Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

রাজপুতদের সমাজ জীবন ও সাংস্কৃতিক জীবন সম্বন্ধে আলোচনা কর।

স্মিথের মতে রাজপুতরা ছিলেন এক মিশ্রিত জাতি। তার ফলে বর্ণভেদ প্রথা রাজপুত সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র ছাড়াও রাজপুত সমাজে আরও কতকগুলি নিম্নবর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজপুত সমাজে ব্রাহ্মণরা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী ছিলেন এবং তাঁরা রাজাদের মন্ত্রী ও পরামর্শদাতা রূপে নিযুক্ত হতেন। তাঁরা দার্শনিক ও পুরোহিত বলেও পরিচিত হতেন। প্রাণদন্ড হতে এরা মুক্ত ছিলেন। শাসক ও সৈনিক শ্রেণী ছিল ক্ষত্রিয়রা। বৈশ্যরা সমাজে ব্যবসা বাণিজ্য করত। শূদ্ররা কৃষি ও শিল্প কার্যে নিযুক্ত থাকত। অস্পৃশ্যরা গ্রাম ও নগরের বাহিরে বসবাস। করত। প্রথম দিকে রাজপুতদের মধ্যে বর্ণপ্রথা কঠোর ছিল না। সমাজে অসবর্ণ বিবাহ প্রচলিত ছিল। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়র মধ্যে বিবাহ হত। কিন্তু পরবর্তী কালে সমাজে বর্ণপ্রথা কঠোর হয়। কালক্রমে সমাজে জন্ম, বৃত্তি, স্থান অনুসারে বহু নতুন বর্ণের সৃষ্টি হল। যেমন ব্রাহ্মণের মধ্যে গৌড় ব্রাহ্মণ, কনৌজ ব্রাহ্মণ, কোংকন ব্রাহ্মণ ইত্যাদি শ্রেণী গড়ে উঠেছিল।

রাজপুত্র সমাজে ভাট বা চারণকারদের বিশেষ সম্মান ছিল। এরা রাজপুত বীরদের কৃতিত্ব গানের মাধ্যমে সর্বত্র প্রচার করতেন। পারিবারিক বিবাদ ও বিবাহ সংক্রান্ত বিরোধকারীরা মধ্যস্থতা করতেন। পরিবারের জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহের হিসাব রাখতেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রেও চারণরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেন। সংবাদ আদান প্রদানের ক্ষেত্রেও এদের বিশেষ ভূমিকা ছিল।

সমাজের সকলে চারণদের মান্য করে চলতেন। রাজপুত রাজারা চারণদের সন্মান করতেন। তবে এরা স্থায়ী ভাবে এক স্থানে বাস করতেন না। রাজপুত দরবারে বিশিষ্ট চারণগণ ১ম শ্রেণীর সর্দারের মত অধিকার ও সমান লাভ করতেন। রাজপুত সমাজে নারীদের যথেষ্ট সন্মান ছিল। নারীদের মধ্যে পর্দা প্রথা প্রচলিত ছিল কিন্তু সমাজে তারা অবাদ স্বাধীনতা ভোগ করতেন। বিবাহের ক্ষেত্রে রাজপুত কন্যাদের মত অগ্রাহ্য করা হত না। “স্বয়ম্বর প্রথা” রাজপুত সমাজে প্রচলিত ছিল। রাজপুত নারীরা শিক্ষিতা হতেন ও রাষ্ট্র জীবনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতেন। এদের দেশাত্মবোধ ছিল সর্বজন বিদিত। স্বদেশ রক্ষার জন্য স্বামীর সাথে সমান ভাবে যুদ্ধ করতেও পশ্চাদ পদ হতেন না। নারী সমাজে সতী প্রথা বিশেষ শ্রদ্ধার ছিল। তবে সমাজে বিধবা বিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল না। পুরুষের মধ্যে বহু বিবাহ প্রথা ব্যাপক প্রচলিত ছিল। শিশু কন্য সমাজে কাম্য ছিল না কোন কোন সময় শিশু কন্যাকে হত্যা করা হত। সমাজের উচ্চশ্রেণী ছিল বিলাস প্রিয়। তাদের বহু ক্রীতদাস থাকত। নারী পুরুষ মূল্যবান অলংকার ও বহু রঙের পোষাক পড়তে ভালোবাসত। মদ্যপান ও আফিন সেবন বহুল প্রচলন ছিল। সঙ্গীত, নৃত্য ও শিকার জনসমাজের সাধারণ আমোদের অঙ্গ ছিল। পতিতা জীবনের সন্ধানও পাওয়া যায় রাজপুত সমাজ জীবনে।

রাজপুতদের ‘মান’ বড় ভয়ানক বস্তু। আত্মসম্মান সম্বন্ধে কৃষক হতে ভূম্যধিকারী ‘ঠাকুর’সকলেই সচেতন ছিলেন। রাজপুতদের বিবাদ কুলপতি এবং জ্ঞাতিমুখ্যগণ সাধারণত মীমাংসা করতেন। রাজপুত জাতিদের বা কুলে মধ্যে বিবাধ বা যুদ্ধ পুরুষাক্রমে চলত।

রাজপুত জাতির Land hunger বা প্রচলিত কথায় ‘মাটির ক্ষুধা’ প্রধান বিরোধের কারণ ছিল। রাজপুতানায় সামাজিক নাচগানের আসরে ‘চারণ’ এবং ‘ভাটগণ’ সক্রিয় অংশগ্রহণ। করত না। এরা ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করতেন। চারণদের গান অভিজাতকূলকে প্রাণবন্ত করত। চারণগণ স্বল্পে সন্তুষ্ট থাকত এবং “ধৃতি” ও “তেজ” চারণদের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল।

সাহিত্য শিল্প রাজপুত জাতি :

রাজপুত রাজারা শিল্প ও সাহিত্যের পরম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ধর রাজ্যের রাজা মুঞ্জ খ্যাতনামা কবি ছিলেন। রাজা ভোজ চিলেন সুপন্ডিত। তিনি ‘আয়ুর্বেদ সর্বস্ব’ ও ‘রাজমৃগষ্কা’ নামক দুইটি গ্রন্থ লিখেছিলেন। পদ্মগুপ্ত, ধনিক, হলায়ুধ ধনঞ্জয় প্রমুখ পন্ডিতরা তাঁর রাজসভার কবি ছিলেন। কবি রাজশেখর ‘কর্পূর মঞ্জরী’ নামে একটি নাটক রচনা করেছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে কনৌজের রাজা মহেন্দ্রপালের রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন। রাজপুত রাজাদের দ্বারা নির্মিত দুর্গ প্রাসাদ, স্নানাগার, কৃত্রিম হ্রদ প্রভৃতি।

রাজপুত শিল্পীদের উন্নত শিল্প জ্ঞানের সাক্ষ্য বহন করে। রাজপুত শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে চিতোরগড়, রণথন্তর, কুন্তলগড়, আসীরগড় দূর্গাদি এবং গোয়ালিয়রে রাজা মানসিংহের প্রাসাদ, জয়পুরের অম্বর প্রাসাদ উল্লেখ করা যায়। এই রাজাদের নির্মিত মন্দিরগুলি মধ্যে চিতোরের কালিকামাতা মন্দির, উদয়পুরের একলিঙ্গ মন্দির আবু পর্বতে অবস্থিত জৈন মন্দির সমূহ, সুনকের নীল কন্ঠ মন্দির বিশেষভাবে স্মরণীয়।

Leave a reply