Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি ও সফলতা আলােচনা করাে।

আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি ও সফলতা আলােচনা করাে।

আইন অমান্য আন্দোলন

১৯৩০ খ্রীঃ মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উল্লেখযােগ্য অধ্যায়। ১৯২২ খ্রীঃ অসহযােগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর সমগ্র ভারতব্যাপী আবার এক গণ-আন্দোলনের সূচনা করে তিনি ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিমূলে প্রবল আঘাত হানেন। এই আন্দোলনের পশ্চাতে বেশ কিছু কারণ ছিল।

অসহযােগ আন্দোলনের প্রভাব

অসহযােগ আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ভারতীয় জনজাগরণের ইতিহাসে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই আন্দোলন দেশের অভ্যন্তরে এক প্রবল রাজনৈতিক জাগরণের সূচনা করে এবং দেশবাসীর অন্তরে প্রবল আশার সঞ্চার হয়। জনগণ যে কোন মূল্যে তাদের আকাঙ্খা চরিতার্থ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। নেতৃমন্ডলীর পক্ষেও এই অপূর্ণ আকাঙ্খার প্রতি উদাসীন থাকা সম্ভব ছিল না। সুতরাং বলা চলে যে, অসহযােগ আন্দোলনের গর্ভেই নতুন আন্দোলনের বীজ নিহিত ছিল।

সাইমন কমিশন বয়কট

স্বরাজ্য দলের পতনের পর ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের গতি অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। কিন্তু ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে সাইমন কমিশনকে কেন্দ্র করে জাতীয় আন্দোলন আবার গতিশীল হয়ে ওঠে। এই কমিশন সম্পূর্ণভাবে শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে গঠিত হওয়ায় কংগ্রেস সাইমন কমিশন বয়কট করে। ভারত সচিব লর্ড বার্কেহেড তখন ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে বিরুপ করে বলেন “সংবিধান রচনা করা অত সহজ কাজ নয়। ভারতবাসীর যদি সর্বজন গ্রাহ্য সংবিধান রচনা করেন তাহলে তিনি তা গ্রহণ করবেন।”

বার্কেন হেডের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে নেহেরু রিপাের্ট তৈরি হয়। এই রিপাের্ট ভারতের জন্য ডােমিনিয়ন শাসন দাবি করে।

বামপন্থীদের দাবি

বামপন্থী নেতা সুভাষচন্দ্র বসু ও জহওরলাল নেহেরু পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি ঘােষণা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করলেন। গান্ধীজি তখন ঘােষণা করলেন যে ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিটিশ সরকার যদি নেহেরু রিপাের্ট গ্রহণ না করে তাহলে জাতীয় কংগ্রেস অহিংস আন্দোলন শুরু করবে।

ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ

ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের শ্রমিক দল ম্যাকডােনাল্ডের নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন করলে ভারতীয়গণ খুব আশান্বিত হলেন। কারণ তিনি ভারতীয়দের স্বায়ত্ব শাসনের দাবির প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন ছিলেন। বড়লাট আরউইন ম্যাকডােনাল্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতকে জানালেন যে শীঘ্রই ভারতকে ডােমিনিয়নের মর্যাদা দেবার জন্য ভারতীয় নেতাদের গােলটেবিলে আমন্ত্রণ জানান হবে। কিন্তু ইংল্যান্ডে রক্ষণশীল দলের বিরােধীতার জন্য ম্যাকডােনাল্ডের মতের পরিবর্তন ঘটল। গান্ধীজি ভাইসরয়ের সাথে দেখা করে শূন্য হাতে ফিরে এসে ক্ষোভের সাথে বললেন, “I have burn by boats” ফলে ১৯২৯ এর ডিসেম্বরে লাহাের কংগ্রেসে জহওরলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবীর ঘােষণার অনুকূলে প্রস্তাব গৃহীত হল।

অর্থনৈতিক কারণ

বিশ্ব ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ফলে ভারতীয় কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ দেখা দেয়। কাঁচা তুলাে, পাট, ধান ও অন্যান্য কাঁচাপণ্যের মূল্য হ্রাস পেলে বাংলা, বিহার ও উত্তর প্রদেশে কৃষকের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। এর ফলে কৃষকরা নানা স্থানে হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়। কলকারখানায় ছাঁটাই ও মজুরি হ্রাসের ফলে শ্রমিকরা ধর্মঘটের পথ গ্রহণে বাধ্য হয়। সরকার নিষ্ঠুর দমন নীতির পথ গ্রহণ করলে অবস্থা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।

গান্ধীজীর উপর অন্যান্য পরিস্থিতির চাপ

কংগ্রেসের ভেতরে যুবনেতারা ক্রমশ:অধৈর্য হয়ে উঠেছিলেন। জওহরলাল নেহেরু গােলটেবিল প্রস্তাব নাকচ করে দেন। সুভাষচন্দ্র ছিলেন আরাে উগ্র। গান্ধীজি বুঝতে পেরেছিলেন কংগ্রেস অবিলম্বে ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন শুরু না করলে তরুণ কৃষক শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করবে। উত্তর প্রদেশের সর্বত্র, বােম্বাই ও বাংলায় শ্রমিক বিক্ষোভ, ভগৎ সিং -এর বিরুদ্ধে মামলা ও তাঁর দ্বারা আইনসভায় বােমা নিক্ষেপ প্রভৃতি ঘটনাকে গান্ধীজি অবজ্ঞা করতে পারেন নি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই মুহূর্তে কোন আন্দোলনের নেতৃত্ব না দিলে শীঘ্রই আন্দোলন হিংসার পথে যাবে।

গান্ধীজীর শেষ প্রচেষ্টা

গান্ধীজি তখনও আশা করেছিলেন যে ব্রিটিশ সরকারের মনােভাবের পরিবর্তন ঘটবে। তাই তিনি ভাইসরয়ের কাছে ১১ দফা দাবি পেশ করেন। কিন্তু ভাইসরয় তা প্রত্যাখ্যান করলেন। এই অবস্থায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি গান্ধীজিকে আইন অমান্য আন্দোলন করার ক্ষমতা দিল। ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় গান্ধীজি লিখলেন, “পূর্ণ স্বরাজ লাভ এই আন্দোলনের লক্ষ্য।” তিনি ঘােষণা করেন লবণ আইন অমান্য করে তিনি আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করবেন। এই ঘােষণার উত্তরে বড়লাট ঠাট্টার সুরে বলেছিলেন, ‘লবণ আইন অমান্য নিয়ে আমার রাতের ঘুম ব্যাহত হচ্ছে না।” বড়লাটের অনুমান যে অত্যন্ত ভ্রান্ত ছিল তা শীঘ্রই প্রমাণ হলাে।

আন্দোলনের সূচনা

লবণ আইন ভঙ্গ করার জন্য ১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের ১২ই মার্চ ৭৯ জন অনুগামী নিয়ে গান্ধীজি সবরমতি আশ্রম থেকে গুজরাটের সমুদ্র উপকূলে ডান্ডি গ্রামের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেন। মাত্র ২৪ দিনে ২৪১ মাইল পথ অতিক্রম করে ৫ই এপ্রিল গন্তব্যস্থলে পৌছলেন। ৬ই এপ্রিল গান্ধীজি তাঁর সন্তসুলভ আচরণ দ্বারা সমুদ্রের জলে স্বহস্তে লবণ তৈরি করে লবণ আইন ভঙ্গ করে তিনি ভারতব্যাপী আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন।

আইন অমান্য আন্দোলনে ফলাফল

আইন অমান্য আন্দোলন সফল হয় নি। গান্ধীজির নির্দেশে ১৯৩৪ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসে এই আন্দোলন স্থগিত হয়। আন্দোলনের আগে তিনি বলেছিলেন “যতক্ষন পর্যন্ত একজন সত্যাগ্রহী জীবিত থাকবে ততক্ষণ আইন অমান্য চলবে।”অমলেশ ত্রিপাঠীর ভাষায়, “কিন্তু দেখা গেল সৈনিকরা সংগ্রাম চালাতে প্রস্তুত অথচ সেনানায়ক যুদ্ধ, বিরতির আদেশ দিলেন।” সুমিত সরকার লিখেছেন “গান্ধীজির মনােভাবের কেন যে পরিবর্তন হল এক ঐতিহাসিক প্রহেলিকা। “আপাত দৃষ্টিতে আইন অমান্য আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল কিন্তু এই আন্দোলনের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

প্রথমতঃ আইন অমান্য আন্দোলন ছিল একটি সর্বভারতীয় আন্দোলন জাতি-ধর্ম-বর্ণ, পেশা ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শ্রমিক কৃষক দোকানদার, মধ্যবিত্ত, সর্বস্তরের ও মতাদর্শের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে যােগদান করে। বাংলার পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল লােম্যান লিখেছিলেন—“কংগ্রেস সংগঠন। এ রকম অজ্ঞ ও অশিক্ষিত লােকদের কাছ থেকে এত সহানুভূতি ও সমর্থন কি করে পেল তা আমার মাথায় ঢুকছে না।

দ্বিতীয়তঃ এই আন্দোলন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ওপর প্রবল আঘাত হানে। ভারতে ব্রিটিশ পণ্যের আমদানি প্রায় এক – তৃতীয়াংশ হ্রাস পায়। বােম্বাইয়ে ইংরেজদের পরিচালিত ১৬টি বস্ত্র শিল্প বন্ধ হয়ে যায়।

তৃতীয়তঃ এই আন্দোলন স্বাধীনতা প্রতি ভারতীয়দের আকাঙ্খ এবং সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করে তাদের প্রস্তুতির কথা প্রমাণিত করে। এই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দের ভারত ছাড়াে আন্দোলনকে সফল করে।

চতুর্থতঃ এই আন্দোলনের ফলে জাতীয় কংগ্রেসের মর্যাদা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। সরকার উপলব্ধি করে যে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে ভারতীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

পঞ্চমতঃ এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে, কংগ্রেসই ভারতে সর্বশ্রেষ্ঠ দল –একে উপেক্ষা – করা সম্ভব নয়।

ষষ্ঠত ঃ এই আন্দোলনের মাধ্যমে গান্ধীজি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নৈতিক চরিত্রের উন্নতি ঘটান এবং তাদের নৈতিক বলে বলিয়ান করে তােলেন।

সপ্তমত : পরােক্ষভাবে এই আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত স্বরুপ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে সরকারের মর্যাদা খর্ব করে। রজনীপাম দত্ত লিখেছেন- “১৯৩০ থেকে ১৯৩৪ এর বিরাট আন্দোলনের এমন শােচনীয় পরিণতি ঘটা সত্বেও আমরা যেন এক মুহূর্তের জন্যও এর ঐতিহাসিক কীর্তি, গভীর শিক্ষা ও অপরিসীম স্থায়ী ফলাফলের কথা বিস্মৃত না হই।”

Download PDF

Please wait..
If the download didn’t start automatically, click here.

Leave a reply