Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে ভগিনী নিবেদিতার অবদান তুলে ধরো।

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে ভগিনী নিবেদিতার অবদান

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি ও সত্যানুসন্ধানী সাধিকা নিবেদিতা সম্বন্ধে রাষ্ট্রপুর সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “মনে হত যেন প্রাচীন কালের কোনো ঋষির যুক্ত আত্মা এঁর (পাশ্চাত্য) দেহে পুনর্জন্ম গ্রহণ করেছে, যাতে পাশ্চাত্য জীবনীশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ইনি পুরাতন ভালোবাসার চেনা জায়গাটিতে ফিরে এসে এখানকার জনগণের সেবা করতে পারেন।”

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম দূত হলেন কর্মযোগী, বৈদান্তিক সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের মানসকন্যা ভগিনী নিবেদিতা। নিবেদিতার জাতীয় ভাবনা নিহিত আছে তাঁর ‘The Master a saw Him’, ‘Notes of some wanderings with Swami Vivekananda, ‘The web of Indian life’ প্রভৃতি গ্রন্থে। স্বামীজির আহবানে সাড়া দিয়ে নিবেদিতা (তখন মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল) 1898 খ্রিস্টাব্দের 28 জানুয়ারি ভারতে এসেছিলেন। তিনি সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের কাছে দীক্ষিত হন এবং নতুন নাম ‘নিবেদিতা’ শব্দে অলংকৃত হন।

স্বামীজি তাঁর মানসকন্যা নিবেদিতাকে বলেছিলেন, “স্বদেশ ও ধর্মের মধ্যে যেন সমন্বয় ঘটে অর্থাৎ শিক্ষা যেন একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের দেশপ্রেমী ও ধর্মপ্রাণ করে তোলে। হিন্দুধর্ম নিষ্ক্রিয় না থেকে সক্রিয় এবং অপরের উপর প্রভাবশালী হোক…. ভারতের অভাব কর্মকুশলতা, কিন্তু সেজন্য প্রাচীন চিন্তাশীল জীবন সে যেন কখনও ত্যাগ না করে।”

দীক্ষাগুরু এবং শিক্ষাগুরু সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের আদেশে নিবেদিতা 13 নভেম্বর 1898 খ্রিস্টাব্দে মা সারদাদেবীর উপস্থিতিতে বাগবাজার পরিতে নারীশিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয়ের সূচনা করেন। শ্রীমা সেদিন প্রার্থনা করেন,”যেন এই বিদ্যালয়ের ওপর জগন্মাতার আশীর্বাদ বর্ষিত হয় এবং এখান থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত মেয়েরা যেন আদর্শ বালিকা হয়ে ওঠে।

সাধিকা নিবেদিতা অনুভব করেছিলেন যে, প্রাচ্যের মেয়েদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বীজ রোপণ করে তাদের আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মত্যাগী করে তুলতে হলে চাই শিক্ষা। তাঁর মতে ভারতীয় নারীসমাজ যদি জাতীয়তার মহা আরতি সম্পাদন করতে পারে, তাহলে ভারতমাতার মন্দিরটি সর্বতোভাবে আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। নিবেদিতার ভাষায়, “Her (Indians) sanctuary today is full of shadows. But when the womanhood of India can perform the great Arati of Nationality, that temple shall be all light, ray, the dawn verily shall be near at hand.”

কর্মযোগী পুরুষ স্বামী বিবেকানন্দের প্রত্যাশা ছিল যে, তাঁর মানসকন্যা নিবেদিতা কেবল নারী জাগরণের জন্য আসেনি, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমগ্র ভারতবাসীর জাতীয়তাবাদকেন্দ্রিক জাগরণের জন্যই তিনি এসেছেন। ভারতীয় জাতীয়তার অন্যতম পূজারি ও প্রবন্ধা হয়ে নিবেদিতা, গুরুর প্রত্যাশাপূরণে ব্রতী হয়েছিলেন। নবজাগরণের কাণ্ডারি নিবেদিতা বুঝেছিলেন যে, জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই জাতীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাঁর কাছে জাতির আপন স্বভাব, আপন প্রকৃতি হল জাতীয়তা এবং এটি এক পবিত্র ভাব ও বস্তু। এই পরিষভাবে উন্মুখ হয়ে তিনি জাতীয়তার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বলেছেন, “হে জাতীয়তা! তুমি আমার কাছে সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান যে কোনো রূপে এসো, আমাকে তোমার করে নাও।”

তিনি বুঝেছিলেন যে, মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম হাতিয়ার হল জাতীয়তার শিক্ষা। আর জাতি জাগরণের জন্য চাই নাগরিক চেতনা তথা Civic ideal এর উন্মেষ। তাই তিনি তাঁর ‘The civic ideal’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “… the elements of nationality are civic and to these civic components it is that the individual stands most directly and most permanently related.”

নিবেদিতার কাছে জাতীয় আন্দোলন হল সর্বাত্মক নবজাগরণ, যে জাগরণের অজ্ঞানে আছে শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প, রাজনীতি প্রভৃতি। এই সর্বাত্মক নবজাগরণের জন্য নিবেদিতার অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিবেকানন্দ সোসাইটি, বিবেকানন্দ বোর্ডিং হাউস, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ডন সোসাইটি প্রভৃতি।

নবজাগরণের ঢেউ তাঁর মধ্যে ক্রিয়াশীল ছিল বলেই তিনি বলেছিলেন, ‘My aim is nation making পবিত্রতার মূর্ত প্রতীক নিবেদিতা বুঝেছিলেন যে, জাতি গঠনে চাই জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন। এই জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে তথা স্বাধীনতা সংগ্রামে গতি আনতে হলে চাই জাতীয় প্রতীক, জাতীয় পতাকা। তাই তিনি 1905 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় পতাকার রূপ দেন এবং 1906 খ্রিস্টাব্দে ওই পতাকা প্রদর্শিত হয়। মাদাম কামা, নিবেদিতা সৃষ্ট জাতীয় পতাকা 22 আগষ্ট 1907 খ্রিস্টাব্দে প্রথম উত্তোলন করেন।

উপসংহার

ভগিনী নিবেদিতা হলেন ভারতের জাতীয় পতাকার পথিকৃৎ তা ছাড়া ঋষি অরবিন্দের সাহচর্যে যতীন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখদের নিয়ে গঠিত গুপ্ত রাজনৈতিক সমাজ, অনুশীলন সমিতি, ডন সোসাইটি প্রভৃতি বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সঙ্গে ভগিনী নিবেদিতা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। তাই সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের মানসকন্যা নিবেদিতা ছিলেন জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম দূত । উপসংহার: কর্মযোগী বৈদান্তিক সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের মানসকন্যা ধর্মপরায়ণা নিবেদিতা ভারত তথা ধরণির বুকে জাতীয়তাবাদের যে দান রেখে গেছেন সেই দান ভারতবাসী যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে।

Leave a reply