Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

প্রথম ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ সম্বন্ধে যা জানো লেখো।

প্রথম ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধ

প্রথম মাধব রাও ও তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে (১৭৬১ খ্রিঃ) আহম্মদ শাহ আবদালির কাছে মারাঠাগণ শােচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল । ফলে মারাঠা শক্তি ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে । এই সুযােগে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা ও কর্ণাটকে নিজ কর্তৃত্বকে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত করে । তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল সমগ্র ভারতে আধিপত্য স্থাপন করা । কিন্তু তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে পরাজয়বরণের কয়েক মাসের মধ্যেই অসুস্থ পেশােয়া বালাজী বাজীরাও মৃত্যুমুখে পতিত হন । সৌভাগ্যবশত পরবর্তী পেশােয়া প্রথম মাধব রাও দক্ষতা ও কৃতিত্বের দ্বারা মারাঠা শক্তিকে পুনঃসঞ্জীবিত করে তােলেন । উত্তর ভারতে মারাঠা শক্তির পুনর্জাগরণে ইংরেজ কোম্পানি শঙ্কিত হয়ে পড়ে । কিন্তু যুবক পেশােয়া মাধব রাও অকালে দেহত্যাগ করলে ( ১৭৭২ খ্রিঃ ) মারাঠাদের জাতীয় জীবনে আবার দুর্দিন নেমে আসে ।

প্রথম ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধের কারণ

মাধব রাও -এর মৃত্যুর পর তার ভাই নারায়ণ রাও পেশােয়া হন । কিন্তু তার পিতৃব্য রঘুনাথ রাও বা রাঘােবা পেশােয়া পদ দখলে উন্মুখ ছিলেন । তার চক্রান্তে এক গুপ্তঘাতকের হাতে পেশােয়া নারায়ণ রাও নিহত হলে রঘুনাথ রাও নিজেকে পেশােয়া বলে ঘােষণা করেন । অধিকাংশ মারাঠা সর্দারই রঘুনাথ -এর আচরণে অসন্তুষ্ট ছিলেন । নানা ফড়নবিশ সহ ওইসব বিক্ষুব্ধ মারাঠা সর্দার রাঘােবা’র বিরুদ্ধাচারণ করতে থাকেন । ইতিমধ্যে নিহত পেশােয়া নারায়ণ রাও -এর পত্নী একটি পুত্রসন্তান প্রসব করেন । নানা ফড়নবিশ প্রমুখ ওই সদ্যোজাত বালককে মাধব রাও নারায়ণ ( বা দ্বিতীয় মাধব রাও ) নাম দিয়ে প্রকৃত পেশােয়া বলে দাবি করেন । নানা ফড়নবিশ তার অভিভাবকরূপে নিযুক্ত হন ।

সুরাটের সন্ধি 

এই ঘটনায় রঘুনাথ রাও অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন । জাতীয় ঐতিহ্যের কথা ভুলে তিনি পেশােয়া পদকে নিজ কুক্ষিগত রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত ইংরেজের সাহায্যপ্রার্থী হন । তিনি যােগাযােগ করেন পুনার ব্রিটিশ রেসিডেন্টের সঙ্গে । বােম্বাই এর ইংরেজ কর্তৃপক্ষও মারাঠাদের গৃহবিবাদের সুযােগে ওই অঞ্চলে ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী ছিল । তাই এ সুযােগ তারা লুফে নেয় এবং রঘুনাথ রাও এর সাথে ‘ সুরাটের সন্ধি ’ স্বাক্ষর করে ( ১৭৭৫ খ্রিঃ ) । সন্ধি অনুযায়ী ইংরেজগণ রঘুনাথকে পেশােয়াপদে বসবার প্রতিশ্রুতি দেয় । বিনিময়ে পেশােয়া সলসেট ও বেসিন নামক দুটি স্থান এবং সুরাট ও ভারুচের রাজস্ব কোম্পানিকে ছেড়ে দিতে রাজি হলেন । রঘুনাথ কর্তৃক ইংরেজদের সাহায্য গ্রহণে মারাঠা সর্দারেরা হতবাক হলেও ভেঙে পড়লেন না । নানা ফড়নবিশ , সিন্ধিয়া , ভোঁসলে প্রমুখ মারাঠা সর্দারগণ দ্বিতীয় মাধব রাও -এর পক্ষ সমর্থন করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন । কিন্তু আরাসের ( Aras ) যুদ্ধে মারাঠা বাহিনী পরাজিত হয় । পেশােয়া মাধব রাও সহ মারাঠা সর্দারেরা পুরন্দরের দুর্গে আশ্রয় নেন । ইংরেজগণ রঘুনাথকে পেশােয়া বলে ঘােষণা করে ।

পুরন্দরের সন্ধি 

ইতিমধ্যে ব্রিটিশ পার্লমেন্টে ‘ রেগুলেটিং আইন ’ ( Regulating Act 1773 ) পাশ হয়ে গিয়েছে । এই আইনবলে বাংলার ব্রিটিশ গভর্নরকে ‘ গভর্নর জেনারেল’আখ্যা দেওয়া হয় । এবং সপরিষদ গভর্নর জেনারেলের অনুমতি ছাড়া বােম্বাই ও মাদ্রাজের গভর্নরদের যুদ্ধ বা শান্তি বিষয়ে কোনাে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় । তাই গভর্নর জেনারেলের পরিষদ বােম্বাইস্থ ইংরেজ কর্তৃপক্ষের একতরফা ভাবে স্বাক্ষরিত সুরাট সন্ধিকে বাতিল বলে ঘােষণা করে । তারা কর্নেল আপটনকে পুনার প্রকৃত মারাঠা কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝােতার জন্য প্রেরণ করেন । কর্নেল আপটন মারাঠাদের সাথে ‘ পুরন্দর ’ -এর সন্ধি স্বাক্ষর করেন । এই সন্ধি দ্বারা ─

( ১ ) ইংরেজগণ দ্বিতীয় মাধব রাও কে পেশোয়া বলে মেনে নেয় ।

( ২ ) রঘুনাথ রাওকে মাসিক ভাতাদানের ব্যবস্থা হয় ।

( ৩ ) কোম্পানি যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু নগদ অর্থ এবং সলসেট ও থানা অঞ্চল লাভ করে ।

প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ

‘পুরন্দরের সন্ধি’ বােম্বাইয়ের ইংরেজ কর্তৃপক্ষের মনঃপূত ছিল না । তাই তারা ইংল্যান্ডের ডাইরেক্টর সভার কাছে কলিকাতা কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করে । ডাইরেক্টর সভা শেষ পর্যন্ত পুরন্দরের সন্ধিকে নাকচ করে সুরাটের সন্ধিকেই বহাল রাখেন । উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস রঘুনাথ রাও এর পক্ষ অবলম্বন করলে প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে ।

সলবাই এর সন্ধি

আসন্ন ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে নানা ফড়নবিশ মহীশূরের রাজাকে মারাঠাদের পক্ষে আনতে সক্ষম হন । ইংরেজ বাহিনী পুনা অভিমুখে অগ্রসর হলে মহাদজী সিন্ধিয়া তেলিগাঁও নামক স্থানে তাদের বাধা দেন । তেলিগাঁও এর যুদ্ধে ( ১৭৭৯ খ্রিঃ ) পরাজিত হয়ে ইংরেজগণ ওয়াড়গাঁও এর সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয় । কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস এই অপমানজনক সন্ধি মানতে অস্বীকার করেন এবং বাংলা থেকে গােডার্ড এর নেতৃত্বে নতুন বাহিনী প্রেরণ করেন । প্রাথমিকভাবে সাফল্য লাভ করলেও শেষ পর্যন্ত গােডার্ড মারাঠাদের হাতে পরাজিত হন । অতঃপর ইংরেজ বাহিনী সিন্ধিয়ার রাজধানী গােয়ালিয়র দখল করতে সক্ষম হয় । শেষ পর্যন্ত এই দীর্ঘস্থায়ী ও ফলহীন যুদ্ধ শেষ করার জন্য উভয় পক্ষের আগ্রহ দেখা দেয় । মহাদজী সিন্ধিয়ার মধ্যস্থতায় সলবাই ( Salbai ) এর সন্ধি ( ১৭৮২ খ্রিঃ ) দ্বারা প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে । সলবাই এর সন্ধির শর্তানুযায়ী ―

( ১ ) ইংরেজগণ সমস্ত বিজিত অঞ্চল মারাঠাদের ফিরিয়ে দেয় ।

( ২ ) ইংরেজগণ সলসেট ও থানা অঞ্চল লাভ করে ।

( ৩ ) দ্বিতীয় মাধব রাও পেশােয়া রূপে স্বীকৃত হন ।

( ৪ ) রঘুনাথ রাওকে মাসিক ভাতাদানের ব্যবস্থা করা হয় ।

প্রথম ইঙ্গ মারাঠা যুদ্ধের গুরুত্ব

প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পীয়ার বলেছেন , “ প্রথম মারাঠা যুদ্ধের সূচনা ছিল অনাবশ্যক এবং পরিচালনা ছিল দুর্ভাগ্যজনক ” ( “ The First Maratha war must be regarded as unnecessary in its inception and unfortunate in its handling .) । বস্তুত এই যুদ্ধ কোনাে নির্দিষ্ট ফলদান করেনি । আর্থিক বিচারে এই যুদ্ধ ইংরেজদের পক্ষে ছিল ক্ষতিকারক । কারণ এই যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে হেস্টিংসকে নানা অবৈধ উপায় অবলম্বন করতে হয়েছিল । তবুও এই যুদ্ধ একেবারে গুরুত্বহীন ছিল — একথা বলা যায় না । ঐতিহাসিক লয়ার্ড ( Luard ) – এর মতে , “ এই যুদ্ধে ইংরেজের কূটনৈতিক জয় হয়েছিল । কারণ সলবাই এর সন্ধি দ্বারা তারা মারাঠা শক্তিকে শান্ত রেখে অন্যান্য ভারতীয় শক্তিগুলিকে দমন করেছিল । পরে সর্বশক্তি নিয়ে মারাঠাদের উপর আঘাত হেনেছিল । ঐতিহাসিক স্মিথও মনে করেন , সলবাই এর সন্ধি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পথ প্রশস্থ করে দিয়েছিল ।

Leave a reply