Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

কোন পরিস্থিতে ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে?

কোন পরিস্থিতে ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইউরােপের অন্যান্য দেশের মতাে ইতালিতেও শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন শুরু হয়। ইতালির সর্বত্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট, বেকারত্ব, হতাশা ও অবসাদ নেমে আসে। ইতালিবাসীর জীবনে এই সংকটমােচনের জন্য হাল ধরেন বেনিতাে মুসােলিনি। তার নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এই ফ্যাসিস্ট দলের মতবাদই ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত। লাতিন শব্দ ফাসেস এবং ইতালীয় ফ্যাসিও শব্দ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে ফ্যাসিসমাে শব্দটি। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ফ্যাসিজম বাংলায় যা ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক বেনেদিত ক্রোচ-এর মতে—ফ্যাসিবাদ হল খণ্ড খণ্ড ভাবধারায় সমষ্টি ও একটি ভিত্তিহীন সংস্কৃতির দিকে পৌঁছানাের বন্ধ্যা মানসিক প্রয়াসমাত্র।

ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালি বিজয়ী পক্ষের সদস্য হলেও যুদ্ধে ইতালির প্রচুর জীবনহানি ও অর্থনাশ হয়েছিল। ইতালির প্রায় ৬ লক্ষ সেনা মারা গিয়েছিল, ২০ লক্ষ আহত হয়েছিল। যুদ্ধে ইতালির খরচ হয়েছিল ১২ হাজার কোটি ডলার। এ ছাড়াও মােট নষ্ট হওয়া সম্পত্তির আর্থিক মূল্য ছিল ৩০০ কোটি ডলার। তবুও ইতালিকে ভার্সাই সন্ধির দ্বারা তার প্রাপ্য পুরস্কার থেকে বৃণ্ডিত করা হয়েছিল। আফ্রিকায় অবস্থিত জার্মান উপনিবেশগুলি ইতালিকে দেওয়া হয়নি, উলটে ইতালিকে আলবেনিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়ে আলবেনিয়াকে স্বাধীনতা প্রদান করতেহয়। ফলে ইতালিবাসীর মনে চরম ক্ষোভ ও হতাশা জন্মায় এবং তারা শাসক-সরকারের প্রতি সন্দিহান হয়ে ওঠে।

শশাচনীয় আর্থিক অবস্থা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইতালি শশাচনীয় আর্থিক দুর্দশার মুখােমুখি হয়। মুদ্রাস্ফীতি ঘটে, নিত্যপ্রয়ােজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশ-ছোঁয়া হয়ে যায়, বেকার সমস্যা চরমে পৌছােয়। এর ওপর ইতালির শিল্প সমৃদ্ধ উত্তরাঞ্চলে শিল্প কারখানাগুলির ধর্মঘট শুরু হয়। শহরের শ্রমিক ধর্মঘট এবং গ্রামে কৃষকরা খাজনা দেওয়া বন্ধ করে জমির দখল নেওয়া শুরু করে। ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। শিল্পক্ষেত্রে, ডাক ব্যবস্থায়, রেলে, পরিবহনে ধর্মঘট ইতালির দৈনন্দিন ব্যাপার ছিল, যার ফলে দেশের ব্যাবসাবাণিজ্য প্রভূত পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

বিরােধী দলগুলির নেতিবাচক ভূমিকা

ইতালির প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যােগদানের সিদ্ধান্তে সেখানকার তিনটি প্রধান বিরােধী রাজনৈতিক দল—সমাজবাদী পার্টি, লিবারেল পার্টি, ক্যাথােলিক পপুলার পার্টি বিরােধিতা করেছিল। কিন্তু তাদের মতকে অগ্রাহ্য করে যুদ্ধে যােগদান করে ইতালির প্রচুর আর্থিক ও মানবিক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বিরােধী দলগুলি শাসক উদারতন্ত্রী দলকে ইতালিবাসীর সামনে দোষী সাব্যস্ত করে। তাদের এই ভূমিকায় নতুনভাবে ইতালিবাসী বাঁচার পথ অনুসন্ধান করে।

সরকারি অক্ষমতা

শাসক উদারতন্ত্রী দল ইতালিবাসীর কাছে অপরাধীরূপে চিহ্নিত হয়। বিভিন্ন দলগুলির মধ্যেকার সংঘাত, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রচলন ইত্যাদিতে ব্যর্থ হওয়ায় শাসকগােষ্ঠী জনমানসে দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে। ১৯১৯ থেকে ১৯২২ খ্রি. মধ্যে ছয়বার মন্ত্রীসভায় পরিবর্তন ঘটিয়েও শাসক দল ইতালিবাসীর মন জয় করতে ব্যর্থ হয়। ফলে ইতালিতে নতুন এক দলের উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়।

সাম্যবাদ নীতি

ইতালির অভ্যন্তরীণ সংকটকালে সমাজতন্ত্রী দল দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে এই সমাজতন্ত্রী দল পার্লামেন্টে ১৫৬টি আসন পায়। রাশিয়ায় রুশ বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত সাম্যবাদী সরকারকে অনুসরণ করে ইতালিতে সমাজতান্ত্রিক দল জনমানসে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল। এই দলের নেতৃত্বে কৃষকরা খাজনা দেওয়া বন্ধ করে এবং শ্রমিকরা কলকারখানায় জবর দখল নেয়। কিন্তু অনভিজ্ঞ ও আর্থিক সংগতিহীন শ্রমিক-কৃষকগণ কলকারখানা ও কৃষিক্ষেত্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়, ফলে সমাজতন্ত্রী দলের নেতৃত্বও মুখ থুবড়ে পড়ে, তারা ইতালিবাসীকে হতাশ করে। এই পরিস্থিতিতে প্রজাতান্ত্রিক সরকার সমাজতন্ত্রীদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় বেনেটো মুসােলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দলের উত্থান সহজতর হয়ে ওঠে।

ব্যর্থ বিদেশনীতি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ইতালি যােগ দিলেও ইতালিবাসীর মনে কোনাে আশার সঞ্চার হয়নি। প্যারিসের সম্মেলনের আগে মিত্রপক্ষ ইতালিকে টিয়েস্ট, ট্রেন্টিনাে, টাইরাল ও ডালমেশিয়া প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। কিন্তু প্যারিসের সম্মেলনে ইতালির আশা ব্যর্থ হওয়ায় ইতালি অচিরেই এক অতৃপ্ত জাতিতে পরিণত হয়। এদিকে আবার আড্রিয়াটিক উপকূলের ফিউম বন্দর ও আলবানিয়া দখলের ব্যাপারেও মিত্রপক্ষ ইতালিকে নিরাশ করে।

একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতা

সমাজতন্ত্রী দলের ব্যর্থতার ফলে সমাজতান্ত্রিক শিবিরে ভাঙন দেখা দেয়। হতাশ ইতালিবাসী স্থায়ী শাসনব্যবস্থা কামনা করলে একনায়কতান্ত্রিক ভাবধারায় উদ্ভব ঘটে। ইতালিবাসী বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, একমাত্র একনায়কতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে ইতালির যাবতীয় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ইতালিবাসীর এই মানসিক অবস্থার সদ্ব্যবহার করে মুসােলিনি ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটান।

মুসসালিনির প্রভাব

কর্মকারের পুত্র মুসােলিনি প্রথম জীবনে কখনও শিক্ষকতা, কখনও সৈনিক আবার কখনও সাংবাদিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন। ‘আভান্তি’ নামে মিলানের এক সমাজতন্ত্রী সংবাদপত্রের সম্পাদক হিসেবে মুসােলিনি তার উগ্র জাতীয়তাবাদী আদর্শ প্রচার করেন। মুসােলিনি ফ্যাসিস্ট আন্দোলনকে ইতালির জাতীয় আন্দোলনে রূপান্তরিত করেন। মুসােলিনির নেতৃত্বে ইতালির বিভিন্ন নগরগুলিতে ফ্যাসিস্ট দলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফ্যাসিস্ট দল গঠন

বেনিতাে মুসােলিনি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ, ১১৮ জন কর্মচ্যুত সৈনিক, দেশপ্রেমিকদের নিয়ে বিধানসভায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে ফ্যাসিস্ট দল গঠন করেন। মিলানের ফ্যাসিও নামক সংঘের অনুকরণে তিনি এই দল গঠন করেন। প্রাচীন রােমের রাজশক্তির প্রতীক ফ্যাসিস (দড়ি বাঁধা কাঠের দণ্ড)-এর অর্থ হল শক্তি।

ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র গঠন

মুসােলিনির আহ্বানে সাড়া দিয়ে কবি দ্য অ্যানানসিওর ‘কালাে কোর্তা বাহিনী ফ্যাসিস্ট দলে যােগ দিলে এই দল ইতালির সবচেয়ে শক্তিশালী দলে পরিণত হয়। মুসােলিনি তার কালাে কোর্তা বাহিনীকে রােমের অভিমুখে অভিযানের নির্দেশ দেন। ইতালির রাজা তৃতীয় ভিক্টর ইমান্যুয়েল বাধ্য হয়ে মুসােলিনিকে মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য ডাকেন ও মুসােলিনিকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়ােগ করেন। রােমের ফাকটা মন্ত্রীসভার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসােলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকার (১৯২২ খ্রি., ৩০ অক্টোবর)।

Leave a reply