Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা গুলি আলোচনা করো।

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সুবিধা ও অসুবিধা

গণতন্ত্র হল জনগণের শাসন। জনগণের শাসন প্রকৃত অর্থে জনগণের হয়ে ওঠে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে এমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে জনগণ সরাসরি শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। প্রাচীন গ্রিস ও রোমে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে ওই ব্যবস্থা বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও সুইটজারল্যান্ডের কয়েকটি ক্যান্টনে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সরকার পরিচালনায় এইরূপ শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে।

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সুবিধা

প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিম্নলিখিত সুবিধেগুলি লক্ষ্য করা যায়—

১) প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র

গণতন্ত্র প্রকৃত অর্থে জনগণের শাসন হয়ে ওঠে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। কারণ একমাত্র প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রেই জনগণ সরাসরি শাসনকার্য পরিচালনায় অংশ নিতে পারে।

২) সহজ-সরল প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র

জনগণ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে বলে শাসনকার্য পরিচালনায় কোনো প্রকার জটিলতার সৃষ্টি হয় না। তাই এরূপ ব্যবস্থাকে সহজ-সরল বলা
হয়।

৩) কম ব্যয়বহুল

পরোক্ষ গণতন্ত্রে আইনসভা- প্রশাসনিক কাঠামো প্রভৃতি গড়ে তুলতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে এরূপ প্রয়োজন না থাকায় ব্যয়বাহুল্য থেকে দেশ মুক্তি পায়।

৪) সরকার স্বৈরাচারি হতে পারে না

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র স্বৈরাচার প্রতিরোধে সাহায্য করে। জনসাধারণ রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে বলে সরকারের পক্ষে স্বৈরাচারি কোনো আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না।

৫) দ্রুত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে সময় সংক্ষেপ সম্ভব হয়। এরূপ ব্যবস্থায় জনসাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে বলে ঘটনাস্থলেই সিদ্ধান্ত গৃহীত বা প্রত্যাখ্যাত হয়।

৬) গণসচেতনতা বৃদ্ধি পায়

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনসাধারণকে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে হয় বলে জনসাধারণের মধ্যে কর্মনিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা, সক্রিয়তা ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়।

৭) অভিযোগ মুক্তশাসনব্যবস্থা

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে সমস্ত জনসাধারণই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত থাকে বলে সরকারের বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ থাকে না।

৮) আমলানির্ভর নয়

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র আমলাতান্ত্রিকতা, দুর্নীতি ইত্যাদি প্রতিরোধে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের অসুবিধা

উপরোক্ত সুবিধাগুলি থাকলেও প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের বেশ কিছু অসুবিধাও আছে। যেমন –

১) বড়ো রাষ্ট্রের পক্ষে অনুপযোগী

আয়তনে বড়ো ও বহুজনসংখ্যাবিশিষ্ট রাষ্ট্রে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র অচল। কারণ, বিপুলসংখ্যক জনগণের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক কার্যে অংশগ্রহণ করা অসম্ভব।

২) জটিলতা দেখা দেয়

এরূপ শাসনব্যবস্থার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে বিরোধিতার সৃষ্টি হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা দেখা দেয়।

৩) অজ্ঞ ও অশিক্ষিত জনগণ

জনসাধারণের অধিকাংশই অশিক্ষিত ও অজ্ঞ হয় বলে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য যে উন্নত চেতনার প্রয়োজন হয়, তা প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে দেখা যায় না।

৪) জরুরি অবস্থার অনুপযোগী

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণের মধ্যে পরস্পরবিরোধী মতের সৃষ্টি হলে জরুরী প্রয়োজনে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না।

৫) বহুভাষাভাষী রাষ্ট্রের পক্ষে অনুপযোগী

যে-দেশে বহুভাষা, বহুজাতির অবস্থান সেখানে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র সফল নাও হতে পারে। কারণ এরূপ ক্ষেত্রে প্রত্যেক গোষ্ঠী নিজ নিজ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে।

৬) ব্যক্তিগত প্রাধান্যর সৃষ্টি হয়

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে শাসনকার্য পরিচালনায় জনসাধারণের সরাসরি অংশ গ্রহণের সুযোগ অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উচ্চাশা এবং ব্যক্তিগত প্রাধান্যের মনোভাব গড়ে তোলে।

৭) ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে পারে

এরূপ শাসনব্যবস্থায় জনগণের অধিকাংশ অজ্ঞ ও অশিক্ষিত হয় বলে সুযোগসন্ধানী ও চতুর লোকের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে পারে।

৮) নাগরিকদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ বিঘ্নিত হয়

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণকে রাজনৈতিক কাজে অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় বলে জীবনের অন্যান্য দিকগুলি, যেমন— শিল্প, সাহিত্য, সংগীত ইত্যাদি অবহেলিত হয়।

মূল্যায়ন

সমালোচনা সত্ত্বেও এ কথা ঠিক যে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র হল প্রত্যক্ষ ‘গণতন্ত্র। একারণেই আজও অনেক রাষ্ট্রের সংবিধানে গণভোট, গণউদ্যোগ, পদচ্যুতি ইত্যাদির ন্যায় প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সংযোজন ঘটেছে।

Leave a reply