Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

পরবর্তী বৈদিক যুগের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার কি কি পরিবর্তন হয়েছিল?

পরবর্তী বৈদিক যুগের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা

পরবর্তী বৈদিক যুগের সূচনা হয় ১০০০ খ্রীঃ পূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রীঃ পূ. মধ্যবর্তী সময়কালের মধ্যে। এই সভ্যতা বর্তমান উত্তরপ্রদেশ, উত্তর বিহার, এবং রাজস্থানে বিস্তার লাভ করেছিল। শতপথ ব্রাহ্মণে উল্লেখ আছে পূর্ব গাঙ্গেয় অঞ্চলে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।

অথর্ব বেদ থেকে জানা যায় ভরত ও পুরু উপজাতির মিলন থেকে কুরু উপজাতির সৃষ্টি হয়। এই কুরু ও পাঞ্চাল আর্য গোষ্ঠীগুলির শক্তি বৃদ্ধি পায়। কুরুর রাজা পরীক্ষিতের সময় থেকে বিভিন্ন জনপদের বিকাশ ঘটেছিল। এই সময় অনুষ, দ্রুহ, তুর্কশ ইত্যাদি জন্যগোষ্ঠীগুলির মধ্যে মিলন দেখা যায়। অল্পদিনের মধ্যে কুরু এবং পাঞ্চালের অবক্ষয় হয় এবং কোশল, কাশী, বিদেহ শক্তিশালী হয়। কোশলই পরবর্তী বৈদিক সমাজ যথেষ্ট ভাবে প্রভাবিত করেছিল। কোশলে রাজত্ব করত ইক্ষাকু বংশ। এদের রাজধানী ছিল অযোধ্যা এর রাজা ছিলেন “পারা।” বিদেহ রাজধানী ছিল মিথিলা। রাজা ছিলেন “জনক”। মগধ, অঙ্গ এবং বঙ্গ তখন আর্য সভ্যতার বাহিরে ছিল। এই সময় অনেক উপজাতির নাম পাওয়া যায়। যথা অন্ধ, পুন্ড্র, শবর, পুলিন্দ, নিশাদ, বিদর্ভ কুন্ডিজ ইত্যাদি। এই সময় থেকে রাজপদ বংশানুক্রমিক হয়ে ওঠে। এবং রাজা দেবতার অংশ বিশেষ বলেও পরিচিত হন। রাজকীয় ক্ষমতা প্রায় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।

পরবর্তী বৈদিক যুগে গরু এবং জমির জন্য যুদ্ধ হত। এর ফলেই ব্যক্তিগত মালিকানার সৃষ্টি হয়। এই সময় শাসনব্যবস্থায় গ্রামীণ, সেনানী এবং পুরোহিত এই তিন শ্রেণীর কর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এই যুগে কর ও রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল তবে কর বন্টনে সাম্য ছিল না। এই যুগে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল। স্থপতি ও শতপতি এই দুই শ্রেণীর কর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বিচার ব্যবস্থায় রাজার ভূমিকা যথেষ্ট ছিল। ছোট মামলা বিচার করত “গ্রাম্যবাদীন ও তার সভা।

বৈদিক যুগের মত পরবর্তী বৈদিক যুগেও সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল পরিবার এবং পরিবারের প্রধান ছিল গৃহকর্তা। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি তবে অবসর বিনোদনের উপকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিবর্তন ঘটেছিল। অভিনয় এবং অভিনেতার ব্যাপক উল্লেখ পাওয়া যায়। আহার ও পরিধানের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। খাদ্যবস্তুর তালিকায় যবের সঙ্গে ধান যুক্ত হয়েছিল। পোষাক তৈরি উপাদানের সঙ্গে নতুন রেশম যুক্ত হয়েছিল। ধাতু নির্মিত আয়নার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়।

এই যুগের নারীর অবমূল্যায়ণ ঘটেছিল এ বিষয়ে সন্দেহ নাই। গৃহে ধর্মাচরণে, পুরোহিতদের ক্রম-বর্ধমান আধিপত্যের ফলে তাদের অধিকার বিশেষভাবে সঙ্কুচিত হয়েছিল। পারিবারিক জীবনেও নারী তার সম্মান হারিয়েছিল। বিবাহের নিয়মকানুন আগের তুলনায় কঠোর হয়েছিল। বাল্যবিবাহ, বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল। নারীকে মদ ও পাশার সমপর্যায়ভুক্ত মনে করা হত। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নারীর অধিকার সঙ্কুচিত হয়েছিল। সভায় প্রবেশ ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভের অধিকার তার ছিল না। এই যুগে “ব্রহ্মবাদিনী” নামে এক শ্রেণীর নারীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এরা সারাজীবন কুমারী থেকে বেদচর্চা করত।

এই যুগে কঠোর জাতিভেদ প্রথার উদ্ভব হয়। এর ফলে বিভিন্ন শ্রেণী ও বর্ণের মধ্যে বৈষম্য দেখা দেয়। এই সময় শূদ্রের দুর্দশাই চরমে উঠেছিল। শাস্ত্রে উল্লিখিত হয় শূদ্রকে ইচ্ছামত হত্যা করা যেতে পারে। শুদ্রকে হত্যা করলে ব্রাহ্মণকে প্রায়শ্চিত করতে হত না। পরিস্থিতির বিবর্তনের ফলে বৈশ্য এবং শূদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমে যেতে থাকে। অনেক সময় বৈশ্য ও শূদ্র মিলিত ভাবে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়ের মুখোমুখি দাঁড়াত। তৎকালীন সমাজ জীবনে যজ্ঞানুষ্ঠানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পুরোহিতদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তৎকালীন সমাজে বর্ণবৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে অস্পৃশ্যতার” সূচনা হয়। শুদ্রকে অপবিত্র মনে করা হত।

এই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতি ঘটে। “শ্রেষ্ঠীণ’ নামে ধনী বৈশ্যদের কথা জানা যায়। ব্যবসাযীদের “বণিজ” বলা হত। সমুদ্র বাণিজ্যও অপরিচিত ছিল না। এই সময়ে বণিকরা মিলিত ভাবে “গণ” বা সঙ্গ স্থাপন করেছিল। অর্থনীতিতে গরুর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। কিন্তু যজ্ঞ উপলক্ষে প্রচুর গরুকে হত্যা করা হত। যা অর্থনীতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট ক্ষতিকর ছিল। অর্থব বেদ থেকে জানা যায় ব্রাহ্মণরা নিয়মিত বদ্ধ গরুর মাংস আহার করত। তবে এই যুগের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা ছিল কৃষি। কৃষিকার্যের জন্য জমির মালিক হত ব্যক্তি বিশেষ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জমির মালিক ছিল পরিবার। পরিবার প্রধান জমির অধিকার ভোগ করত। মুদ্রার ব্যবহার বিশেষ প্রচলিত ছিল না। তবে ওজনের একটি একক “মান” ছিল। নিস্ক নামে একটি স্বর্ণখন্ড মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার হত। কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। মেয়েরা সূচীশিল্পে অংশ গ্রহণ করত। বিভিন্ন ধাতু ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল।

পরবর্তী বৈদিক যুগে প্রজাপতি, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র বিশেষ স্থান লাভ করে। বরুণ, ইন্দ্র, অগ্নি ইত্যাদি দেবতার প্রাধান্য হ্রাস পায়। এই যুগে রুদ্র ক্রমে শিবে পরিণত হয়। এছাড়াও দার্শনিক ধর্মচিন্তার উদ্ভব হয়। কর্মফল ও জন্মাত্তবাদের তত্ত্ব এই যুগে সৃষ্টি হয়। এই যুগে শয়তান, জাদু মন্ত্র, ডাকিনীবিদ্যা ইত্যাদি নানা কুসংস্কার মানুষের মনে দানা বেঁধেছিল। অন্যদিকে অবতারবাদের সূচনাও হয়েছিল। পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের অন্যতম উপাদান ছিল “উপনিষদ”। উপনিষদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী অতি উন্নত এবং বিচারসম্মত ছিল। উপনিষদে বলা হল “মানবাত্মা” ও পরমাত্মার অঙ্গ”। মৃত্যুর পর জীবের আত্মা পরমাত্মায় লীন হয়ে যায়। এর সাথেই জড়বাদী দর্শন চিন্তার উদ্ভব হয়।

Leave a reply