Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

কোল বিদ্রোহ (১৮৩২ খ্রিঃ) এর ওপর সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।

কোল বিদ্রোহ

বুদ্ধ ভগত, জোয়া ভগত, ঝিন্দরাই মানকি ও সুই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে রাঁচি জেলায় কোম্পানির খাজনা বৃদ্ধি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোলরা যেবিদ্রোহ ঘােষণা করেছিল ইতিহাসে তা কোল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। চার্লস। মেটকাফের সেক্রেটারি মেজর সাদরল্যান্ডের মতে — এটি ছিল দাস বিদ্রোহের মতাে।

কোল বিদ্রোহের কারণ

কোল বিদ্রোহের উল্লেখযােগ্য কয়েকটি কারণ ছিল—

(১) রাজস্ব বৃদ্ধি :

১৮২০ খ্রিস্টাব্দে থেকে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ছােটোনাগপুর অঞলের শাসনভার গ্রহণ করে রাজস্ব আদায়ের জন্য এই অঞ্চলটিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেবাইরে থেকে আগত হিন্দু, মুসলিম, শিখ মহাজনদের ইজারা দেয়। কোম্পানির দেওয়ান মাধব সিং অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করলে হত দরিদ্র ও অসহায় কোলরা সর্বস্বান্ত হয়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

(২) ব্রিটিশের কালা আইন :

ব্রিটিশের বিচারব্যবস্থা ও রাজস্বব্যবস্থার কিছু কালা আইন’ কোলদের আর্থ-সামাজিক জীবনে ছন্দপতন ঘটায় কোলদের বাধ্য করা হয় ফসলের পরিবর্তে নগদ অর্থে খাজনা দিতে। কিন্তু ফসল বিক্রি করতে গিয়ে, কোলরা মহাজন ও ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতারিত হয়। ফলে তারা বিদ্রোহের রাস্তায় যায়।

(৩) ঐতিহ্যে আঘাত :

ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনার আগে থেকেই কোল উপজাতিভুক্ত লােকেরা বিহারের গভীর বনভূমি কেটে রাঁচি ও ছােটনাগপুর অঞ্চল জুড়ে বসত তৈরি করে শান্তিতে বসবাস করত। বনজ দ্রব্যের ওপর নির্ভরকরেই তাদের জীবন কাটত। পরবর্তী সময়ে তাদের অনেকেই কৃষিকাজে নিযুক্ত হয়েছিল। কিন্তু, কোম্পানির শাসনকালে কোল উপজাতি গােষ্ঠীর লােকেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে আফিম চাষে বাধ্য করানাে হয়। এই ঐতিহ্য বিরােধী কাজ তারা মেনে নিতে পারেনি।

কোল বিদ্রোহের প্রসার ও দম

ছােটোনাগপুরের রাঁচিতে কোল বিদ্রোহের সূচনা ঘটলেও ধীরে ধীরে তা সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ, পালামৌ প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। কোল বিদ্রোহে ওঁরাও, মুন্ডা , হাে উপজাতির মানুষওঁ শামিল হয়। কোল বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে ক্যাপ্টেন উইলকিত্সনের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী নিষ্ঠুরভাবে বহু কোল উপজাতীয় নারীকে হত্যা করে এই বিদ্রোহ দমন করে(১৮৩২ খ্রিঃ)।

কোল বিদ্রোহের ফলাফল

আঞ্জলিক সীমাবদ্ধতা, বিদ্রোহীদের মধ্যে যােগাযােগ ও ঐক্যের অভাবে কোল বিদ্রোহ শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হলেও এর ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী —

(১) আলাদা ভুখন্ড সংরক্ষণ : ব্রিটিশ কোলদের জন্য দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি
নামক এক আলাদা ভূখণ্ড সংরক্ষণ করে এবং ঘােষণা করে যে ওই স্থানে ব্রিটিশ আইন কার্যকরী হবে না।

(২) মহাজনদের বিতাড়ন : ব্রিটিশ সরকার অসৎ ব্যবসায়ী, সুদখাের মহাজনদের কোল-অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করে। তখনকার

(৩) জমির সংরক্ষণ : জমিদাররা যাতে ভবিষ্যতে আর কোনাে উপজাতিভুক্ত কৃষকদের
জমির দখল নিতে না পারে তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

(৪) প্রধানদের জমি ফেরত : উপজাতীয় গ্রাম প্রধানদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

কোল বিদ্রোহের পরিণতি

কোল বিদ্রোহের তীব্রতায় ব্রিটিশ কোলদের জন্য আলাদাভাবে কিছু নীতি গ্রহণ ও তা কার্যকর করলেও প্রকৃত অর্থে এই আদিবাসীদের কল্যাণের জন্য কোনাে চেষ্টা হয়নি। আধুনিক সভ্যসমাজের আলােয় তাদের নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয় ব্রিটিশ । সর্বোপরি যে জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে তাদের তীব্র জেহাদ ছিল তাদের কবল থেকেও কোলরা সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পায়নি।

Leave a reply