Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

পশ্চিমবঙ্গের নদনদীর ভৌগোলিক বিবরণ দাও।

পশ্চিমবঙ্গের নদনদী

পশ্চিমবঙ্গ একটি নদীমাতৃক রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গের ভূ-প্রকৃতি অনুসারে এই রাজ্যের উত্তর ও পশ্চিম দিক উঁচু ও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক বঙ্গোপসাগরের দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের নদ-নদীগুলো উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

● উৎপত্তি ও গতিপ্রকৃতি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলিকে ৫টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথা :

■ [1] গঙ্গা

গঙ্গা ভারতের তথা পশ্চিমবঙ্গের সর্ব প্রধান নদী। গঙ্গা নদী হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখনামে তুষার গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে উত্তরপ্রদেশ এবং পরে বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মিঠিপুরের কাছে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। গঙ্গার একটি শাখা ভাগীরথী-হুগলি নামে দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে; আর প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে ভাগীরথী-হুগলি নদীই গঙ্গা নামে পরিচিত।

মুর্শিদাবাদ থেকে নবদ্বীপ শহর পর্যন্ত এই নদীর নাম ভাগীরথী এবং নবদ্বীপ থেকে মোহনা পর্যন্ত এই নদীর নাম হুগলি নদী। হুগলি নদীর দক্ষিণাংশে জোয়ার-ভাটার প্রভাব দেখা যায়। অতিরিক্ত জল এনে কলকাতা বন্দরকে বাঁচানোর জন্য গঙ্গা নদীর উপর ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে।

■ [২] ভাগীরথী-হুগলি নদীর পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত নদীসমূহ

ভাগীরথী-হুগলি নদীর পূর্বদিকের নদীগুলির মধ্যে জলঙ্গী, ভৈরব, মাথাভাঙা, চূর্ণী, ইছামতী, বিদ্যাধরী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এই নদীগুলোর বেশির ভাগই পদ্মার শাখানদী। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময়ে এই সব নদীতে জলপ্রবাহ থাকে না বললেই চলে এবং বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির ফলে প্রায়ই বন্যা দেখা দেয়।

[৩] ভাগীরথী-হুগলি নদীর পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত নদীসমূহ

ভাগীরথী-হুগলি নদীর পশ্চিমদিকের নদীগুলোর মধ্যে (১) ময়ূরাক্ষী, (২) অজয়, (৩) দামোদর, (৪) দ্বারকেশ্বর, (৫) শিলাবতী (শিলাই), (৬) কংসাবতী (কাঁসাই), (৭) রূপনারায়ণ, (৮) হলদি, (৯) কেলেঘাই, (১০) সুবর্ণরেখা প্রভৃতি নদী উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে অজয়, দামোদর ও ময়ূরাক্ষী নদী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে এবং অন্যান্য নদীগুলো পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিকের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়ে শিলাবতী ও দারকেশ্বর নদীদুটি মিলিত হয়ে রূপনারায়ণ নামে কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে অবশেষে গেঁওখালির কাছে হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। এছাড়া কেলেঘাই ও কংসবতী নদী যুক্ত হয়ে হলদী নদীর সৃষ্টি করেছে। এইসব নদীর মধ্যে কেবলমাত্র সুবর্ণরেখা নদীটি ওড়িশার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে, অন্য নদীগুলো ভাগীরথী-হুগলি নদীতে পতিত হয়েছে। এই সব নদী প্রধানত বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় এই সব নদীতে সারা বছর সমান জলপ্রবাহ থাকে না এবং অতিবৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হয়।

• দামোদর নদ

দামোদর পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী। দামোদর নদীটি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পালামৌ জেলার ছোটনাগপুর মালভূমির খামারপাত পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে উলবেড়িয়ার কাছে ভাগরথী-হুগলী নদীতে পতিত হয়েছে। বর্তমানে দামোদর নদের মূল প্রবাহ শীর্ণ হয়ে হুগলী নদীতে পড়েছে এবং এই নদীর বেশি ভাগ জল তার শাখা নদী মুণ্ডেশ্বরীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দামোদরের প্রধান শাখা মুণ্ডেশ্বরী রূপনারায়ণ নদীতে মিশেছে।

■ [৪] পূর্ব হিমালয় থেকে উৎপন্ন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদ-নদী

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিকের নদীগুলোর মধ্যে (১) মেচি, (২) বালাসন, (৩) মহানন্দা, (৪) তিস্তা, (৫) জলঢাকা, (৬) তোর্সা, (৭) রায়ডাক, (৮) সঙ্কোশ, (৯) কালজানি প্রভৃতি প্রধান। মহানন্দা ছাড়া এই সব নদী উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার উপর গুরুত্বপূর্ণ নদী।

দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তা উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হওয়ায় তিস্তা ও জলঢাকা নদী দুটি অত্যন্ত খরস্রোতা এবং এই সব নদীতে সারাবছরই জল থাকে। উত্তরবঙ্গের নদীখাতগুলি পলি, বালি, নুড়ি প্রভৃতি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষার সময় এই সব নদীতে কখনও কখনও বন্যা দেখা দেয়। এই নদীগুলির সমভূমি অংশে নৌকা চালানো যায়।

[৫] দক্ষিণবঙ্গ এবং সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য নদনদী

মাতলা, গোসাবা, বিদ্যাধরী, পিয়ালী, ইছামতী, কালিন্দী, রায়মঙ্গল, সপ্তমুখী, বড়তলা, জামিরা প্রভৃতি হল দক্ষিণবঙ্গ ও সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য নদ-নদী। প্রত্যেকটি নদীই দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ইছামতী, মাতলা, হাড়িয়াডাঙা, সপ্তমুখী, জামিরা প্রভৃতি নদীগুলো বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের জলে পুষ্ট, তাই এদের জল লবণাক্ত। জোয়ারের সময় এই নদীগুলিতে নৌকা চালানো যায়।

Leave a reply