Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

গুপ্ত যুগের ইতিহাসে স্কন্দগুপ্তের মূল্যায়ণ কর?

গুপ্ত যুগের ইতিহাসে স্কন্দগুপ্তের মূল্যায়ণ

কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর তার পুত্র স্কন্দগুপ্ত ৪৫৬ খ্রীঃ গুপ্ত রাজ সিংহাসনে বসেন। অনেকের ধারণা সিংহাসনের উপর তার ন্যায্য দাবি ছিল না। তিনি বল পূর্বক সিংহাসন অধিকার করেন। এই মতের যুক্তিগুলি হল— প্রথমত, উত্তরপর্বের লেখামালায় গুপ্ত রাজবংশের তালিকায় স্কন্দগুপ্তের উল্লেখ নেই অথচ সেখানে প্রথম কুমারগুপ্তের উত্তরাধিকারী রূপে তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই পুরুগুপ্তের নাম আছে। দ্বিতীয়ত, স্কন্দগুপ্তের তাঁর লেখা নিজের মায়ের নাম উচ্চারণ করেননি অথচ তাঁর পূর্বসূরিদের ক্ষেত্রে তাঁদের মায়েদের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই পুরুগুপ্তের কিন্তু মহিষী অনন্তদেবীর পুত্র। তৃতীয়ত, জুনাগড় লেখে স্কন্দগুপ্তের সম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছে, অপরাপর রাজকুমারদের দাবি উপেক্ষা করে লক্ষ্মী বা রাজলক্ষ্মী তাকে স্বেচ্ছায় পতিরূপে বরণ করেন। স্কন্দগুপ্তের এক শ্রেণীর স্বর্ণমুদ্রার কথাও এই প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়। এই মুদ্রায় তাকে রাজলক্ষ্মীর হাত থেকে অঙ্গুরীয় বা মালা গ্রহণের করতে দেখা যায়। অনেকে এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনে করেন, প্রথম কুমার গুপ্তের মহির্ষীর গর্ভে নয়, অন্য কোন পত্নী বা উপপত্নীর গর্ভে স্কন্দগুপ্তের জন্ম হয়েছিল। ফলে গুপ্ত সিংহাসনের উপর তাঁর কোন ন্যায্য দাবি ছিল না; তিনি পিতার প্রকৃত উত্তরাধিকারী পুরুগুপ্তকে বঞ্চিত করে বলপূর্বক সিংহাসনে বসেন। স্কন্দগুপ্ত বাহুবলের সাহায্যে পৈতৃক সিংহাসন অধিকার করেন, এমত সকলের স্বীকার করেন না। তাঁরা বলেন,গুপ্ত হয়তো মহাদেবী অনন্তদেবীর পুত্র নন। কিন্তু তিনি নিঃসন্দেহে তার ভাইদের মত যোগ্য ছিলেন। আসলে স্কন্দগুপ্ত বলপূর্বক, না স্বাধিকারে, পৈতৃক সিংহাসনে বসেন তা এমনও সুনিশ্চিত নয়। তবু মনে হয়, প্রথম কুমার গুপ্তের মৃত্যুর অব্যবহিত পরই তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন। পুরুগুপ্ত হয়তো তাকে বাধা দিয়েছিলেন কিন্তু স্কন্দগুপ্ত সে প্রতিরোধ অগ্রাহ্য করেন নিজের কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। স্কন্দ গুপ্তের সিংহাসন আরোহনের প্রায় অব্যবহিত পরই এক প্রবল প্রতিপক্ষ গুপ্ত রাজ্য আক্রমণ করেন। বহিঃশত্রুর আক্রমণে গুপ্ত রাজ্যের বিপর্যয় দেখা দেয় কিন্তু স্কন্দগুপ্ত নিজের বাহুবলে শত্রুদের চূর্ণ করে সে বিপর্যয় রোধ করেন।

স্কন্দগুপ্তের রাজত্বের শেষপর্বে, মধ্য এশিয়া থেকে শ্বেততুনরা দুর্বার গতিতে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তাঁদের অগ্রগতি রুদ্ধ করা সহজ ব্যাপার ছিল না। শ্বেতহুনরা যেমন সাহসী ছিলেন তেমনি ছিলেন নিষ্ঠুর। তাদের নেতা এটিলা এ সময় ইউরোপে ত্রাসের সঞ্চার করেন। কিন্তু স্কন্দগুপ্ত অন্য ধাতুতে গড়া ছিলেন। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে হুনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং তাদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। স্কন্দগুপ্তের হাতে পরাজয়ের পর তারা পারস্য অভিমুখে অগ্রসর হন এবং পারস্যের রাজা নিহত হন। এর পর পারস্য হূনদের পদানত হয়। যে শ্বেত হূণরা পারস্য ও পূর্ব ইউরোপের প্রায় প্রায় সব অংশই জয় করলেন কিন্তু স্কন্দগুপ্তের কাছে তারা শোচনীয় ভাবে পরাজিত হলেন। এই বিপর্যয় তাঁদের মনে এমন ত্রাসের সঞ্চার করে যে স্কন্দগুপ্তের মৃত্যুর বেশ কিছু কাল পরেও তাঁরা ভারত আক্রমণের কথা আর চিন্তা করেননি। সন্দেহ নেই, হূণদের বিরুদ্ধে বিজয়লাভই স্কন্দগুপ্তের শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। অনেকে মনে করেন, তাঁর রাজত্বের শেষের দিকের স্কন্দগুপ্ত রাজনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন এবং সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল তাঁর হস্তচ্যুত হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, পশ্চিমে গুজরাত থেকে পূর্বে বাংলা পর্যন্ত যে ভূখন্ড তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেন, অসংখ্য বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তা তিনি সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে যান। সাম্রাজ্যের অখন্ডতা রক্ষায় তাঁর এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে স্কন্দগুপ্তের সমর নৈপুণ্যের পরিচয় প্রতিফলিত হয়েছে। স্কন্দগুপ্তের রৌপ্যমুদ্রা থেকে জানা যায়, তিনি অন্ততপক্ষে ১৪৮ গুপ্তাব্দ বা ৪৬৮ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।

Leave a reply