Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

জোটনিরপেক্ষ নীতির পটভূমি ও লক্ষ্য কী ছিল? এই নীতি কতদূর সফল হয়েছিল?

জোটনিরপেক্ষ নীতি

সূচনা

সদ্যস্বাধীন ভারতে নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু এই জোট নিরপেক্ষ নীতির উদ্‌গাতা ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের যে ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়েছিল, ভারত সে ব্যাপারে সচেতনভাবে উদাসীন থেকে যে বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেছিল তাই জোটনিরপেক্ষ নীতি।

ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে অন্যপথে চালিত করে। এশিয়ার সদ্য স্বাধীন দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে জওহরলাল নেহরু পররাষ্ট্র নীতিতে জোটনিরপেক্ষতার আদর্শকে শ্রেয় বলে মনে করেছিলেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাপী ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে সদ্যস্বাধীন দেশগুলিকে রক্ষা করা ও তার বিরুদ্ধে ঐক্যকে সুনিশ্চিত করাই ছিল নেহরুর পররাষ্ট্র নীতির মূল কথা।

ঠান্ডা লড়াই 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতির আঙিনায় যে দুটি পরস্পরবিরোধী পক্ষ আমেরিকা ও সাম্যবাদী রাশিয়ার উদ্ভব ঘটে তাদের সঙ্গে সদ্যস্বাধীন দেশগুলি যদি কোনো একটি পক্ষ অবলম্বন করে তবে আবার বিশ্বে অশান্তি ও যুদ্ধের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আর সেই অশান্ত পরিস্থিতির ঢেউয়ে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলির শিক্ষা, দীক্ষা, জনগণের ন্যূনতম চাহিদা ভূলুণ্ঠিত হবে। তাই এইসব দেশ শান্তিবিঘ্নকারী ঠান্ডা লড়াই থেকে দূরে অবস্থান করে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে চেয়েছিল। আর এর থেকেই জন্ম হয় জোটনিরপেক্ষ নীতির।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮-২৬ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং-এ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলির সম্মিলিত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয়। এর পর ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে কায়রোতে, সেপ্টেম্বরে বেলগ্রেডে, ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে লুসাকায়, ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে আলজিরিয়ায়, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকোয়, ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে হাভানায়, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে হারারে এবং ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে জাকার্তায় জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির সম্মেলন আহ্বত হয়।

জোটনিরপেক্ষতার লক্ষ্য

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল বিশ্বশান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া, ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা, বিবাদমান দুই সামরিক শিবিরের পাশাপাশি একটি তৃতীয় পক্ষের জন্ম দেওয়া। এই তৃতীয় পক্ষ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অব্যাহত প্রয়াস ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

সাফল্য

জোটনিরপেক্ষ নীতি অনেক ক্ষেত্রেই তার সফলতাকে তুলে ধরে। এই নীতির প্রথম সাফল্য হল, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সংঘাতের পশ্চাতে চিন-মার্কিন সংঘর্ষের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, ভারতের হস্তক্ষেপে তা যুদ্ধে পরিণত হয়নি। এ ছাড়া মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের উদ্যোগ নিলে ফ্রান্স ও ব্রিটেন, মিশরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ভারতের প্রতিবাদ ও শান্তি স্থাপনের সদিচ্ছার কারণে চরম আকার ধারণ করতে পারেনি। কিন্তু জোটনিরপেক্ষ নীতি তার চলার পথকে সর্বদা সুগম করে তুলতে পারেনি। ভারত-চিন যুদ্ধ এই নীতিকে এক সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের গুরুত্ব

নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও জোট-নিরপেক্ষ নীতির ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই নীতি এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলিকে দুই শক্তিধর দেশের ঠান্ডা লড়াইয়ের উত্তাপ থেকে দূরে সরিয়ে রেখে তাদের অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্যকে বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। বিশ্বরাজনীতিতে সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি করাকে অন্য দিকে তেমনি জোটনিরপেক্ষ নীতির মূল বার্তাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়াই ছিল এই নীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য।

উপসংহার

যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বের শ্মশানভূমি থেকে আবার যাতে যুদ্ধের বিস্ফোরণ ঘটতে না পারে, তার জন্য জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। বর্ণবৈষম্যবাদ, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্বশান্তির পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিল। তবে এই নীতি উদাসীনতা, নিরপেক্ষতার চাইতে কতটা প্রতিবাদী চরিত্র লাভ করেছিল, সে জায়গায় কিছুটা হলেও জিজ্ঞাসা থেকে যায়।

Leave a reply