান পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে। প্রসিদ্ধ হওয়ায় ওইসব স্থানে জনবসতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

(১৬) স্বাস্থ্য কেন্দ্র

গিরিডি, মধুপুর, রাঁচি, চুণার প্রভৃতি স্থান স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতিলাভ করায় এইসব অঞ্চলে জনসমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে।

(১৭) অনুপ্রবেশ

পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে পার্শ্ববর্তী বিদেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকহারে অনুপ্রবেশ ঘটায় অস্বাভাবিকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Leave a reply