Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

কলকাতা বন্দরের সমস্যাগুলি আলোচনা করো।

কলকাতা বন্দরের সমস্যাগুলি আলোচনা করো।

কলকাতা বন্দরের সমস্যা

পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা বন্দরের অধিক গুরুত্ব থাকলেও বর্তমানে সেই গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি হল—

(১) ভাগরথী-হুগলি নদীর অকালবার্ধক্য ও পলি জমে হুগলি নদীর গভীরতা কমে যাওয়া

ঊনবিংশ শতক থেকে গঙ্গার মূল প্রবাহ পদ্মানদীতে সরে যাওয়ায় জলপ্রবাহ কম থাকার জন্য ভাগীরথী-হুগলি নদীতে পলি জমার ফলে কলকাতা বন্দর-অঞ্চলে হুগলি নদীর গভীরতা অনেক কমে গেছে। এর ফলে সমুদ্রগামী বড়ো জাহাজগুলোর পক্ষে অগভীর হুগলি নদীতে যাতায়াত করা খুবই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।

(২) হুগলি নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথ 

মোহনা থেকে কলকাতা বন্দর পর্যন্ত হুগলি নদীপথ সোজা নয়। এখানে গঙ্গার গতিপথে অসংখ্য বাঁক সৃষ্টি হয়েছে যা বড়ো বড়ো জাহাজের পক্ষে কলকাতা বন্দরে আসার সময় অসুবিধা সৃষ্টি করে।

(৩) গঙ্গার গতিপথে বালুচড়ার অস্তিত্ব

হুগলি নদীতে জলস্রোতের বেগ কম হওয়ায় এবং নিয়মিতভাবে পলি জমার ফলে, মোহনা থেকে কলকাতা বন্দর পর্যন্ত অন্তত ১৫টি বড়ো বড়ো বালুচড়ার সৃষ্টি হয়েছে, যারা জাহাজ চলাচলে প্রভূত অসুবিধার সৃষ্টি করে। এইজন্য পাইলট জাহাজের সাহায্য ছাড়া সমুদ্রগামী জাহাজগুলো কলকাতা বন্দরে আসতে পারে না।

(৪) পশ্চাদভূমির আয়তন কমে যাওয়া

এক সময় সমগ্র পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত এবং উত্তরভারতের বেশির ভাগ অংশ কলকাতা বন্দরের পশ্চাদভূমি ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশাখাপত্তনম, পারাদ্বীপ প্রভৃতি বন্দরের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাল আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এর ফলে কলকাতা বন্দরের পশ্চাদভূমির আয়তন অনেক ছোটো হয়ে এসেছে।

(৫) রপ্তানি হ্রাস ও পশ্চাৎভূমির নিস্তেজ অবস্থা

বিভিন্ন কারণের জন্য কলকাতা বন্দরের পশ্চাদভূমির অবস্থা ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে, যেমন: (ক) চা ও পাটজাত পণ্যের বিদেশি বাজারে চাহিদা আগের মতো নেই এবং (খ) এই অঞ্চলের উৎপাদিত লৌহ-ইস্পাত ও বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনও কমে এসেছে।

(৬) কলকাতা বন্দরের স্থানাভাব

কলকাতা বন্দরের আয়তন এবং জেটির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় একসঙ্গে জাহাজে বেশি মাল বোঝাই ও খালাস করা যায় না।

(৭) কলকাতা বন্দরের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বেশি

মাটি কাটার জাহাজ বা ড্রেজারের সাহায্যে হুগলি নদীকে ক্রমাগত পলিমুক্ত রাখতে হয় বলে কলকাতা বন্দরের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ও অন্যান্য বন্দরের তুলনায় বেশি।

(৮) জাহাজ মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থার অভাব

কলকাতা বন্দরে জাহাজ মেরামতি, রঙ করা প্রভৃতির আধুনিক ব্যবস্থা নেই।

(৯) হুগলি নদীতে বান আসা

জোয়ারের সময় হুগলি নদীপথ দিয়ে আসা প্রবল বানের জন্য বন্দরের আশ্রয় নেওয়া জাহাজগুলোর কমবেশি ক্ষতি হয়।

(১০) অত্যধিক শুল্ক

রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে কলকাতা বন্দরের শুল্ক ভারতের অন্যান্য বন্দরের চেয়ে বেশি ধার্য করতে হয়। এই কারণে অনেক জাহাজ কলকাতা বন্দরকে এড়িয়ে চলে।

(১১) শ্রমিক অসন্তোষ

কলকাতা বন্দরে মাঝে মাঝেই শ্রমিক অসন্তোষের ফলে বন্দরের কাজকর্ম অচল হয়ে পড়ে।

স্বাধীনতার আগে সারা ভারতের বন্দরসমূহের মধ্যে কলকাতা বন্দরের স্থান ছিল প্রথম।  এরপর ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কলকাতা বন্দর দ্বিতীয় স্থানে ছিল (মুম্বইয়ের ঠিক পরেই)। কিন্তু বিভিন্ন কারণের জন্য বর্তমানে মোট মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে ভারতের বন্দরগুলির মধ্যে কলকাতা বন্দরের স্থান পঞ্চমে নেমে এসেছে।

Leave a reply