Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

রেচনের সংজ্ঞা এবং তার ব্যাখ্যা (Definition and Explanation)

রেচন [Excretion]

জীবদেহের প্রাণপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে প্রতিটি সজীব কোশে অবিরত নানান জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া অর্থাৎ বিপাক ক্রিয়া চলছে। অপচিতি বিপাকের ফলে দেহকোশে নানা রকম দূষিত পদার্থ (waste products) সৃষ্টি হয়, যেমন : কার্বোহাইড্রেট বিপাকের ফলে উৎপন্ন হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড, ফ্যাট বিপাকের ফলে উৎপন্ন হয় কিটোনবডি এবং প্রোটিন বিপাকের ফলে উৎপন্ন হয় অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি। এইসব দূষিত পদার্থ কোশে থাকলে কোশের বিপাক ক্রিয়ার হার কমে যায়, এমনকি কোশের ঘটতে পারে; তাই এইসব দূষিত পদার্থ প্রাকৃতিক নিয়মে অবিলম্বে দেহ থেকে অপসারিত হয়। জীবের দেহকোশে উৎপন্ন বিপাকজাত দূষিত পদার্থগুলিকে রেচন পদার্থ (excretory products) বলা হয় এবং (যে জৈবিক প্রক্রিয়ায় জীবদেহ থেকে বিপাকজাত দূষিত পদার্থগুলো অপসারিত হয়, তাকে রেচন (excretion) বলে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, বিপাকজনিত দূষিত পদার্থগুলোকে সাধারণভাবে রেচন পদার্থ বলা হলেও কেবলমাত্র নাইট্রোজেনঘটিত দূষিত পদার্থগুলোই প্রকৃতপক্ষে রেচন পদার্থ। উন্নত প্রাণীদেহে যে সমস্ত অঙ্গ ও তন্ত্র রেচনে অংশ নিয়ে থাকে যথাক্রমে তাদের রেচন অঙ্গ ও রেচন তন্ত্র বলা হয়। উদ্ভিদের রেচন পদার্থগুলিকে সাধারণভাবে বর্জ্য পদার্থ বলা হয়।

উদ্ভিদদেহে সুনির্দিষ্ট রেচন যন্ত্র বা তন্ত্র না থাকায়, উদ্ভিদেরা প্রাণীদের মতো রেচন পদার্থ ত্যাগ করতে পারে না। এরা পাতায়, ছালে বা বাকলে, ফলের ত্বকে বা দেহের অন্যান্য কোশে রেচন বস্তুগুলোকে অদ্রাব্য কেলাস বা কোলয়েড রূপে সাময়িকভাবে সঞ্চিত করে রাখে এবং পরে পত্রমোচন, ফল মোচন, বাকল মোচন, গঁদ-নিঃসরণ, তরুক্ষীর নিঃসরণ প্রভৃতির মাধ্যমে তাদের রেচন পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়।

● সংজ্ঞা (Definition)

জীবদেহে বিপাক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক উপজাত দ্রব্যসমূহ যে জৈবিক ক্রিয়ার মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারিত হয় অথবা অদ্রাব্য কোলয়েড কণা হিসেবে দেহের কোনও অংশে সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে, সেই জৈবনিক ক্রিয়াকে রেচন বলে।

রেচন অঙ্গ ও তন্ত্র (Excretory organs and system) :

● উদ্ভিদের কোনো নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ ও রেচন তন্ত্র থাকে না।

প্রাণীদেহে রেচনক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কতকগুলি নির্দিষ্ট যন্ত্র থাকে। রেচনে সাহায্যকারী এই যন্ত্রগুলোকে রেচন অঙ্গ (excretory organs) বলে। রেচনে সাহায্যকারী অঙ্গগুলো মিলিত হয়ে যে তন্ত্র গঠিত হয়, তাকে রেচন তন্ত্র (excretory system) বলে।

এককোশী প্রাণীদের নির্দিষ্ট কোনো রেচন অঙ্গ বা তন্ত্র থাকে না, এদের সংকোচি গহ্বর এবং কোশপর্দা রেচনে সহায়তা করে। স্পঞ্জ এবং হাইড্রার দেহেও কোনও নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ থাকে না। চ্যাপ্টা কৃমিদের (প্লানেরিয়া, ফিতাকৃমি ইত্যাদি) রেচন অঙ্গ হল ফ্লেমকোশ বা শিখাকোশ। কেঁচো, জোঁক, পেরিপেটাস এবং অ্যাম্ফিঅক্সাসের রেচন অঙ্গ হল নেফ্রিডিয়া। পতঙ্গদের (আরশোলা, ফড়িং, প্রজাপতি, মশা ইত্যাদি) রেচন অঙ্গ হল ম্যালপিজিয়ান নালিকা। চিংড়ির রেচন অঙ্গ হল সবুজ গ্রন্থি বা শুঙ্গ গ্রন্থি৷ মাকড়সা ও কাঁকড়া বিছের রেচন অঙ্গ হল কব্জাল গ্রন্থি। শামুক, ঝিনুক এবং মাছ থেকে স্তন্যপায়ী পর্যন্ত সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রেচন অঙ্গ হল বৃক্ক বা কিডনী।

রেচন পদার্থ (Excretory products) :

জীব দেহ-কোশে উৎপন্ন বিপাকজাত দূষিত পদার্থগুলোকে রেচন পদার্থ বলা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, মল বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় না বলে মলকে রেচন পদার্থ বলা হয় না। প্রাণীদেহে অপাচ্য খাদ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় মলে পরিণত হয় এবং প্রয়োজনকালে দেহ থেকে বর্জ্যপদার্থ হিসেবে নির্গত হয়।

• উদ্ভিদ ও প্রাণীর রেচন পদার্থগুলোকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যেতে পারে, যথা :

[1] নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ

উদ্ভিদের গঁদ, রজন, তরুক্ষীর, ধাতব কেলাস ইত্যাদি এবং প্রাণীদের কার্বন ডাই-অক্সাইড, কিটোনবডি হল নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ।

[2] নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ

উদ্ভিদের উপক্ষার (নিকোটিন, কুইনাইন, ডাটুরিন, রেসারপিন) এবং প্রাণীদের ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, বিলিরুবিন, বিলিভারডিন প্রভৃতি হল নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ।

[3] কার্বনযুক্ত রেচন পদার্থ

উদ্ভিদের ট্যানিন এবং প্রাণীদের CO21

রেচনের গুরুত্ব ( Importance of Excretion) :

জীবদেহে রেচনের নানারকমের গুরুত্ব রয়েছে, যেমন :

[1] জীবদেহের সুস্থতা রক্ষা

যেহেতু রেচন পদার্থ ক্ষতিকর তাই দেহ থেকে রেচন পদার্থ অপসারিত হয়ে দেহের স্বাভাবিক সুস্থতা বজায় রাখে।

[2] প্রোটোপ্লাজমীয় বস্তুর সমতা রক্ষা

প্রতিটি কোশের প্রোটোপ্লাজমে অবিরাম বিপাকীয় ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। অপচিতি বিপাকের ফলে যেসব দূষিত পদার্থের সৃষ্টি হয় সেগুলি কোশ থেকে দূরীভূত না হলে প্রোটোপ্লাজমের বিপাকীয় ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ক্লোশের মৃত্যু ঘটত, সুতরাং রেচনক্রিয়ার মাধ্যমে প্রোটোপ্লাজম থেকে দূষিত পদার্থের অপসারণ ঘটে, —এর ফলে প্রোটোপ্লাজমীয় বিভিন্ন বস্তুর পরিমাণের সমতা বজায় থাকে এবং বিপাকীয় ক্রিয়াগুলি স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হতে থাকে।

[3] প্রাকৃতিক সম্পদের আবর্তন

জীব পরিবেশ থেকে যেসব মৌলগুলি গ্রহণ করে রেচনের মাধ্যমে অধিকাংশ মৌল পরিবেশে ফিরিয়ে দিয়ে পরিবেশে মৌলগুলির স্বকীয়তা বজায় রাখে।

[4] অর্থনৈতিক গুরুত্ব

উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ মানুষের নানান কাজে লাগে। ভেষজ শিল্পে, চর্ম শিল্পে, আঠা প্রস্তুতিতে এবং কাষ্ঠশিল্প ইত্যাদিতে উদ্ভিদ রেচন পদার্থের অপরিসীম অর্থকরী গুরুত্ব রয়েছে।

কলা-কোশে উৎপন্ন বিপাকজাত দুষিত পদার্থগুলিকে কোশ থেকে অপসারণ করা এবং প্রোটোপ্লাজমের জীবজ ক্রিয়াগুলোকে স্বাভাবিক রাখাই হল রেচনের প্রধান উদ্দেশ্য।

Leave a reply