Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

ঋকবৈদিক যুগের অর্থনৈতিক জীবন আলোচনা কর।

ঋকবৈদিক যুগের অর্থনৈতিক জীবন

আর্যরা অর্ধ যাযাবর পশুচারক হিসাবেই ভারত উপমহাদেশে আগমন করে এবং এই কারণে গবাদি পশুর দ্বারা উৎপাদিত সামগ্রী ছিল উহাদের জীবনধারণের প্রধান উপাদান। প্রথমদিকে পশুচারণই ছিল তাদের প্রধান উপজীবিকা। আর্যদের নিকট গোধনের মূল্য ছিল সর্বাধিক এবং মূল্যবান সম্পত্তি। আর্যরা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে তাদের পেশার পরিবর্তন ঘটে। তারা ক্রমেই পশুচারণ হতে কৃষিজীবীতে পরিণত হয়। বিশেষ করে লৌহের ব্যবহার শুরু হলে তা চাষের সহায়ক হয়।

ঋগ্বেদের যুগে আর্য সমাজ চারণ-ভিত্তিক সমাজ হতে কৃষি ভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হয়। ঋগ্বেদের যুগে আর্যসভ্যতা গ্রামীন সভ্যতার পরিণতি লাভ করে। এর ফলে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনে গ্রাম প্রধান অঙ্গরূপে স্থান গ্রহণ করে। কাঠ ও বাঁশ দ্বারাই আবাসিক ঘর-বাড়ী তৈরি করা হত। বিপদ-আপদ বা যুদ্ধের সময় স্থানীয় জনগণ ‘পুর’ নামে সুরক্ষিত স্থানে আশ্রয় নিত।

স্বনির্ভর গ্রামীণ ব্যবস্থা আর্যরা প্রবর্তন করেছিল কিনা তাহা সঠিক বলা যায় না। অনেকে মনে করেন স্বনির্ভর গ্রামীণ ব্যবস্থা আর্যরা আদিম অধিবাসীদের নিকট হতেই গ্রহণ করেছিল।

গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতা

সামগ্রিকভাবে আর্যরা ছিল কৃষিজীবী এবং তারা কৃষিকে মহান বৃত্তি হিসাবে মনে করত। কৃষি ও পশুপালন প্রধান দুটি জীবিকা ছিল। প্রথম দিকে গ্রামবাসী গ্রামের জমি সমষ্টিগত ভাবে চাষ করত ও ফসল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। কিন্তু ক্রমে জমিগ্রামের বিভিন্ন পরিবারের দখলে চলে যায় এবং এইভাবে ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভব হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধ ও উত্তরাধিকার সূত্রে জমি ভোগ দখলের সমস্যার উদ্ভব হয়। গ্রাম ছিল রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের মূল ভিত্তি। প্রত্যেক গৃহস্থ-পরিবারের নিজস্ব কৃষিভূমি ছিল। জলসেচ ও জমিতে সার দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। গ্রামের শাসনভার ‘গ্রামনী’ নামক এক কর্মচারীর হস্তে ন্যস্ত থাকত। পশুপালন ছিল। ঋক বৈদিক যুগের দ্বিতীয় প্রধান জীবিকা। গৃহপালিত পশুর মধ্যে প্রধান ছিল গরু। সে যুগে যমুনা নদীর দুই তীরস্থ অঞ্চল গো-সম্পদের জন্য সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ছিল। গোধন দ্বারা মানুষের সম্পদ নির্ধারিত হত। এমন কি সৈনিকরাও যুদ্ধের লুণ্ঠিত দ্রব্য হিসাবে গো-সম্পদই সর্বদাই অধিক কামনা করত। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ঘোড়া ও ভেড়ার গুরুত্বও যথেষ্ট ছিল। কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রয়োজনের জন্য অন্যান্য বৃত্তির উদ্ভব হয়। ঋগ্বেদের সূত্রধর ধাতুশিল্পী, চর্মকার, তন্তুবায় ও কুম্ভকারের উল্লেখ আছে। ধাতুর মধ্যে স্বর্ণ, তাম্র ও ব্রোঞ্জের ব্যবহার অধিক প্রচলিত ছিল। যদিও মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতি সে যুগে জানা ছিল না তথাপি সে যুগে মুদ্রার প্রচলন কিছু কিছু ছিল। বৈদিক সাহিত্যে নিস্ক’ ও ‘মানা’ নামক মুদ্রার উল্লেখ আছে। বৈদিক যুগে বণিক সম্প্রদায়ের উল্লেখ পাওয়া যায় যারা বিনিময় প্রথা ছাড়াও মুদ্রার বিনিময়ে দ্রব্য-ক্রয়-বিক্রয় করত।

ব্যবসা-বাণিজ্য

কৃষির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের সূত্রপাত হয়। গাঙ্গেয উপত্যকার পূর্বাঞ্চলে কৃষির প্রসার ঘটলে গঙ্গানদী বাণিজ্যের সহায়ক হয়ে উঠে এবং এর উপকূলে ছোট ছোট বাজার গড়ে ওঠে। শক্তিশালী জমির মালিকরা প্রথম ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রবৃত্ত হয়, কারণ তাদের মূলধন ছিল প্রচুর। এইভাবে সমাজের জমির মালিকদের ভিতর হতে বণিক শ্রেণীর উদ্ভব হয়। প্রথমদিকে স্থানীয়ভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্যের সূত্রপাত হয়। ঋগ্বেদে বাণিজ্যপোত ও সামুদ্রিক যাত্রার উল্লেখ হইতে মনে হয় ঋগ্বেদের যুগে সামুদ্রিক বাণিজ্যের সহিত আর্যরা অপরিচিত ছিল না। মোটামুটিভাবে বলা চলে যে ঋগ্বেদের যুগে অর্থনীতি মোটেই উন্নত ছিল না। মুদ্রার অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের চলাচল সহজ ছিল না। এবং পন্যের বিনিময়ে পন্যের আদান-প্রদানই রীতি ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল নিতান্তই প্রাথমিক পর্যায়ে। যানবাহন বলিতে প্রধান ছিল রথ ও চার চাকার গাড়ি। প্রথমটিতে ঘোড়া ও দ্বিতীয়টিতে বলদ ব্যবহার করা হত। ঐতিহাসিক ব্যাসামের মতে নিয়মিত ব্যবসায়ী ও মহাজন বলতে যা বোঝায় এই যুগে তার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় না, যদিও ঋণের উল্লেখ পাওয়া যায়।

Leave a reply