Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান ধারাগুলি চিহ্নিত করাে।

স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান ধারাগুলি চিহ্নিত করাে।

ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন ও শােষণের অবসানের জন্য ভারতবাসী যেসব সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তার প্রথম পর্ব হিসাবে ১৯০৫ খ্রীঃ বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনের নাম উল্লেখ করা যায়। আর এই বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাংলায় যে দুটি আন্দোলন উত্তাল হয়ে ওঠে, তা হলাে বয়কট ও স্বদেশী আন্দোলন।

বয়কট ও স্বদেশী

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের কার্যকরী অস্ত্র ছিল বয়কট ও স্বদেশী। এরা ছিল পরস্পরের পরিপূরক। বয়কট হল নেতিবাচক অস্ত্র- ব্রিটিশের সব কিছুকে বর্জন করার অঙ্গীকার। আর স্বদেশী হল ইতিবাচক অস্ত্র। স্বদেশের ভাবধারা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি গ্রহণ করে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার অঙ্গীকার। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে, ভারতের আন্দোলনে বয়কট এসছে প্রথম। পরে তার পরিপূরক হিসাবে স্বদেশী ভাবনা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রমে একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে।

বয়কট

বয়কট বলতে শুধুমাত্র বিদেশী দ্রব্য বর্জন নয়– বিদেশী আদর্শ, আদব কায়দা সব কিছুই বর্জন করার আদর্শ প্রচার করা হয়। কৃয়কুমার মিত্র সর্বপ্রথম সঞ্জীবনী পত্রিকার মাধ্যমে বয়কট আন্দোলনের সূচনা করেন। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, লালমােহন মিত্র ও অনেক চরমপন্থী নেতারা বয়কট আন্দোলনকে বিশেষভাবে সমর্থন জানান। সমস্তবিদেশী দ্রব্য যথা- চিনি, নুন, বস্ত্র, কাগজ, সিগারেট ইত্যাদি বর্জন করা হল।

স্বদেশী আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অবদান

কলকাতার ছাত্রসমাজ বয়কট আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে একে ল করার ব্রত গ্রহণ করেন। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার টাউন হলে যে জনসভা ডাকা হয়, তাতে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু প্রতিনিধি এসেছিলেন। কলকাতার ছাত্ররা বন্দেমাতরম মন্ত্র কণ্ঠে নিয়ে টাউন হলে উপস্থিত হয়। প্রস্তাব নেওয়া হয় যে, যতদিন সাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব রচনা না করবে, ততদিন বিদেশী দ্রব্য বয়কট করা হবে এবং স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণ করা হবে। ছাত্ররা স্কুল, কলেজ ত্যাগ করে বয়কট আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে বিলাতি দ্রব্যের দোকানের সামনে পিকেটিং শুরু করে।

স্বদেশী আন্দোলন

বয়কট আন্দোলন ক্রমে স্বদেশী আন্দোলনে পরিণত হয়। বলা বাহুল্য যে, বয়কট ও স্বদেশী আন্দোলন ছিল একটি অপরটির পরিপূরক। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলন নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলন দারুন আকার ধারণ করে। সুরেন্দ্রনাথ ছাড়া শিবনাথ শাস্ত্রী, সুবােধচন্দ্র মল্লিক, বিপিন পাল, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, অশ্বীনিকুমার দত্ত, আব্দুল রসুল প্রমুখ নেতাদের আহ্বান এবং তাদের বক্তৃতায় দেশের তরুণ চিত্তে এক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। অরবিন্দ ঘােষ বরােদাতে ইস্তাফা দিয়ে কলকাতায় আসেন। তিনি দৃঢ়কণ্ঠেবলেন “We want absolute autonmy free from British Contral.”

জাতীয় শিক্ষা

সরকার নানাপ্রকার দমনমূলক ব্যবস্থা দ্বারা এই আন্দোলনকে বন্ধ করতে অগ্রসর হয়। এই আন্দোলনে ছাত্র ও যুবকদের ব্যাপক যােগদানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের মুখ্যসচিব কার্লাইল কার্লাইল সার্কুলার জারি করেন। এই সার্কুলারে নির্দেশ দেওয়া হয় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের যাতে তাদের ছাত্রছাত্রীরা স্বদেশী আন্দোলনে যােগ না দেয়। অন্যথায় ঐসব স্কুলের অনুমােদন প্রত্যাহার করে নেবার হুমকি দেওয়া হয়। এই সার্কুলারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং অ্যান্টি সার্কুলার সােসাইটি স্থাপিত হয়। এই সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ। ক্রমে স্বদেশী আন্দোলন ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ে।

স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব

স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাবে দেশে শিল্প কারখানার প্রসার ঘটে। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বদেশী উদ্যোগে দেশলাই, সাবান, গেঞ্জী, ওষুধ, বস্ত্র বয়ন ও বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্যের কারখানা ইত্যাদি। এসময় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল কেমিক্যালস, জামসেদজি টাটা প্রতিষ্ঠা করেন TISCO। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও একনতুন উদ্দীপনা দেখা দেয়। সুমিত সরকারের ভাষায়-‘No other phase our National movement can bost of a cultural accompaniment as rich as Swadeshi” অসংখ্য গান কাব্য, নাটক, প্রবন্ধ এসময় রচিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘যদি তাের ডাক শুনে কেউ না আসে, রজনীকান্ত সেনের মায়ের দেওয়া মােটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই’ দেশবাসীকে স্বদেশী চেতনায় উদ্দীপ্ত করে। রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে বাইরে’ও ‘গােরা’ প্রভাতকুমার মুখােপাধ্যায়ের উকিলের বুদ্ধি’, ‘খালাস’ প্রভৃতি এযুগের পটভূমিতে রচিত হয়। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশ কিছু প্রবন্ধ এ সময় রচিত হয় যেমন আত্মশক্তি, ভারতবর্ষ, স্বদেশশিক্ষা প্রভৃতি।

পরিশেষে একথা বলা যায় যে, স্বদেশী আন্দোলন গ্রামে গঞ্জে প্রসারিত হলেও তার গভীরতা ছিল কম। ডঃ সুমিত সরকার তার সাম্প্রতিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, স্বদেশী আন্দোলনের কোন কৃষিভিত্তিক কর্মসূচী ছিল না। তাই এই আন্দোলন সাধারণ কৃষক সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। এই দুর্বলতার জন্য স্বদেশী আন্দোলন প্রকৃত গণ-আন্দোলনের চরিত্র পরিগ্রহ করেনি।

Download PDF

Please wait..
If the download didn’t start automatically, click here.

Leave a reply