Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট সম্পর্কে কী জান? এর গুরুত্ব কী ছিল?

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট সম্পর্কে কী জান? এর গুরুত্ব কী ছিল?

কিউবার ক্ষেপনাস্ত্র সংকট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ক্যারিবিয়ান সাগরের বুকে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে সােভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্বরাষ্ট্রের মধ্যে এক স্বল্পকালীন অথচ প্রবল দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যার ফলে বিশ্ব এক পারমাণবিক যুদ্ধের মুখােমুখি এসে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত উভয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ায় বিধ্বংসী যুদ্ধের হাত থেকে বিশ্ব রক্ষা পায়।

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পটভূমি

কিউবা স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর উন্নতির লক্ষ্যে মার্কিন মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। এই সুযােগ নিয়ে মার্কিন পুঁজিপতিরা কিউবার অর্থনীতির মূল ভিত্তি আখের খেতের ৪০ ভাগ দখল করে নেয়। কিউবার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকা তার অনুগামী ফ্যালজেনিকো বাতিস্তাকে রাষ্ট্রপতি পদে বসায়। কিন্তু মার্কিন পুঁজিবাদের তাবেদারে পরিণত হওয়ায় কিউবাসী বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। এ, বালে, অ্যাডলফ তার ‘The USA and Cuba’ গ্রন্থে লেখেন—কিউবাতে মূলত বহুদিন ধরেই সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনসহ সামগ্রিক পরবর্তনের প্রয়ােজন ছিল।

ফিদেল কাস্ত্রোর ভূমিকা

বাতিস্তা সরকারের জনবিরােধী কাজকর্মের প্রতিবাদে কিউবার তৎকালীন ছাত্রনেতা ফিদেল কাস্ত্রো তীব্র সরকার বিরােধী আন্দোলন গড়ে তােলেন। ক্রমশ জনসমর্থন আদায় করে এক বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের দ্বারা বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতা দখল করেন (১৯৫৯ খ্রি., ১ জানুয়ারি)। কিউবার রাষ্ট্রপতি কাস্ত্রো এরপর পুঁজিবাদী আমেরিকার দিক থেকে সরে এসে সাম্যবাদী সােভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তােলার উদ্যোগ নেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি কিউবায় মার্কিন পুঁজিপতিদের চিনি কলগুলি জাতীয়করণ করেন। এর পাশাপাশি মার্কিন পুঁজিপতি গােষ্ঠীর পরিচালনাধীন ব্যাংক ও অন্যান্য শিল্পকেন্দ্রগুলিও জাতীয়করণ করেন।

কাস্ত্রো অপসারণে আমেরিকার ভূমিকা

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কাস্ত্রোর এরকম কার্যকলাপে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে নানাভাবে কাস্ত্রো সরকারের পতনের পরিকল্পনা নেয়। মার্কিন গােয়েন্দা বিভাগের (C.I.A.) গােপন সহায়তায় ১,৫০০ ভাড়াটে সৈন্য মার্কিন
জাহাজে করে কিউবার ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে পিগ উপসাগরে পৌছােয়। কিন্তু কিউবার সেনাদল তাদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করলে মার্কিন চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।

কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি গঠন

কাস্ত্রো সরকার ৫০ লক্ষ কিউবাবাসীকে রক্ষার জন্য সােভিয়েত রাশিয়ার সাহায্যে কিউবাতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল কাস্ত্রো সােভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র গােপনে আমদানি করে কিউবাতে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। এর আগে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির সবই ছিল তার দেশের মধ্যেই। তা ছাড়া সেগুলি ছিল সীমিত শক্তির। কাজেই বিদেশের মাটিতে এটিই ছিল রাশিয়ার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি।

আমেরিকার প্রতিক্রিয়া

১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে আমেরিকা তার গুপ্তচর বিমানের তােলা ছবি থেকে জানতে পারে যে, কিউবায় সােভিয়েত ইউনিয়ন একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করেছে। কিউবা আমেরিকার দক্ষিণসীমা ফ্লোরিডা থেকে মাত্র ১৫০ কিলােমিটার দূরে অবস্থিত। কাজেই এখান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র তাে বটেই, সমগ্র পশ্চিম গােলার্ধের নিরাপত্তাই ব্যাহত করতে পারে। কিউবার বুকে সােভিয়েত রাশিয়ার এই প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিটি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে অস্থির করে তােলে।

কিউবা অবরােধ

কালবিলম্ব না করে বিচলিত কেনেডি কিউবায় আর কোনাে ক্ষেপণাস্ত্র যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তার চতুর্দিকে নৌ-অবরােধের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে ২২ অক্টোবর (১৯৬২ খ্রি.) এক বেতার তার মারফত বিশ্ববাসীকে এই ব্যবস্থার কথা জানিয়েও দেন। তিনি আরও ঘােষণা করেন যে, কিউবাগামী সমস্ত জাহাজ, এমনকি সােভিয়েত রাশিয়ার জাহাজও যথাযথ অনুসন্ধানের পরই কিউবায় ঢােকার অনুমতি পাবে। কেনেডি বলেন—সকল আক্রমণাত্মক সামরিক সরঞ্জামের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে বাধা দেওয়া হবে।

রাশিয়ার প্রত্যুত্তর

কিউবায় অনুপ্রবেশ বিরােধী মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডির ঘােষণায় সােভিয়েত রাশিয়ায় মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সােভিয়েত সরকার তার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়। নানাবিভাগের কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয় এবং সবাইকে কাজে যােগ দিতে বলা হয়। এমনকি আসন্ন বিদায়ী কর্মচারীদের অবসরগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থাপিত রাখা হয়। সেইসঙ্গে রাশিয়া দৃপ্তকণ্ঠে জানিয়ে দেয় যে, কিউবাগামী কোন সােভিয়েত জাহাজ পথিমধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালানাে হয়।

রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগ

কিউবা, যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত রাশিয়া তিনপক্ষই রাষ্ট্রসংঘে-বিষয়টি উত্থাপন করে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এবং বিশ্বের জোটনিরপেক্ষ বিভিন্ন রাষ্ট্র দুপক্ষের (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সসাভিয়েত রাশিয়া) কাছেই শান্তির জন্য অনুরােধ জানাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২৭ অক্টোবর (১৯৬২ খ্রি.) ক্রুশ্চেভ কেনেডিকে জানান যে- (১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কিউবা আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়; (২) কিউবা থেকে যদি নৌ-অবরােধ প্রত্যাহার ঠান্ডা যুদ্ধের উদ্ভবের জন্য দায়ী। অধ্যাপক এফ, এইচ. হার্টম্যান-এর মতে—দুই মহাশক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ও তত্ত্বগত পার্থক্য ঠান্ডা লড়াই-এর উদ্ভব ঘটায়।

Read More

Leave a reply